Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

পর্বতের মূষিক প্রসব! বোঝার ভুলেই উল্লাস আয়করে

নরেন্দ্র মোদী থেকে গোটা বিজেপি বেঞ্চের টানা টেবিল চাপড়ানো ও জয়ধ্বনি শুরু করেছিলেন যে, বিরোধী সাংসদরা হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন কিছু ক্ষণের জন্য।

বাজেট বক্তৃতার পর ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রীই স্পষ্ট করলেন, আয়করে ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা বেড়ে ৫ লক্ষ টাকা হচ্ছে না।

বাজেট বক্তৃতার পর ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রীই স্পষ্ট করলেন, আয়করে ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা বেড়ে ৫ লক্ষ টাকা হচ্ছে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৪৩
Share: Save:

পর্বতের মূষিক প্রসব!

৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত করার ঘোষণা করে পীযূষ গয়াল এমন বিশ্বজয়ের হাসি দিয়েছিলেন, তার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী থেকে গোটা বিজেপি বেঞ্চের টানা টেবিল চাপড়ানো ও জয়ধ্বনি শুরু করেছিলেন যে, বিরোধী সাংসদরা হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন কিছু ক্ষণের জন্য।

বাজেট বক্তৃতার পর ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রীই স্পষ্ট করলেন, আয়করে ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা বেড়ে ৫ লক্ষ টাকা হচ্ছে না। করযোগ্য আয় ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হলেই এই ছাড় মিলবে। করযোগ্য আয় তার বেশি হলেই কর মেটাতে হবে পুরনো হারে। কারণ, করের হারে কোনও বদল হচ্ছে না।

আরও পড়ুন: লোকসভা ভোটের আগে শেষ বাজেটে কামধেনু নরেন্দ্র মোদী

এত দিন আয়কর আইনের ৮৭এ ধারায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত করযোগ্য আয়ে ২,৫০০ টাকা পর্যন্ত রিবেট মিলত। এ বার সেই ধারাই সংশোধন করা হল। যার ফলে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করযোগ্য আয়ে ১২,৫০০ টাকা পর্যন্ত রিবেট মিলবে। আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত থাকায়, ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করযোগ্য আয়ে ঠিক ১২,৫০০ টাকাই কর বসে। এ বার ঠিক সেই ১২,৫০০ টাকাই রিবেট দিয়ে দেওয়ায়, কোনও কর মেটাতে হবে না। সরকারের হিসেব, প্রায় ৩ কোটি মধ্যবিত্ত মানুষ এই সুবিধা পাবেন। সে জন্য রাজস্বের লোকসান হবে ১৮,৫০০ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন: চাষিদের মন পেতে পরিবার পিছু থোক টাকা দেওয়ার ঘোষণা বাজেটে

মনে রাখা দরকার, করযোগ্য আয় ৫ লক্ষ টাকার কম হলে রিবেটের পরিমাণও কমবে। কিন্তু করযোগ্য আয় ৫ লক্ষ টাকার এক পয়সাও বেশি হলে কোনও রিবেটই মিলবে না। এত দিন আড়াই থেকে ৫ লক্ষ টাকা আয়ে ৫ শতাংশ হারে কর দিতে হত। তার উপরে ২০ শতাংশ, ১০ লক্ষ টাকার উপরে ৩০ শতাংশ হারে কর বসত। সেই করের হারেও বদল হয়নি।

৮০সি ধারায় প্রভিডেন্ট ফান্ড, জীবন বিমার মতো বিভিন্ন খাতে ১.৫ লক্ষ টাকা সঞ্চয়ে আয়কর ছাড় মেলে। এর উপরে গৃহঋণে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সুদ, জাতীয় পেনশন প্রকল্প, নিজের ও বাবা-মায়ের জন্য মেডিক্লেমের মতো বেশ কিছু খাতে ব্যয় করা টাকার উপরেও ছাড় মেলে। এই সমস্ত ছাড়যোগ্য আয় মোট আয় থেকে বাদ দিলে করযোগ্য আয় বার হয়। কর বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, যাঁদের আয় বছরে ১০ লক্ষ টাকার আশেপাশে, তাঁদের পক্ষে কোনও ভাবেই এই সুবিধা পাওয়া সম্ভব নয়। একমাত্র যারা ৬.৫ লক্ষ টাকা থেকে বছরে ৮ লক্ষ টাকা মতো আয় করেন, তারা নানা খাতে সঞ্চয় করে করযোগ্য আয় ৫ লক্ষ টাকার মধ্যে নিয়ে আসতে পারলে আয়কর থেকে পুরোপুরি রেহাই পাবেন। সরকারের যুক্তি, নব্য মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষকে সুরাহা দিতেই এই প্রকল্প আনা হয়েছে। আর অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা মজা করে বলছেন, পীযূষ গয়াল নিজে চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। এতে তাঁর পেশার মানুষদেরই চাহিদা বাড়বে। কারণ, কী ভাবে করযোগ্য আয় ৫ লাখের নীচে নামিয়ে আনিয়ে জানা যায়, মানুষ তার উপায় খুঁজবেন।

বাজেটের ঘোষণা শুনে প্রথমে অধিকাংশ বিজেপি সাংসদ, এমনকি মন্ত্রীরাও ভেবেছিলেন, আয়কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা বেড়ে আড়াই লক্ষ টাকা থেকে বেড়ে ৫ লক্ষ টাকা হয়েছে। পরিসংখ্যানমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া করের বোঝা কত কমল, তা নিয়ে টুইটও করেছেন। বিদ্যুৎমন্ত্রী রাজকুমার সিংহ এক গাল হেসে বলেছেন, ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কর ছাড় দেওয়ায় বিরোধীদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। পরে বুঝেছেন, আসলে এর কিছুই নয়। আর চমক কাটিয়ে উঠে কংগ্রেস নেতারাও বলছেন, প্রচারের বেলুন চুপসে দিতে খুব শীঘ্রই মাঠে নামবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Income Tax Budget 2019 Union Budget
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE