নিলামের আগে ক্রিকেটবিশ্বকে চমকে দিয়ে আন্দ্রে রাসেলকে ছেড়ে দিয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর)। কিছু দিন পর সেই রাসেলকেই পাওয়ার কোচ হিসাবে নিয়োগ করেছে তারা। আইপিএলে অবসর নেওয়ার পর নতুন ভূমিকায় জায়গায় দেখা যাবে রাসেলকে। অবসরের সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছেন খোদ দলের মালিক শাহরুখ খান। এক সাক্ষাৎকারে তেমনই জানিয়েছেন কেকেআরের সিইও বেঙ্কি মাইসোর। রয়েছে অর্থের হিসাবও।
‘ক্রিকইনফো’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেঙ্কি বলেছেন, “ছেড়ে দেওয়া হবে এ কথা শোনার পর থেকে কিছুটা যন্ত্রণা পাচ্ছিল রাসেল। তখন শাহরুখকে বিষয়টা জানাই। ও-ই বলে, অবসর নিয়ে রাসেল আমাদের কোচ হয়ে যাক। সব ক্রিকেটারই কেরিয়ারের শেষ প্রান্তে গিয়ে ভাবে, অবসরের পর কী হবে? মনে হয় না দ্রে রাস সেটা নিয়ে ভেবেছিল। তবু প্রস্তাব দেওয়ার পর ও লুফে নেয়। বাকি লিগগুলোয় কেমন খেলছে সেটাও দেখুন।”
রাসেলকে ছেড়ে দেওয়ার পিছনে রয়েছে অর্থও। মহা নিলামের আগে ১২ কোটি টাকায় ধরে রাখা হয়েছিল রাসেলকে। তবে নিয়ম অনুযায়ী, কেকেআরের তহবিল থেকে কাটা হয়েছিল ১৮ কোটি। কারণ রাসেলকে চতুর্থ ক্রিকেটার হিসাবে ধরে রাখা হয়েছিল। বেঙ্কি বলেছেন, “প্রতি বার নিলামের আগে আমার মনের মধ্যে চোরা চিন্তা তৈরি হয়। গত বার রাসেলের চুক্তি ১২ কোটি টাকার হলেও আমাদের থেকে ১৮ কোটি কাটা হয়েছিল। অনেকেই সেটা বুঝতে পারেননি। হয়তো ভেবেছেন, ১২ কোটির জন্য কেকেআর রাসেলকে ছেড়ে দিল! কিন্তু ১৮ কোটি মানে অনেক টাকা। বিশেষ করে এ ধরনের ছোট নিলামের ক্ষেত্রে।”
১২ কোটি কাটা হলে কি রাসেলকে ধরে রাখা হত? বেঙ্কির যুক্তি, “অনেকটা তফাত হত এটুকু বলতে পারি। ১২ কোটিও অনেক টাকা। তবে রাসেলের মতো ক্রিকেটারের দাম ১২ কোটির বেশি। ওকে ছেড়ে দিয়ে ১৮ কোটি টাকা তহবিলে এলে, সেটা যথেষ্ট অর্থ। তাই শেষ মুহূর্তে আমরা সিদ্ধান্ত নিইনি। শুধু শেষ মুহূর্তে ঘোষণাটা করেছি।”
ছেড়ে দেওয়া হবে জানতে পেরে রাসেল কিছুটা অবাক হয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু নাইট রাইডার্স পরিবার থেকে আলাদা হতে চাইছিলেন না। আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেও তাঁকে দেখে সে সব বোঝা যায়নি। বেঙ্কির কথায়, “দু’দিন পর এসে বলল, দু’রাত ঘুমোতে পারেনি। কী হবে ভেবে ভেবে চিন্তা করেছে। নাইট রাইডার্সের পরিবারের সঙ্গে যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে সেটা ভুলতে পারছিল না। আমার স্ত্রীর থেকে বেশি রাসেলের সঙ্গে কথা বলেছি। ১১ বছরের সম্পর্ক। ফিটনেস বাড়াতে ওকে এক বার ডালাসে পাঠিয়েছিলাম। ডোপিংয়ে নির্বাসিত হওয়ার সময়েও পাশে ছিলাম। রাসেলকে সাহায্য করতে দলের ফিটনেস প্রশিক্ষককে ত্রিনিদাদে পাঠিয়েছিলাম। অতীতে ফর্ম আর ফিটনেস না দেখেই ওকে ধরে রেখেছি আমরা। ও সেটা সব সময় স্বীকারও করে।”
হঠাৎ করে রাসেলকে পাওয়ার কোচের মতো পদে নিয়োগ করা হল কেন? বেঙ্কির জবাব, “হঠাৎ করেই ভাবনাটা মাথায় এসেছে। রাসেল কী করতে পারে সেটা নিয়ে ভাবছিলাম। তখনই মনে পড়ল, বড় বড় শট মেরে ম্যাচ শেষ করে আসার ক্ষমতা ওর রয়েছে। কেমন হবে যদি সেটাই ও নতুনদের শেখায়? ফিল্ডিংও করতে পারে। বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিল্ডার। ওকে বললাম, ‘তোমার সমস্ত অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা দিয়ে আমাদের সাহায্য করতে পারো। তোমার শারীরিক শক্তি রয়েছে। সেটাই আমাদের শক্তি’। আমি বললাম, ‘এখন থেকে তুমি আমাদের পাওয়ার কোচ’। রাসেল বলল, ‘শুনতে দারুণ লাগছে’। আসলে কোচিং নয়, দলের ছেলেদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে মানসিক ভাবে তৈরি রাখার কাজটাই করবে রাসেল।”
আরও পড়ুন:
শুধু রাসেল নয়, কোচিং স্টাফেদেরই বদলে ফেলেছে কেকেআর। অভিষেক নায়ার প্রধান কোচ হয়েছেন। এসেছেন ডোয়েন ব্র্যাভো, শেন ওয়াটসন, টিম সাউদিরা। এর কারণ কী? বেঙ্কির ব্যাখ্যা, “গত বছর (২০২৪ আইপিএলের পর) আমাদের গোটা কোচিং স্টাফই চলে গিয়েছিল জাতীয় দলে। আমরা বুঝেছিলাম, খেলাটা দ্রুত বদলে যাচ্ছে। কোচ হিসাবে এমন ক্রিকেটার বাছতে চেয়েছিলাম যারা সদ্য অবসর নিয়েছে। তাই অভিষেক, ব্র্যাভোদের নেওয়া হয়েছে।”