বাইরে থেকে সমর্থন নয়, এ বার সরাসরি অরুণাচলপ্রদেশ সরকারের অংশ হল বিজেপি।
মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন বিজেপি বিধায়ক টামিও টাগা। তাঁকে জায়গা করে দিতে কোপ পড়ল শিল্পমন্ত্রী তথা পিপিএ বিধায়ক টাপাং টালোর উপরে। পিপিএ সূত্রে খবর, দলের আরও অন্তত তিন বিধায়ককে মন্ত্রী করতে চান বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। তাই পিপিএ-র কয়েক জন মন্ত্রীর কুর্সি যেতে পারে।
রাষ্ট্রপতি শাসনের পর প্রয়াত প্রাক্তন মু্খ্যমন্ত্রী কালিখো পুল ফেব্রুয়ারি মাসে পিপিএ সরকার গঠনের পর থেকেই তাঁর উপরে সদলবলে বিজেপিতে সামিল হওয়ার চাপ বাড়ছিল। কিন্তু তা মানেননি পুল। পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কংগ্রেস সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। মুখ্যমন্ত্রী হন প্রয়াত কংগ্রেসী মুখ্যমন্ত্রী দোর্জি খান্ডুর ছেলে পেমা খান্ডু।
অভিযোগ, এর পরেই কেন্দ্র রাজ্যের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেয়। ১৬ সেপ্টেম্বর পেমা খাণ্ডু-সহ ৪৩ জন কংগ্রেস বিধায়ক পিপিএতে যোগ দিয়ে ফের পিপিএ সরকার গঠন করে। পেমার বিবৃতিতেও চাপের মুখে আপোষের ইঙ্গিত স্পষ্ট ছিল।
সম্প্রতি দিল্লিতে পেমা, উপমুখ্যমন্ত্রী চাওনা মেইন, উপদেষ্টা পি ডি সোনার সঙ্গে বৈঠক করেন অমিত শাহ। সেখানে ঠিক হয়, বিজেপি অরুণাচল সরকারের শরিক হবে। ১১ জন বিজেপি বিধায়কের মধ্যে অন্তত চার থেকে পাঁচ জনকে ২০ নভেম্বরের মধ্যে মন্ত্রিসভায় জায়গা দিতে হবে।
সেই সূত্র মেনেই আজ রাজভবনে সকাল সাড়ে ১১টায় মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন টামিও টাগা। ভারপ্রাপ্ত রাজ্যপাল ভি সম্মুগনাথন তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান। বিজেপি সূত্রে খবর, মন্ত্রী হতে পারেন জাপু দেরু, টাগে টাকি, গজেন গাদি ও জারকার গামলিন। পিপিএ শিবিরের খবর, বিজেপির আরও চার জনকে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দিতে হলে কোপ পড়তে পারে টাঙ্গা বায়ালিং, রাজেশ টাচো, টাপাং টালো, জুমডে কেনা ও নাবাম রিবিয়ার উপরে। সে ক্ষেত্রে রাজ্য-রাজনীতির ধারা মেনে দলে ফের বিদ্রোহের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
কংগ্রেসমুক্ত উত্তর-পূর্ব গড়ার লক্ষ্যে ‘নর্থ ইস্ট ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স’ বা নেডা গড়েছেন বিজেপির রাষ্ট্রীয় সভাপতি অমিত শাহ। যার আহ্বায়ক অসমের অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। অসম দখল, নাগাল্যান্ডে বিরোধীহীন মিত্রজোটের সরকার, অরুণাচলে মিত্রপক্ষের সরকার গঠনের পর আপাতত নেডার লক্ষ্য মণিপুরে কংগ্রেসকে সরিয়ে সরকার দখল। অরুণাচলে পুরোপুরি বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠা করা।
রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, প্রথম লক্ষ্যের জন্য মণিপুর কংগ্রেসের ঘর ভাঙানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। দল ছেড়েছেন তিন প্রবীণ নেতা, বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য পূরণে চাপ দেওয়া হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী পেমার উপরে। পিপিএ অন্দরমহলের খবর, রাজ্যের জন্য দরবার করতে দিল্লি গেলেই মুখ্যমন্ত্রীকে বৈঠকে বসিয়ে চাপ দিচ্ছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
বিরোধী শিবিরের অভিযোগ— সড়ক, বিদ্যুৎ ও অন্য প্রকল্পের ঠিকা নামে-বেনামে নিয়ে রেখেছেন খান্ডু পরিবারের বিভিন্ন সদস্য। পেমা ও তাঁর ভাইরা সেই সব প্রকল্পের স্বার্থে কেন্দ্রের সঙ্গে সঙ্ঘাতে যেতে পারছেন না। বার বার দলবদল করে হাসির পাত্র হওয়ার পরে বর্তমানে ক্ষমতা ধরে রাখতে বিজেপির কথা না মেনে আপাতত তাঁদের উপায় নেই।
তবে পেমা এ দিন বলেন, “এ সবই রাজনীতির অঙ্গ। এক জনকে জায়গা দিতে অন্য জনকে সরাতেই হয়।” এ দিন অরুণাচলের শাসক জোটে যোগ দেওয়ার পরে দেশে বিজেপি ক্ষমতায় থাকা রাজ্যের সংখ্যা দাঁড়াল ১৪। এর মধ্যে অরুণাচল ষষ্ঠ রাজ্যে যেখানে আঞ্চলিক দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। ৬০ সদস্যের অরুণাচল বিধানসভায় পিপিএর ৪৩ জন, বিজেপির ১১ জন ও দু’জন নির্দল বিধায়ক শাসক জোটের শরিক। কংগ্রেসের বিধায়ক তিন জন। প্রাক্তন কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী নাবাম টুকি ছাড়াও আগের স্পিকারের বহিষ্কারের নির্দেশ বর্তমান স্পিকার বাতিল করে দেওয়ায় গ্যাব্রিয়েল ওয়াংসু ও ওয়াংলাম সাওইনও কংগ্রেসের বিধায়ক হিসেবেই গণ্য হচ্ছেন। টুকি বিরোধী ওই দুই বিধায়ক শীঘ্রই পিপিএতে যোগ দেবেন বলে দলের দাবি। অগস্টে আত্মহত্যা করা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পুলের আসন খালি রয়েছে।