National news

অপহরণ, মারধর! জেলে বসেই ব্যবসায়ীর কোটি টাকার সম্পত্তি হাতালেন প্রাক্তন সাংসদ

লখনউয়ের দেওয়ারি জেলের ঘটনা। এই ঘটনার পরই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে যোগীর সরকার।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

লখনউ শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৪:৩৭
Share:

এই জেলেই ওই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

জেলে বসেও ‘দাদাগিরি’ চালিয়ে যাচ্ছেন সমাজবাদী পার্টির প্রাক্তন সাংসদ। লখনউয়ে নিজের বাড়ি থেকে এক ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে এসে তাঁর ৪৮ কোটি টাকার সম্পত্তি কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল ওই প্রাক্তন নেতার বিরুদ্ধে। জেলের ভিতরেই! লখনউয়ের দেওয়ারি জেলের ঘটনা। এই ঘটনার পরই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে যোগীর সরকার।

Advertisement

বিস্তারিত জানিয়ে লখনউয়ের কৃষ্ণনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই ব্যবসায়ী। তাঁকে খুনের চেষ্টার অভিযোগও করেছেন তিনি। তারপর থেকে তাঁর নিরাপত্তার জন্য দু’জন সশস্ত্র পুলিশকে মোতায়েন করা হয়েছে। যাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ, তিনি সমাজবাদী পার্টির প্রাক্তন সাংসদ আতিক আহমেদ। ব্যবসায়ী মোহিত জায়সবালের অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি আতিকের দুই সঙ্গীকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

শুরুটা হয়েছিল বছর দুই আগে। আতিক এবং তাঁর দলবল মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে জায়সবালের থেকে অনেক টাকা তোলা তুলেছিল। তারপর এই দু’বছরের মধ্যে আর তাঁর থেকে টাকা আদায় করেননি আতিক। কোনও যোগাযোগও ছিল না। গত ৪ মাস হল আরও বেশি টাকার জন্য আতিকের সাঙ্গপাঙ্গরা ফের তাঁকে হুমকি দিতে শুরু করে।

Advertisement

আরও পড়ুন: রাজ্যসভায় পেশ তিন তালাক বিল, সংশোধনীর দাবিতে হইচই বিরোধীদের, মুলতুবি অধিবেশন

পুলিশকে জায়সবাল জানিয়েছেন, ২৬ ডিসেম্বর তাঁর বাড়িতে আহমেদের সাঙ্গপাঙ্গরা এসে উপস্থিত হয়। লখনউয়ে তাঁর বাড়ির সামনে থেকেই তাঁর এসইউভি গাড়িতে চড়ে জোরজবরদস্তি ৩০০ কিলোমিটার দূরে দেওরিয়া জেলে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। গত মার্চ মাস থেকে এই জেলেই বন্দি রয়েছেন খুনে অভিযুক্ত প্রাক্তন সমাজবাদী পার্টির ওই সাংসদ আতিক আহমেদ।

অভিযুক্ত প্রাক্তন সাংসদ।

জয়সবালের অভিযোগ, জেলে আতিকের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরই তাঁকে আরও হেনস্থা করতে শুরু করে আতিকের লোকজন। তাঁকে মারধর করে। তাতে হাতের আঙুল ভেঙে গিয়েছে। পিঠেও চোট পান। তারপর জোর করে কাজগপত্রে সই করিয়ে তাঁরই ৪৮ কোটি টাকার সম্পত্তি আতিকের দুই সঙ্গপাঙ্গের নামে হস্তান্তর করে নেয় তারা। কাজ হয়ে গেলে জেল থেকে বাইরে বেরনোর পর তাঁর এসইউভিটাও ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায় তারা। আর এ সবটাই হয়েছে কারারক্ষীদের সামনেই, অভিযোগ জায়সবালের।

(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)

ওই দিন জেলের ভিতরে আতিকের সঙ্গে দেখা করতে জায়সবাল যে গিয়েছিলেন তা মেনে নিয়েছেন কারা কর্তারাও। তবে নিতান্ত জেলের নিয়ম মেনেই বন্দির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন বলে জানান তাঁরা। ভিতরে যে এত কাণ্ড ঘটেছে তা তাঁদের জানা নেই। জেলার ডিকে পান্ডে বলেছেন, ‘‘আমি এটুকুই বলতে পারি মোহিত জয়সবাল ২৬ ডিসেম্বর আতিক আহমেদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। জেলের নিয়ম মেনেই এই সাক্ষাৎ হয়। তাঁকে অপহরণ করা, জোর করে জেলে আনা, এমনকি ভিতরে তাঁকে হেনস্থা করার সম্পর্কে কিছুই জানা নেই। তিনি তো জেল থেকে বার হওয়ার সময়ও কাউকে এ বিষয়ে কিছু জানাননি।’’

আরও পড়ুন: বছরের শেষ দিনে জোড়া খুনের সাক্ষী হল শহর

তবে প্রাথমিক তদন্তে জেলের সিসিটিভি ফুটেজে গন্ডগোল দেখতে পেয়েছেন তদন্তকারী অফিসাররা। যে সময়টা জায়সবাল জেলের ভিতরে ছিলেন, সে সময়ের সিসিটিভি ফুটেজে অনেক কাটাছেঁড়া করা হয়েছে। ফুটেজের কিছু অংশ আবার মুছে ফেলা হয়েছে বলেো অভিযোগ।

উত্তরপ্রদেশ সরকার দেওরিয়া জেল অফিসারকে দ্রুত তদন্ত করে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কারারক্ষীদের যাঁরা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

যাঁর বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, সেই আতিক আহমেদ সমাজবাদী পার্টির প্রাক্তন সাংসদ। ২০০৪ সালে আতিক সাংসদ হন। ২০০৫ সালে বহুজন সমাজবাদী পার্টির এক সাংসদকে খুনের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। পরে ২০০৯ সালে আপনা দলের প্রতিনিধি হয়ে প্রতাপগড় থেকে লোকসভায় দাঁড়ান। কিন্তু পরাজিত হন। ২০১২ সালেও আপনা দলের প্রতিনিধি হয়ে এলাহাবাদে দাঁড়ান। সেখানেও পরাজিত হন। তাঁর বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত খুন-সহ মোট ৭০টি অভিযোগ রয়েছে। ২০১৬ সালে ইলাহাবাদ এগ্রিকালচার ইনস্টিটিউটের এক ফ্যাকাল্টি মেম্বারকে হেনস্থার অভিযোগে ২০১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি জেলবন্দি। সম্প্রতিই তাঁকে ইলাহাবাদ জেল থেকে দেওরিয়া জেলে স্থানাস্থরিত করা হয়।

—ফাইল চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন