টানা জয়ধ্বনি, বাজেটটাই যেন রামলীলা!

মোদী নিজেই সেটা তুলে আবার টেবিল চাপড়াতে শুরু করলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৩৫
Share:

নিজের নামে টেবিল চাপড়ালেন খোদ নরেন্দ্র মোদীও। পিটিআইয়ের তোলা ফাইল ছবি।

মোদী! মোদী! মোদী! মোদী! মোদী….!

Advertisement

বিরোধীরা হতবাক! এ কী কাণ্ড! এটা সংসদ, না রাজনীতির আখড়া? বিজেপির প্রায় সব সাংসদ মিলে ‘মোদী-মোদী’ করছেন, এমনকি নিজের নামে টেবিল চাপড়াচ্ছেন খোদ নরেন্দ্র মোদীও। তা করতে গিয়ে হাতের ধাক্কায় জলের গ্লাসটা পড়েও গেল। মোদী নিজেই সেটা তুলে আবার টেবিল চাপড়াতে শুরু করলেন।

পীযূষ গয়াল তখন সবে ঘোষণা করেছেন পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করযোগ্য আয়ে ছাড়ের কথা। ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী যখন প্রধানমন্ত্রীর নাম জুড়ে নিয়ে কৃষকদের প্রকল্পের কথা বলছিলেন, ধ্বনি উঠল ‘জয় কিসান’। প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধির ঘোষণা, ধ্বনি উঠল ‘জয় জওয়ান’। ‘উরি’র কথা, ‘হাউ ইজ দ্য জোশ’। গরুর কথা, ‘জয় শ্রী রাম’। করে ছাড়, সোজা ‘মোদী-মোদী’।

Advertisement

আরও পড়ুন: লোকসভা ভোটের আগে শেষ বাজেটে কামধেনু নরেন্দ্র মোদী

বাজেট যেন রামলীলা। রাম অযোধ্যায়। কিন্তু রামলীলা সংসদে।

বিজেপির সাংসদকুল তখনও হয়তো বোঝেননি, কর ছাড়ের আওতায় তাঁরা নিজেরাই আসছেন না। না-বুঝেই টেবিল চাপড়ে মোদী-ধ্বনি তুলছেন। কারণ, খোদ মোদীই থামছেন না। অর্কেস্ট্রার ব্যাটন তাঁরই হাতে। তিতিবিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালেন কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খড়্গে। সরাসরি স্পিকারকে বললেন, ‘‘ম্যাডাম, এটা কী তামাশা হচ্ছে? এ তো লজ্জাজনক ঘটনা। সংসদকে ভোটের আখড়া বানিয়ে ফেলেছেন।’’ স্পিকার? যেন শুনেও শুনলেন না। প্রধানমন্ত্রীর হাসিমুখে টেবিল চাপড়ানো দেখে প্রথম বার বাজেট পড়ার সুযোগ পাওয়া পীযূষও চুপ। অনেকে গুনেছেন, বাজেট বক্তৃতার সময়ে একশো বারেরও বেশি টেবিল চাপড়েছেন প্রধানমন্ত্রী! 3

আরও পড়ুন: পর্বতের মূষিক প্রসব! বোঝার ভুলেই উল্লাস আয়করে

ব্যতিক্রমও অবশ্য ছিল। যেমন নিতিন গডকড়ী, লালকৃষ্ণ আডবাণী কিংবা মেনকা গাঁধী। বিজেপির উল্লাসে তাঁদের শামিল হতে দেখা গেল না। কংগ্রেস শিবির থেকে সুস্মিতা দেব চিৎকার করে বললেন, ‘‘নিতিন গডকড়ী তালি দিচ্ছেন না! তালি দিচ্ছেন না।’’ বাজেটের পরে কংগ্রেস নেতারা বললেন, ‘‘আজ তো যাত্রাপালা হল সংসদে। ভোটের জন্য যা ইচ্ছে তা-ই করবেন প্রধানমন্ত্রী? বাজেট নিজে তৈরি করেছেন। কোথায় হাততালি দিতে হবে, কোথায় মোদী-ধ্বনি তুলতে হবে, সেটাও সাজিয়ে এসেছেন!’’ পীযূষের বক্তব্য, ‘‘বাজেটের মধ্যেই যখন বিরোধীরা ‘হা-হা-হো-হো’ করে রব তুলছিল, সেটা রামলীলা নয়? আমার তো মনে পড়ছে, প্রধানমন্ত্রীই এক বার সংসদে রামলীলার কথা বলেছিলেন। আজ তো সেটাই দেখছি।’’

বাজেট পড়া শেষ হল। সাংসদেরা ছুটে এলেন মোদীর কাছে। একে একে ‘নম্বর’ বাড়ালেন নিজেদের: ‘‘বিরোধীদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছি।’’ ‘উরি’ ছবিতে অজিত ডোভালের ভূমিকায় অভিনয় করা সাংসদ পরেশ রাওয়াল আওয়াজ তুললেন, ‘‘হাউ ইজ দ্য জোশ? বিরোধীদের সার্জিকাল স্ট্রাইক করে দিয়েছি।’’ খুশি হয়ে পিঠ চাপড়ালেন প্রধানমন্ত্রী। কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম বললেন, ‘‘এমনিতেই দুঃখে কাটান প্রধানমন্ত্রী। বাজেট পড়ার পৌনে দু’ঘণ্টা একটু খুশিতে থাকুন। দুঃখের দিন ফের আসছে।’’

বিরোধীরা যতই বলুন ‘ভোটের বাজেট’। মোদী-অমিত শাহের সে সমালোচনায় কোনও পরোয়া নেই। বরং বাজেটের পরে দু’জনেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভোট-বাজারে ভোট-বাজেট হবে না তো কী হবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন