সেতু ভাঙার গুজবে পদপিষ্ট হয়ে মৃত ২৪

অনুমতি মিলেছিল পাঁচ হাজার জনকে নিয়ে জমায়েত করার। কিন্তু ভক্তের সংখ্যা প্রায় এক লক্ষ ছুঁয়েছিল। পুলিশ-প্রশাসনকে তুড়ি মেরে করা এই ধরনের ভক্ত সমাবেশে তাই দুর্ঘটনা এড়ানো গেল না। বারাণসী আর চান্দৌলি সংযোগকারী রাজঘাট সেতু পার হতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে আজ মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২৪ জনের। পুলিশ সূত্রে খবর, আহত ৫০। মৃতদের মধ্যে অনেক মহিলাও রয়েছেন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

চান্দৌলি (উত্তরপ্রদেশ) শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:২৬
Share:

ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে দুর্ঘটনাগ্রস্তদের জিনিসপত্র। বারাণসীর কাছে চান্দৌলিতে। ছবি: পিটিআই।

অনুমতি মিলেছিল পাঁচ হাজার জনকে নিয়ে জমায়েত করার। কিন্তু ভক্তের সংখ্যা প্রায় এক লক্ষ ছুঁয়েছিল। পুলিশ-প্রশাসনকে তুড়ি মেরে করা এই ধরনের ভক্ত সমাবেশে তাই দুর্ঘটনা এড়ানো গেল না। বারাণসী আর চান্দৌলি সংযোগকারী রাজঘাট সেতু পার হতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে আজ মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২৪ জনের। পুলিশ সূত্রে খবর, আহত ৫০। মৃতদের মধ্যে অনেক মহিলাও রয়েছেন।

Advertisement

চান্দৌলির কাছেই গঙ্গার তীরে ডোমরি গ্রাম। সেখানেই স্থানীয় ধর্মীয় নেতা জয় গুরুদেবের নামে দু’দিনের এক শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। স্বঘোষিত ধর্মগুরু জয় গুরুদেব মারা গিয়েছেন ২০১২ সালে। তবে ভক্তদের মধ্যে তাঁর প্রভাব কমেনি। এ দিনও শিবিরে যোগ দিতে প্রায় এক লক্ষ ভক্তের সমাগম হয়েছিল।

কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল?

Advertisement

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, ভক্তরা একটা সেতু দিয়ে আস্তে আস্তে ডোমরি গ্রামের দিকে এগোচ্ছিলেন। হঠাৎ গুজব ছড়ায়, সামনে সেতু ভেঙে পড়েছে। মুহূর্তে আতঙ্ক ছড়ায়, হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। এক ভক্তের কথায়, ‘‘চার দিকে ঠেলাঠেলি, হুড়োহুড়ি। কী হচ্ছিল কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। আমার মা-ও এই ঠেলাঠেলিতেই পড়ে যায়।’’

পুলিশের অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল দলজিত চৌধুরির কথায়, ‘‘দুর্ঘটনাস্থল থেকে শিবির দু’কিলোমিটার দূরে। ভক্তরা যে সেতুটি ব্যবহার করছিলেন, সেটা খুবই সরু। তারমধ্যে ব্রিজ ভেঙে পড়ার গুজব ছড়াতেই ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যায়।’’ জয় গুরুদেব সংস্থানের মুখপাত্র রাজ বাহাদুরের অবশ্য দাবি, পুলিশ-প্রশাসনের দায়িত্বজ্ঞানহীনতাতেই এই বিপর্যয়। তিনি বলেন, ‘‘ভক্তরা শিবিরের দিকে এগোচ্ছিলেন। হঠাৎ পুলিশ এসে তাদের ফেরত পাঠাতে শুরু করে দেয়। এর পরেই গুজব ছড়ায়, সামনে সেতু ভেঙে পড়েছে। আর ভক্তদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়।’’

তবে প্রশাসনের তরফে দাবি, আয়োজক স‌ংস্থা মাত্র পাঁচ হাজার ভক্তের জন্য অনুমতি নিয়েছিল।
কিন্তু তার থেকে অনেক বেশি সংখ্যায় লোক জড়ো হয়েছিলেন। একটি সূত্রের দাবি, প্রায় এক লক্ষ লোক এসেছিলেন এ দিন।

দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ইতিউতি ছড়িয়ে চটি, জুতো। কাঁধের ব্যাগ। গোটা পরিবেশ থমথমে। তত ক্ষণে মৃতদেহগুলোকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, জখমদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে হাসপাতালে। স্বজন-হারানোর ছায়া গঙ্গার ঘাটে। উদ্ধারকাজ চালাতে বারাণসী ও চান্দৌলির শীর্ষ পুলিশ আধিকারিক ও প্রশাসনের কর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। আইজি হরিওম শর্মা বলেন, কোথাও কোনও গাফিলতির কারণে এই দুর্ঘটনা কি না, তদন্ত করে দেখা হবে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী কেন্দ্র বারাণসী। টুইটে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট সব আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলেছি। দুর্গতদের সব রকম সাহায্যের কথা বলা হয়েছে।’’ মৃতদের পরিবারের জন্য দু’লক্ষ আর গুরুতর আহতদের জন্য ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নড্ডাও সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশ সরকারকে।

উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের আগে এই দুর্ঘটনাকে কাজে লাগাতে চাইছে বিরোধী শিবিরও। রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের নিন্দায় সরব হয়েছে সব দল। পরিস্থিতি সামাল দিতে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব মৃতদের পরিবারের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের জন্য বিনামূল্যে পরিষেবা দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। বারাণসীর পুলিশ কমিশনারকে এই ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ২০১৩-র অক্টোবরে মধ্যপ্রদেশে পদপিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছিলেন ১১০ জনেরও বেশি। তার মধ্যে বেশির ভাগই মহিলা ও শিশু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন