National News

অমিতের ইস্তফা দাবি বিরোধীদের, দিল্লির সংঘর্ষ নিয়ে উত্তাল সংসদ

গাঁধী মূর্তির পাদদেশে চোখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদে শামিল হন তৃণমূল সাংসদরা। ‘গাঁধীজির তিন বাঁদর’-এর অনুকরণে এই প্রতিবাদ সাড়া পড়ে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২০ ১৬:৪৩
Share:

চোখে কালো কাপড় বেঁধে সংসদ চত্বরে প্রতিবাদ তৃণমূলের। ছবি: টুইটার থেকে

দিল্লির গোষ্ঠী সংঘর্ষ ঘিরে তীব্র উত্তেজনা ছড়াল সংসদের ভিতরে ও বাইরে। সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ইস্তফার দাবিতে দুই কক্ষেই সোচ্চার ছিল কংগ্রেস, তৃণমূল, আপ, বিএসপি-সহ অধিকাংশ বিরোধী দল। তুমুল প্রতিবাদের মুখে পড়ে আপাতত ‘পরে আলোচনা’র কৌশল নিয়েছে শাসক দল। বিরোধীদের হই হট্টগোলের জেরে দিনের মতো মুলতুবি রাজ্যসভালোকসভার অধিবেশনও মুলতুবি হয়েছে দফায় দফায়। শাসক শিবির সূত্রে খবর, অধিবেশন ঠিক ভাবে চললে তখন বিবৃতি দিতে পারেন অমিত শাহ। আবার লোকসভার বাইরে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে চোখে কালো কাপড় বেঁধে ‘গাঁধীজির তিন বাঁদর’-এর অনুকরণে প্রতিবাদে শামিল হন তৃণমূল সাংসদরা। সেই বিক্ষোভে আবার কংগ্রেস সাংসদদেরও যোগ দিতে দেখা গিয়েছে।

Advertisement

তিন সপ্তাহের ব্যবধানে আজ সোমবার থেকে শুরু হয়েছে বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনে বাজেট প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল সংসদে। কিন্তু তার মধ্যেই ঘটে গিয়েছে দিল্লিতে রক্তক্ষয়ী গোষ্ঠী সংঘর্ষ। প্রাণ গিয়েছে অন্তত ৪৬ জনের। অভিযোগ উঠেছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক আগেভাগে ব্যবস্থা নিলে এত বড় সংঘর্ষ এড়ানো যেত।

এই প্রেক্ষিতে অধিবেশন শুরুর দিনই বড়সড় ধাক্কা খেল শাসক দল বিজেপি। দিল্লির সংঘর্ষ নিয়ে আলোচনার দাবি জানিয়ে এ দিন সংসদের উভয় কক্ষেই আলোচনার প্রস্তাব দেয় বিরোধীরা। কংগ্রেসের রাজ্যসভার দলনেতা গোলাম নবি আজাদ প্রশ্ন তোলেন, দিল্লিতে যখন সংঘর্ষ ছড়াচ্ছে, সরকার কি তখন ‘ঘুমোচ্ছিল’। দিল্লির এই সংঘর্ষ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিবৃতি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ইস্তফার দাবি তোলে কংগ্রেস।

Advertisement

আরও পড়ুন: প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ রাষ্ট্রপতির, ফাঁসি পিছতে নারাজ আদালতও

দিল্লির সংঘর্ষ নিয়ে আলোচনার দাবি স্পিকারও অবশ্য উড়িয়ে দেননি। তবে তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আলোচনার যোগ্য। আপাতত আমাদের প্রাধান্যে দেওয়া উচিত আগে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরানো। যদি সেটা হয়, তখন আলোচনা করা যাবে।’’ তিনি আশ্বস্ত করেন, পরে এ নিয়ে আলোচনার জন্য সময় বরাদ্দ করা হবে। কিন্তু বিরোধীরা তা মানতে নারাজ। হই-হট্টগোলের পাশাপাশি ওয়েলে নেমে স্লোগান-বিক্ষোভ শুরু করেন সাংসদরা। তার জেরে দিনের মতো অধিবেশন মুলতুবি করে দেন চেয়ারম্যান।

এ দিন রাজ্যসভার চেয়েও বেশি বিশৃঙ্খলা হয়েছে লোকসভায়। অমিত শাহের পদত্যাগ দাবি করে তুমুল হই হট্টগোল শুরু করেন বিরোধীরা। কিন্তু রাজ্যসভার মতোই লোকসভাতেও স্পিকার ওম বিড়লা জানিয়ে দেন, এটা আলোচনার উপযুক্ত সময় নয়। তিনি বলেন, ‘‘অবস্থার উন্নতির জন্য আমরা অপেক্ষা করব। তার পর আলোচনার অনুমোদন দেব। কংগ্রেস-সহ তৃণমূল, আপ, এসপি, বিএসপি, ডিএমকে-সহ প্রায় সব বিরোধী দলের সাংসদদের হই হট্টগোলে দফায় দফায় মুলতুবি হয়ে যায় অধিবেশন।

আরও পড়ুন: ‘পরিকল্পিত গণহত্যা হয়েছে দিল্লিতে’, নেতাজি ইন্ডোরের মমতা

অধিবেশন শুরুর আগে থেকেই অবশ্য সংসদ চত্বর ছিল সরগরম। সকালের দিকেই গাঁধী মূর্তির পাদদেশে চোখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদে শামিল হন শুখেন্দু শেখর রায়, সৌগত রায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, মহুয়া মৈত্র, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়রা। ‘গাঁধীজির তিন বাঁদর’-এর অনুকরণে তৃণমূলের এই প্রতিবাদ সাড়া পড়ে অন্য দলের মধ্যেও। কংগ্রেসের রাহুল গাঁধী, অধীর চৌধুরী, শশী তারুরকেও তৃণমূলের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দিতে দেখা গিয়েছে। আপ সাংসদরাও এক সময় যোগ দেন।

নির্মলা সীতারামনের বাজেটে আর্থিক মন্দা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর দাওয়াই নেই, কার্যত দিশাহীন বাজেট, সিএএ-এনআরসি, বিজেপির বিভাজনের রাজনীতি— বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বে সরকারের বিরুদ্ধে যখন এই সব অস্ত্রে শান দিচ্ছিলেন বিরোধীরা, তখনই দিল্লিতে গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে যায়। তাতে হাতে গরম অস্ত্র পেয়ে যায় বিরোধীরা। এমনিতেই দিল্লির সংঘর্ষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক তথা মন্ত্রী অমিত শাহের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে। এমন মোক্ষম সময়ে অধিবেশন শুর হওয়ায় কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে শাসক দল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন