মনদীপ সিংহ। ফাইল চিত্র।
জঙ্গিরা তাঁকে শুধু হত্যাই করেনি, মুণ্ডচ্ছেদও করে। তিনি ১৭ শিখ লাইট ইনফ্যান্ট্রির বিএসএফ জওয়ান মনদীপ সিংহ। শুক্রবার সন্ধ্যায় কুপওয়ারার মাচিল সেক্টরে জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে নিহত হন এই ২৭ বছরের জওয়ান। পালানোর সময় জঙ্গিরা তাঁর মাথা কেটে দেয়। এক জন জওয়ানের দেহ নিয়ে এ ভাবে নৃশংস কাণ্ড ঘটানোর প্রতিশোধ নিতে মরিয়া ভারতীয় সেনা। ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চারটি পাক সেনাচৌকি ধ্বংস করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
এ বছর দীপাবলিতে বাড়ি ফেরার কথা ছিল মনদীপের। কিন্তু তার আগেই সব শেষ। হরিয়ানার কুরুক্ষেত্রের অন্তহেড়ি গ্রামে এখন শোকের ছায়া। দিওয়ালির আলোর রোশনাই যেন এক লহমায় নিভিয়ে দিয়েছে মনদীপের মৃত্যু। রবিবার সকালে এই বীর জওয়ানের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। পঞ্চায়েত প্রধান সুভাষ চন্দ্র জানান, মনদীপের আত্মার শান্তিতে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে একটি করেই মোমবাতি জ্বালানো হবে। তিনি আরও বলেন, “গ্রামে দিওয়ালি উত্সব পালন করা হবে না। গোটা গ্রামে এখন শোকের আবহ।”
২০০৮-এ সেনার শিখ রেজিমেন্টে যোগ দেন মনদীপ। ১৭ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসে পোস্টিং হয়েছিলেন খুব বেশি দিন হয়নি। মনদীপের আর এক দাদাও সেনাবাহিনীতে ছিলেন। তাঁকে দেখেই দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োগ করার স্বপ্ন নিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন মনদীপ। মাত্র দু’বছর আগেই বিয়ে হয় মনদীপের। তাঁর স্ত্রী প্রেরণাও রাজ্য পুলিশের এক জন কর্মী।
কাঁদতে কাঁদতে মনদীপের স্ত্রী প্রেরণা বলেন, “মনদীপ বাড়ির কাউকেই জানায়নি নিয়ন্ত্রণরেখায় তাঁর নতুন পোস্টিংয়ের কথা।” নিয়ন্ত্রণরেখায় বেড়ে চলা উত্তেজনার জন্য মনদীপের ছুটিও বাতিল হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, “পাকিস্তানকে এমন শিক্ষা দিক ভারত যাতে আর কোনও সৈনিকের পরিবারকে এ রকম দিন দেখতে না হয়।”
মনদীপের স্ত্রী প্রেরণা সিংহ।
পেশায় ট্রাকচালক মনদীপের বাবারও গর্ব ছিল ছেলে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিল বলে। ছেলের মৃত্যুতে একেবারে ভেঙে পড়েছেন তিনি। তবে ছেলেকে যে ভাবে জঙ্গিরা মেরেছে তার উচিত জবাব যেন ভারত দেয় সেই আর্জিও করেছেন। তিনি বলেন, “দেশের জন্য কর্তব্য পালন করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছে ছেলে। ওর জন্য গর্বিত। রক্তের শেষ বিন্দু দিয়ে দেশকে সেবা করে গিয়েছে।”
মনদীপের ভাই সন্দীপ বলেন, “অন্তত ১০ পাক সেনাকে মেরে বদলা নিক ভারত।”
শুক্রবার মাঝ রাতে দুঃসংবাদটা নিয়ে বাড়িতে আসেন এক সেনা। ছেলের মৃত্যুর খবরে গোটা পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। মুহূর্তেই মিলিয়ে যায় দিওয়ালির আয়োজনের সব মুহূর্ত। পর দিন সকালে গ্রামের ছেলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই গোটা গ্রাম ভিড় জমায় মনদীপের বাড়ির সামনে। তাঁদের ছেলেকে যে ভাবে মেরেছে পাকিস্তান, সেই ভাবেই ভারত বদলা নিক- গ্রামবাসীদের মুখে শুধু একটাই কথা। মনদীপের প্রতিবেশীরা জানান, খুব সাহসী ছেলে ছিলেন মনদীপ। মুখে সব সময় হাসি লেগে থাকত। পরের উপকারে যে কোনও সময় ঝাঁপিয়ে পড়া মনদীপের মৃত্যুতে প্রতিশোধের জন্য ফুটছে গোটা গ্রাম।
মনদীপের দেহ বাড়িতে পৌঁছতেই সেখানে হাজির হয়েছিলেন কুরুক্ষেত্র্রের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার। এসেছিলেন সেনা আধিকারিকরাও। অন্তহেড়ির বাড়িতে মনদীপকে শেষ শ্রদ্ধা জানান তাঁরা।
আরও খবর...