বন্ধ নয়, রেল চালানোই চ্যালেঞ্জ বললেন জিএম

ব্রডগেজ হয়েও সমস্যা মিটছে না দক্ষিণ অসমের! বৃষ্টি হলেই পাহাড় লাইনের উপর দিয়ে বইছে মাটি, পাথর আর জলস্রোত। এই অবস্থার পরিবর্তনের বিশেষ আশা দেখছেন না উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের জেনারেল ম্যানেজার এইচ কে জাগ্গি।

Advertisement

উত্তম সাহা

শিলচর শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:১৫
Share:

রেল লাইন থেকে ধস সরাতে ভিড় করেছেন রেলকর্মীরা। সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেসের যাত্রী দীপমালা দেবের তোলা ছবি।

ব্রডগেজ হয়েও সমস্যা মিটছে না দক্ষিণ অসমের! বৃষ্টি হলেই পাহাড় লাইনের উপর দিয়ে বইছে মাটি, পাথর আর জলস্রোত। এই অবস্থার পরিবর্তনের বিশেষ আশা দেখছেন না উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের জেনারেল ম্যানেজার এইচ কে জাগ্গি। তাঁর নিদান, ‘‘বড়াইল পাহাড়ে বৃষ্টি হলে নির্বিঘ্নে ট্রেন চলাচলের গ্যারান্টি দেওয়া সম্ভব নয়। প্রকৃতির সঙ্গে আপস করেই চলতে হবে। যতক্ষণ সমস্যা না হবে, লাইন খোলা থাকবে। সমস্যা হলে ট্রেন বন্ধ রাখতেই হবে।’’

Advertisement

শনিবারের পর সোমবার লামডিং-শিলচর রুটে দুর্ঘটনায় পড়ে যাত্রীবাহী ট্রেন। বরাতজোরে কারও চোট লাগেনি। দু’দিনই মালিগাঁও থেকে ঘটনাস্থলে ছুটে এসেছেন জাগ্গি। সঙ্গে ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার নীরজ কুমার, চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এ কে তিওয়ারি। পুরো টিম নিয়ে মাঠে নামেন প্রিন্সিপাল চিফ ইঞ্জিনিয়ার ললিত কপূরও। গত কাল ১১ ঘণ্টা যাত্রীদের হাফলঙে বসিয়ে কোনও ক্রমে সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেসকে ফাইডিংয়ের দুর্ঘটনাস্থল অতিক্রম করানো হয়। তারপর আর কোনও গাড়ি চালানো যায়নি। জেনারেল ম্যানেজার নিজেও ওই রুটে এগোনর ঝুঁকি নেননি। চলে এসেছেন শিলচরে।

আজ শিলচরে বসে জাগ্গি স্পষ্ট করেই বলেন, ‘‘কিচ্ছু করার নেই। আসলে ভৌগোলিক অবস্থান, প্রকৃতির খেয়ালকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। একে মেনে নিয়েই আমাদের ট্রেন চালাতে হবে।’’ তাঁরা যে এ ব্যাপারে আন্তরিক তা বোঝাতেই বলেন, ‘‘শনিবার দুর্ঘটনার খবর পেয়েই রওয়ানা হই। ঘটনাস্থলে পৌঁছই। মালিগাঁও ফিরতে না ফিরতে সোমবারের ঘটনা। ফের ছুটে এসেছি।’’ কিন্তু এ-ভাবে ক-দিন চলবে? জাগ্গির পরিষ্কার কথা, ‘‘আবার সমস্যা হবে, আবার কাজ হবে। এই করেই চলতে হবে।’’

Advertisement

যাত্রী-সুরক্ষার ‘সহজ সমাধান’ দিয়েছিলেন চিফ ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ার অলক কুমার বর্মা। পুরো বর্ষার মরশুমে রেললাইন বন্ধ রাখার সুপারিশ করেছিলেন তিনি। জিএম সেই সুপারিশকে কোনও সমাধান নয় বলেই মনে করেন। জাগ্গির বক্তব্য, ‘‘বন্ধ করে দেওয়া তো অতি সহজ। কিন্তু চ্যালেঞ্জ নিয়ে কী করে এই লাইন খোলা রাখা যায়, তার উপায় বের করাই বিশেষজ্ঞদের কাজ। বন্ধ নয়, চালু রাখার জন্যই সরকার রেল অফিসারদের বেতন দেয়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘একে তো এই অঞ্চলে বৃষ্টি হলেই ধস নেমে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যায়। নৈশ অবতরণের সুযোগ না থাকায় বিমান চলাচলেও সমস্যা কম নয়। এই অবস্থায় রেলই এখানকার প্রধান ভরসা। তাই জনসাধারণের কথা ভেবেই এই রেল লাইনকে চালু রাখতেই হবে।’’

কাজের গুণমান, সতর্কতা ইত্যাদি সম্পর্কে ওঠা নানা কথা উড়িয়ে দিয়ে তাঁর বক্তব্য: এই লাইনে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল ডাইভারশনের ৩০-৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ অংশটি নিয়ে। কিন্তু দু’টি দুর্ঘটনাই ঘটেছে অন্য অংশে। ফলে লামডিং-শিলচর, গোটা লাইনই সমান স্পর্শকাতর। ভাল বললে সবটা ভাল, খারাপ বললে সবটা খারাপ।

সতর্কতা হিসেবে প্রতিটি যাত্রী-ট্রেন চালানোর আগে পাইলট ট্রেন চালানো হচ্ছে। যাচ্ছে মালগাড়ি। এত সতর্কতার পরেও যে রেহাই মিলছে না তার উদাহরণ হিসেবে সোমবারের ঘটনাকে তিনি টেনে আনেন। বলেন, ‘‘৪৫ মিনিট আগে ওই অংশ নিরাপদে পেরিয়েছিল পাইলট ট্রেন। তার পরেও সমস্যা হল।’’

সারা বছর বড়াইলে যত বৃষ্টি হয়, তার এক-তৃতীয়াংশ এই ক’দিনে হয়ে গিয়েছে। ফলে পাহাড়ের মাটি আটকানো, জলস্রোত থেকে লাইনকে রক্ষা করার কোনও কৌশলই কাজে আসেনি। ১০-১২টি জায়গায় লাইনের ক্ষতি হয়েছে। ফাটল দেখা দিয়েছে সুড়ঙ্গে। ক্ষতি হয়েছে একটি সেতুরও। জেনারেল ম্যানেজারের বক্তব্য, ‘‘তাই বলে আতঙ্কের কিছু নেই। কাজ চলবে, রেলও চলবে।’’ তিনি অভয় দেন, ‘‘রেলের কাছে সমস্ত ধরনের উন্নত প্রযুক্তি রয়েছে। ফলে যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কার তেমন কিছু নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন