যদি প্রকাশ কারাট দক্ষিণে তাকান, আলিমুদ্দিনের দৃষ্টি থাকবে উত্তরে! কংগ্রেস আর বিজেপি-কে এক বন্ধনীতে রাখার পার্টি লাইনের সময়োপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফের দলের মধ্যে দুই শিবিরের মতের ফারাক বুঝিয়ে দিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র।
দলের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের মুখপত্রের ৪৯তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রবিবার ‘বর্তমান সময়ে দক্ষিণপন্থার বিপদ’ শীর্ষক আলোচনাসভায় বক্তা ছিলেন সূর্যবাবু। গোটা বিশ্ব জুড়ে দক্ষিণপন্থার প্রভাব কী ভাবে জাঁকিয়ে বসেছে, তার বিবরণ দিতে গিয়েই সুকৌশলে দলের মধ্যে চলতি বিতর্কের প্রসঙ্গে ঢুকে পড়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে এ দিনের আলোচনায় তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, এ দেশে দক্ষিণপন্থী নীতির দাপট বহু বার বহু ভাবে দেখা গিয়েছে। কিন্তু সঙ্ঘ পরিবারের হাতে চালিকা শক্তি থাকা বিজেপি-র সরকার এই বিপদকে অন্য মাত্রায় তুলে নিয়ে গিয়েছে। অটলবিহারী বাজপেয়ীর এনডিএ-১’র চেয়ে নরেন্দ্র মোদীর একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার সরকার অনেক বেশি বিপজ্জনক। সূর্যবাবু বলেছেন, ‘‘আরএসএসের সঙ্গে কারও তুলনা হয় না। তারা অনেক বেশি ক্রিয়াশীল, অনেক বেশি প্রতিক্রিয়াশীলও। তাদের সঙ্গে কংগ্রেস বা অন্যদের তুলনা হয় না। সমদূরত্বও হয় না।’’
বিশাখাপত্তনমে গত বছর পার্টি কংগ্রেসে বিজেপি এবং কংগ্রেসের থেকে সমদূরত্ব রাখার রাজনৈতিক লাইনই ফের নিয়েছিল সিপিএম। যে লাইন নিয়ে সম্প্রতি প্রশ্ন তুলে পলিটব্যুরোকে কড়া নোট পাঠিয়েছিলেন ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব। তাঁর যুক্তি ছিল, পার্টি কংগ্রেসে কী লাইন নেওয়া হয়েছে, শুধু তা-ই দিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে বিচার করতে গেলে ভুল হবে। সঙ্ঘ পরিবার তথা বিজেপি-ই এখন সব চেয়ে বড় বিপদ এবং কংগ্রেস-প্রশ্নে বিতর্ক বন্ধ করে সিপিএমের এখন বিজেপি-মোকাবিলাতেই জোর দেওয়া উচিত। নিজস্ব কৌশলে সূর্যবাবু এ বার হাবিবের কথারই প্রতিধ্বনি করেছেন।
সূর্যবাবু এ দিন ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘‘এক বছর আগে আমরা রাজনৈতিক প্রস্তাব নিয়েছিলাম পার্টি কংগ্রেসে। কিন্তু এই দেশ বা রাজ্যে এক বছর আগের পরিস্থিতি আর এখনকার পরিস্থিতি এক নয়। গোটা বিশ্ব জুড়েই অন্য রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। উগ্র জাতীয়তাবাদ, সঙ্কীর্ণ স্বার্থ সর্বত্র মাথা তুলেছে।’’ এই সূত্রেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের অভিযোগ, ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই মোদীর দলকে আক্রমণ করুন, আসলে বিজেপি আর তৃণমূল পরস্পর বোঝাপড়া করেই চলছে। বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যক্তিগত স্তরে ফায়দা পাইয়ে দিয়ে সুবিধাবাদী শ্রেণিও তৈরি করেছে তৃণমূল। যার সুফল তারা ভোটে পাচ্ছে।
হাবিবের যুক্তি খণ্ডন করে কারাট অবশ্য নিজের লাইনের পক্ষেই সওয়াল অব্যাহত রেখেছেন। দলীয় মুখপত্রে সিপিএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক ফের লিখেছেন, ‘বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে একটা রাজনৈতিক ফারাক সিপিএম করে। বিজেপি সঙ্ঘের হিন্দুত্ববাদী নীতির দ্বারা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত। কংগ্রেস ধর্মনিরপেক্ষ। কিন্তু বুর্জোয়া চরিত্রের জন্য সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তাদের অবস্থানে অনেক সময় দ্বিধা থাকে’।
কারাটদের এই যুক্তিকেই আবার পাল্টা সওয়ালে বিঁধলেন সূর্যবাবু!