National News

ডায়েরিতে ‘বাবার স্বপ্নাদেশ’, হ্যালুসিনেশনের বলি বুরারির পরিবার?

মোক্ষ লাভের উদ্দেশ্যে ললিতই পরিবারকে এই পথ বেছে নেওয়ার দাওয়াই দিয়েছেন, তদন্তের শুরু থেকে এমন অনুমান করছিল পুলিশ। ডায়েরির ওই পাতাগুলো সামনে আসতে সেই অনুমানই আরও দৃঢ় হল।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৮ ১৮:৩৬
Share:

পরপর অ্যাম্বুল্যান্সে করে সৎকারের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ১১টি দেহ। —পিটিআই

১০ বছর আগে মারা গিয়েছিলেন বাবা। কিন্তু কিছুতেই বাবার সঙ্গে এই বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারছিলেন না ভাটিয়া পরিবারের ছেলে ললিত। প্রায়শই বাবার ছবির সঙ্গে কথা বলতেন। মৃত বাবার স্বপ্নাদেশ পেয়েই কি এমন একটা কাণ্ড ঘটিয়েছেন ললিত! তদন্ত যত এগচ্ছে, ভাটিয়া পরিবারের মৃত্যু রহস্যের জট ক্রমশ পাকাচ্ছে। উঠে আসছে এমনই নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।

Advertisement

রবিবার ৭৭ বছরের নারায়ণী দেবী-সহ দিল্লির ভাটিয়া পরিবারের ১১ জনের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃতদেহের পাশে একটি ডায়েরিও উদ্ধার হয়। প্রতি পাতায় রহস্যে মোড়া সেই ডায়েরি থেকেই এমন তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ।

মোক্ষ লাভের উদ্দেশ্যে ললিতই পরিবারকে এই পথ বেছে নেওয়ার দাওয়াই দিয়েছেন, তদন্তের শুরু থেকে এমন অনুমান করছিল পুলিশ। ডায়েরির ওই পাতাগুলো সামনে আসতে সেই অনুমানই আরও দৃঢ় হল।

Advertisement

আরও পড়ুন: ব্রিজ ভাঙতে দেখেই এমার্জেন্সি ব্রেক! মুম্বইয়ে চালকের তৎপরতায় বাঁচলেন ট্রেন যাত্রীরা

পুলিশ জানিয়েছে, ললিতের বাবা গোপাল দাস ভাটিয়া সেনাকর্মী ছিলেন। ১০ বছর আগে তাঁর মৃত্যু হয়। কিন্তু ললিত তা মানতে চাইতেন না। বাবা তাঁর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন, এমনই বিশ্বাস ছিল তাঁর। বাবার ছবির সঙ্গে নিয়মিত কথাও বলতেন তিনি। সেই বিশ্বাস ধীরে ধীরে পরিবারের মধ্যেও ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন ললিত। পরিবারের বিশ্বাস ফেরাতে খুব সুবিধা হয়েছিল যখন এক দুর্ঘটনায় বাকশক্তি হারিয়ে ফেলা ললিত পুনরায় কথা বলতে শুরু করেন। বাবাই নাকি এই অসাধ্যসাধন করেছেন, পরিবারকে বুঝিয়েছিলেন তিনি। পরিবারের লোকেরাও ক্রমশ বাবার উপস্থিতি বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল। বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল, ললিতের মাধ্যমেই পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন মৃত গোপাল দাস। আর সেটাই ডায়েরিতে লিখে রাখেন ললিত।

বুরারিতে মৃতদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট নিয়ে যাচ্ছেন এক পুলিশকর্মী। —পিটিআই

আরও পড়ুন: ১১ জানলা, ১১ রড, ১১ পাইপ, রহস্য কাটছে না ‘আত্মঘাতী’ ১১ জনকে নিয়ে!

উদ্ধার করা ডায়েরির একটি নোটে লেখা রয়েছে, বাবা এসে অন্তিম সময়ে তাঁদের সকলকে উদ্ধার করবেন। হিন্দিতে লেখা সেই বিষয়টি এ রকম, ‘অন্তিম সময় ম্যায়... আখরি ইচ্ছা পূর্তি কা ওয়াক্ত, আসমান হিলেগা, ধরতি কাঁপেগি... উস ওয়াক্ত মন্ত্র কা জপ বরা দেনা.. ম্যা আকর, তুমকো অউর অউরো কো উতর লুঙ্গা শেষ সময়ে, শেষ ইচ্ছা পূরণের সময়, আকাশ কাঁপবে, মাটি কাঁপবে... তখন মন্ত্রের জপ বাড়িয়ে দেবে... আমি আসব, তোমাকে এবং বাকি সবাইকে উদ্ধার করব’। মৃত্যুর পর বাবা এসে উদ্ধার করবেন, মোক্ষলাভ হবে— এই বিশ্বাস থেকেই পরিবারের সকলে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে, অনুমান পুলিশের। উদ্ধার হওয়া আর একটি নোটে হিন্দিতে লেখা, ‘ললিতের চিন্তা করো না তোমরা, আমি যখন আসি ও একটু অস্থির হয়ে পড়ে।’ এটা থেকে পুলিশের অনুমান, অতিপ্রাকৃতে বিশ্বাসের জন্য পরিবারের লোকেরা ললিতকে নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন ছিলেন। পরিবারের চিন্তা কাটাতেই এটা লেখে ললিত।

ডায়েরির আরেকটি পাতায় ললিতের মা নারায়ণীর খেয়াল রাখার নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। শুধু এই নয়, ললিত এবং তাঁর পরিবার জীবনে যত রকম সমস্যায় পড়েছেন, তার প্রায় সব কিছুরই সমাধানের উপায় বাতলানো রয়েছে ওই ডায়েরির পাতায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন