সংসদে ঝড়ের মেঘ, থমকে মোদীর স্বপ্ন

বিতর্কিত বিষয়ে হাজারো টানাপড়েন চললেও দেশের বাজেট পাশ করাতে বিরোধীরা হয়তো বাধা দেবে না। কিন্তু এ বারের বাজেট অধিবেশন যে এক প্রবল ঝড়-ঝঞ্ঝা নিয়ে আসছে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত নরেন্দ্র মোদীর সরকার।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪৭
Share:

বিতর্কিত বিষয়ে হাজারো টানাপড়েন চললেও দেশের বাজেট পাশ করাতে বিরোধীরা হয়তো বাধা দেবে না। কিন্তু এ বারের বাজেট অধিবেশন যে এক প্রবল ঝড়-ঝঞ্ঝা নিয়ে আসছে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত নরেন্দ্র মোদীর সরকার।

Advertisement

আজ থেকে শুরু হল সংসদের বাজেট অধিবেশন। ঝড়ের ইঙ্গিত বুঝেই প্রধানমন্ত্রী মোদী সংসদ চলতে দিতে বিরোধীদের আর্জি জানিয়েছেন। তাঁরা যাতে আলোচনার মধ্যে দিয়ে সরকারের দুর্বলতা তুলে ধরেন, সে কথাও বলেছেন মোদী। আজ সংসদের যৌথ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও একই ভাবে সংসদ চলতে দেওয়ার যুক্তি তুলে ধরেছেন। ব্যাখ্য দিয়েছেন, আলোচনার মধ্যেই গণতন্ত্রের সার্থকতা, এই পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে নয়। পারস্পরিক সমন্বয় বাড়াতে সাংসদদের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। স্পিকার সুমিত্রা মহাজনও রাহুল গাঁধীর সঙ্গে বৈঠক করে সংসদ চালানোর চেষ্টা করছেন।

কিন্তু প্রশ্ন একটাই, এর পরেও আদৌ সংসদ চলবে কি? জেএনইউ কিংবা হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা, দাদরি কাণ্ড— সব মিলিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা তীব্র থেকে তীব্রতর। ওঙ্কার গোস্বামীর মতো আর্থিক বিশেষজ্ঞ বলছেন, ‘‘এ সব ঘটনা আর্থিক বিষয়ের আলোচনা মাটি করে দিতে পারে।’’ অনেকেই ভাবছেন, এ বার সংসদে বাজেটের থেকে জেএনইউয়ের মতো বিষয়ের দাপট বেশি হতে পারে। অবশ্য কংগ্রেসের অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির ব্যাখ্যা, ‘‘অনেকে মনে করছেন, জেএনইউয়ের মতো বিষয় যদি রাজনীতিতে মেরুকরণ ঘটায়, তা হলে তা বিজেপির আর্থিক দৈন্যকে লুকিয়ে ফেলতে সাহায্য করবে। তবে আমরা জেএনইউ নিয়ে সঙ্ঘ ও মোদী সরকারের সমালোচনা করব। বাজেট নিয়েও সরকারকে ছাড়ব না।’’

Advertisement

কিছু দিন আগেই মোদী গাঁধী পরিবারকে নিশানা করেছেন। তবে বাজেট অধিবেশন এগিয়ে আসতেই সংসদ চালাতে চেয়ে বিতর্কিত বিষয় থেকে সরে আসতে পদক্ষেপ করছেন তিনি। বিতর্কিত জমি বিল প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিরোধীদের প্রতি মোদীর মনোভাবে ক্ষুব্ধ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। তাঁর মন্তব্য, ‘‘বিজেপি সংসদে শান্তি বজায় রাখতে আন্তরিক নয়। না হলে ন্যাশনাল হেরাল্ডের মতো বিষয় এনে গাঁধী পরিবারকে তারা আক্রমণ করতো না।’’ মনমোহন যখন প্রধানমন্ত্রী, বিজেপি সংসদ চলতে দেয়নি। বাজপেয়ী জমানায় বিরোধী দল কংগ্রেসও সংসদ অচল করেছে। শাসক ও বিরোধীদের সংঘাতের সেই ট্র্যাডিশন আজও অব্যাহত।

প্রায় দু’বছর আগে মোদী যখন ক্ষমতায় আসেন, গগনচুম্বী প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। জগদীশ ভগবতীর মতো অর্থনীতিবিদরা বলেছিলেন, সাবেকি বামপন্থী অর্থনীতির রাস্তা ছেড়ে সংস্কারের পথে এগিয়ে যাবে মোদী সরকার। মেঘনাদ দেশাই বলেছিলেন, মার্কিন রিপাবকিলান দলের এক ভারতীয় অধ্যায় শুরু হতে চলেছে। কিন্তু মোদীর তৃতীয় বাজেটের আগে সেই বিশেষজ্ঞরাই হতাশ। আর্থিক সংস্কার তো দূরে থাক, উল্টে বণিক মহল মনে করছে, ভর্তুকি নির্ভর অর্থনীতির মডেলের ফাঁদেই আটকে এনডিএ সরকার। অবশ্য সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির যুক্তি, ‘‘এখন মানুষ বুঝছেন তাঁরা সেদিন যা ভেবেছেন, তাতে মোটেই বাস্তবতা ছিল না। সেটা ছিল একটা কৃত্রিম জনমত।’’

সঙ্কটের পরিস্থিতি বাজেটের আগে অর্থনীতিবিদদের ভাবাচ্ছে। ক্রমিক আর্থিক অবনতি অব্যাহত। বিনিয়োগ ও বিলগ্নিকরণের ছবিও ম্লান। আজ শেয়ার মার্কেটও ৩৭৯ পয়েন্ট পড়েছে। অনাবৃষ্টির ফলে ফসল উৎপাদন ভাল নয়। প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের স্বার্থরক্ষার কথা বলছেন ঠিকই, বাজেটও সেই অভিমুখেই এগোবে বলে শোনা যাচ্ছে। জমি বিল নিয়ে বিরোধীদের পাল্টা প্রচারে নাজেহাল মোদী কৃষকদের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতার কথা বারবার বোঝাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শিল্পপতি সম্মেলনে গিয়ে বলছেন, কৃষকদের ভর্তুকি দিলে বাজে খরচ, তা হলে শিল্পে ইনসেনটিভ বাজে খরচ নয় কেন? দূরদর্শন নুতন চ্যানেলও খুলেছে কৃষকদের জন্য। কিন্তু এত কিছুর পরেও গুরুত্বপূর্ণ বিল নিয়ে এগোতে পারছেন না মোদী।

সমাজতত্ত্ববিদ আন্দ্রে বেতেইয়ের মতে, সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রয়োজন শাসক ও বিরোধী দলের বোঝাপড়া। কিন্তু সেটি অদৃশ্য। দেখা নেই দু’বছর আগের মোদী ঝড়েরও। যদি তা অটুট থাকতো তা হলে সংসদীয় অধিবেশনে সরকারকে ঝামেলায় পড়তে হতো না। সকলেই বুঝছেন, বাজেট অধিবেশনে আম-জনতার কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও, কাজের কাজ কিছুই হবে না। যা হবে, তা হল, রাজনীতির তিরন্দাজি। যার ইঙ্গিত কংগ্রেসের জয়রাম রমেশের কথাতেই। মোদীকে নিশানা করে গাঁধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ এই নেতার মন্তব্য, ‘‘রাজাকে রোজ রাজধর্মের পরিচয় দিতে হয়। আসলে প্রধানমন্ত্রী ধরা পড়ে গিয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন