নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
মডু না থাই যায়!
বাংলা তর্জমায়, দেরি না হয়ে যায়!
ছাপান্ন ইঞ্চি ছাতিশোভিত প্রধানমন্ত্রীর চোখে চোখ রেখে এই হুঁশিয়ারি! তা-ও আবার তাঁর পরাক্রমের উৎস গুজরাতে দাঁড়িয়েই! সম্প্রতি অমদাবাদে বণিক প্রতিনিধিদের নেতারা নরেন্দ্র মোদীকে জানিয়েছেন, এই বেহাল পরিস্থিতির মোড় ঘোরাতে দেরি করবেন না। করলে, আখেরে আপনারই ক্ষতি।
গুজরাতি ব্যবসায়ীরা কাজের সময়ে খেজুরে আলাপে উৎসাহী নন। এমনকী শহরের বেশ কিছু চায়ের দোকানের বাইরে লেখাও রয়েছে— রাজনীতির আলোচনা নিষিদ্ধ! কারণ ফালতু উত্তেজনা তৈরি হলে সময় নষ্ট। সওদা নষ্ট। এ হেন অমদাবাদের সুবিপুল ‘মাসকাটি ক্লথ মার্কেট’ কিন্তু এখন ‘হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল!’ যে কথার ভাঁজে ভাঁজে ক্ষোভ।
দু্’হাজারেরও বেশি দোকান নিয়ে এই হোলসেল কমপ্লেক্সে দু’জন পাশাপাশি হাঁটার জো নেই। ট্রাক-বাস-টেম্পো এবং কতিপয় উটের গাড়িও পথ আটকাচ্ছে। এখান থেকে রোজ গড়ে দুই থেকে পাঁচ লাখ মিটার কাপড় বাক্সবন্দি হয় রফতানির জন্য। তবে সাবরমতীর তীরের এই ম্যাঞ্চেস্টারে আজ এক গভীর অসুখ।
হোলসেল মার্কেট তথা টেক্সটাইল অ্যাসোসিয়েশন অব অমদাবাদের প্রেসিডেন্ট গৌরাঙ্গ ভগতের সামনে রজতপাত্রে গুটখা। মাঝে মধ্যেই যাতে খাবলা মারছেন সুপুরুষ বণিকটি। “মোটা ভাই, আজ এসে বুঝতে পারবেন না, এক বছর আগে এই সাম্রাজ্য শ্মশান হয়ে গিয়েছিল। নগদের ব্যাপারী এখানে বেশি। নোটবন্দির পরে যে যার পুরনো ধার মিটিয়েছে। প্রয়োজন না থাকলেও কাঁচা মাল কিনেছে পুরনো নোটে। মিউজিক্যাল চেয়ারের মতো ঘুরছিল পুরনো নোট। তার পরেই জিএসটির খাঁড়ার ঘা।”
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মশলাদার চা এবং এই গুটখা-চক্রে যোগ দিচ্ছেন বস্ত্র সাম্রাজ্যের অন্য প্রতিনিধিরাও। পরিকাঠামোহীন অবস্থাতেই যে ভাবে জিএসটি চালু হল— তাতে গত ৬০ বছরে কখনও উৎপাদন শুল্ক, ভ্যাট না দেওয়া এই ব্যবসায়ীদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে।
পটেল হরিভাই হাতিভাই-এর মালিক কুমার পটেল জানালেন, “গত সপ্তাহেই আমরা মোদীকে সাফ জানিয়ে দিয়েছি, যদি এক সপ্তাহের মধ্যে জিএসটি নিয়ে পদক্ষেপ না করা হয়, ভোটের বাক্সের নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। উনি আমাদের বলেছেন, চেষ্টা করবেন। তবে এ-ও বলেছেন, উনি ভগবান নন!” আর গৌরাঙ্গের কথায়, “বিশ বছর আমরা মোদীজির পাশে থেকেছি। সেটা ওঁর ভুলে গেলে চলবে না!”