মৃত মুকেশ পাণ্ডে। ছবি: সংগৃহীত।
কারও প্ররোচনা বা উস্কানি নয়, স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা করছেন। সুইসাইড নোটে এমনটাই লিখে গিয়েছিলেন বিহারের তরুণ আইএএস অফিসার মুকেশ পান্ডে। বৃহস্পতিবার রাতে উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের কাছে রেললাইন তাঁর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
২০১২-র বিহার ক্যাডারের আইএসএস অফিসার ছিলেন মুকেশ পান্ডে। গত ৪ অগস্ট বক্সারের জেলাশাসকের দায়িত্ব নেন। পুলিশ জানিয়েছে, আত্মহত্যার আগে এক আত্মীয়কে ফোন করে মুকেশ জানান, তিনি পশ্চিম দিল্লির জনকপুরী এলাকায় একটি পাঁচতারা হোটেলের ৭৪২ নম্বর ঘরে রয়েছেন। এবং ওই হোটেলের ১১ তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করছেন। ওই দিন রাতেই গাজিয়াবাদের কাছে রেললাইন থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। মুকেশের মৃত্যু নিয়ে ইতিমধ্যেই রহস্য দানা বাঁধতে শুরু করেছে। প্রশ্ন উঠছে, দিল্লি থেকে হঠাত্ কেন গাজিয়বাদে গেলেন তিনি? পুলিশ আপাতত সেই রহস্য ভেদ করার জন্য তদন্ত শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: কম বয়সে আত্মহত্যা-আতঙ্ক বাড়ছে শহরেও
তবে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ মনে করছে এটা আত্মহত্যারই ঘটনা। মুকেশের দেহের পাশ থেকে যে পরিচয়পত্র পাওয়া গিয়েছে, তা থেকেই তাঁকে সনাক্ত করা গিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাঁর পরিবারকেও খবর দেওয়া হয়েছে। পুলিশ আরও জানিয়েছে, তাঁর এক বন্ধুকে হোয়াটসঅ্যাপে আত্মহত্যার কথা জানান মুকেশ। সেই বন্ধুই পুলিশকে খবর দেন।
মুকেশের লেখা সেই সুইসাইড নোট। নিজস্ব চিত্র।
গাজিয়াবাদ জিআরপি-র সার্কেল অফিসার রণধীর সিংহ জানিয়েছেন, মুকেশের পরনে ছিল টি-শার্ট। ট্রেনের ধাক্কায় তাঁর দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। তাঁর পকেট থেকে পরিচয়পত্র এবং হোটেলের একটি কার্ড পাওয়া গিয়েছে। গাজিয়াবাদের জেলাশাসক মিনিস্থি এস জানান, মুকেশের দেহের পাশ থেকে হাতে লেখা একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গিয়েছে। সেই সুইসাইড নোটে লেখা ছিল— “আমি ২০১২-র বিহার ক্যাডারের আইএএস অফিসার। বর্তমানে বক্সারে পোস্টিং। স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা করছি। আমার মৃত্যুর পর আত্মীয়-পরিবারকে দয়া করে খবরটা পৌঁছে দেবেন।” ওই সুইসাইড নোটে কয়েকটি ফোন নম্বরও দেওয়া ছিল। পাশাপাশি তিনি এটাও লেখেন যে বিস্তারিত সুইসাইড নোটটি হোটেলে তাঁর ব্যাগে রাখা রয়েছে। হোটেল থেকে সেই ব্যাগও উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেই সুইসাইড নোটে ‘জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ’ কথাটাই লেখা ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: গুগ্ল ঘেঁটে প্রস্তুতি, সি-লিঙ্কে আত্মঘাতী
বক্সারের ডেপুটি ডেভেলপমেন্ট কমিশনার মবিন আলি আনসারি হিন্দুস্তান টাইমস কে জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে মুকেশের কাছ থেকে একটি এসএমএস পান তিনি। সেই মেসেজে তাঁকে জেলাশাসকের দায়িত্ব নেওয়ার কথা লেখেন। কাকার শরীর খারাপ, তাই দিল্লি যেতে হচ্ছে বলেও মুকেশ জানান। মবিন বলেন, “সকাল ৬টায় মেসেজটা দেখেই সার্কিট হাউজে পৌঁছই। কিন্তু সেখানে যাওয়া মাত্রই কেয়ারটেকার আমাকে মুকেশের অফিসিয়াল ফোন নম্বর দেন এবং সেই সঙ্গে জানান, মুকেশ ভোর ৪টে নাগাদ পটনার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন বিমান ধরবেন বলে।”
আদতে ছাপড়ার বাসিন্দা সুদেশ্বরবাবু ও গীতা পান্ডের সন্তান মুকেশ গুয়াহাটির ফ্যাকালটি স্কুল থেকে দশম শ্রেণী, বীরকুচির মারিয়া পাবলিক স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পরে মুকেশ কটন কলেজ থেকে ইংরাজিতে স্নাতক হন। ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য দিল্লি যান তিনি। প্রথমবার অকৃতকার্য হওয়ার পরে ২০১২ সালে ১৪ তম স্থান পান মুকেশ। উত্তর-পূর্বের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত কোনও ছাত্রের সেটাই সেরা র্যাঙ্কিং। ২০১৫ সালে যুগ্ম সচিবের র্যাঙ্কে উত্তীর্ণ হন মুকেশ। বলিয়ার এসডিএম, কাটিহারের ডিডিসি থাকার পরে জেলাশাসকের পদে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। মাত্র আড়াই মাসের সন্তান রয়েছে তাঁর। কেন মুকেশ এই চরম পদক্ষেপ করলেন- তা নিয়ে এখনও অন্ধকারে পরিবার।
আরও পড়ুন: ‘বিয়ের’ পরে দেহ উদ্ধার দুই স্কুলপড়ুয়ার
পরিবার সূত্রে খবর স্ত্রী আয়ুষির সঙ্গে তাঁর মনোমালিন্য চলছিল। স্ত্রী পটনার ব্যবসায়ীর কন্যা। শ্বশুর রাকেশকুমার সিংহ বিহারের বড় গাড়ি ব্যবসায়ী। দু’বছর আগে মহা ধুমধাম করে, বিরাট হোটেলে তাঁদের বিয়ে হয়। অনেক নেতা-ভিআইপি বিয়েতে আসেন। স্ত্রী বাপের বাড়িতেই থাকতেন। বাবার ব্যবসা সামলাতেন কন্যা। তাঁর বদমেজাজ নিয়েও অশান্তি চলছিল বলে পরিবার জানায়। সুইসাইড নোটে শ্বশুরের ফোন নম্বরও লিখে খবর দিতে বলে গিয়েছিলেন মুকেশবাবু।