CAA Protest

শাহিন বাগের প্রতিবাদীদের সঙ্গে ধর্নায় সিঙ্গুরের অমিতাও

৭০ দিন বসে থাকা মেহরুন্নিসাদের পাশে দাঁড়িয়ে অমিতা তাই বলছিলেন, ‘‘খাস রাজধানীতে গোষ্ঠী সংঘর্ষ কত লজ্জার, সরকার বোঝে?’’

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২০ ০১:৫৯
Share:

শাহিন বাগে সিঙ্গুরের অমিতা বাগ। নিজস্ব চিত্র

আজ ৫০ দিন শাহিন বাগের প্রতিবাদের প্যান্ডেলই তাঁর ঘর-বাড়ি। বাড়িতে দুশ্চিন্তা। ফিরে যাওয়ার ডাক আসছে কাজের জায়গা থেকেও। কিন্তু মাঝপথে লড়াই ছেড়ে ফেরার কথা ভাবতেই নারাজ সিঙ্গুরের অমিতা বাগ!

Advertisement

বরং ভিটেমাটি ছেড়ে অনিশ্চয়তার সঙ্গে ঘর করা এই বঙ্গতনয়া স্পষ্ট বলছেন, ‘‘এঁদের উপরে আক্রমণের আশঙ্কা এত বেড়ে গিয়েছে যে, চট করে ফেলে যাওয়া অসম্ভব।’’

সংঘর্ষ, হামলা নিয়ে হাজারো গুজব রোজকার রুটিন। তার উপরে এক কট্টর সংগঠনের ‘হুমকিতে’ গত রাতে এ চত্বরে ১৪৪ ধারা জারি হয়। দুশ্চিন্তা হয় না? মুসলিম মহিলারা না-হয় বলছেন যে, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়াতেই এমন নাছোড় আন্দোলন...। টানা প্রায় ৭০ দিন শাহিন বাগে ঘাঁটি গেড়ে থাকা সিমরনজিৎ সিংহের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘কাল যে শিখদের দেশছাড়া করতেও আইন আসবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?’’ আর আদতে ওড়িশার কিন্তু দীর্ঘ দিন দিল্লিপ্রবাসী প্রকাশ দেবীর উত্তর, ‘‘অসমে কাগজ দিয়েও এনআরসি-তে নাম ওঠেনি প্রায় ১২ লক্ষ হিন্দুর। অমিত শাহের প্রতিশ্রুতি, হিন্দুরা ধর্মীয় ভাবে অত্যাচারিত হয়ে পাকিস্তান, বাংলাদেশ বা আফগানিস্তান থেকে এসেছি বললেও, নাগরিকত্ব মিলবে সিএএ মারফত। অমন ভিক্ষার নাগরিকত্ব নিতে হবে কেন? এত দিন দেশে থাকার পরে কেন মিথ্যে বলতে হবে শুধু কাগজ না-থাকলে?’’ অমিতা, সিমরনজিৎ, প্রকাশদের বক্তব্য, সরকার কৌশলে প্রায় সমস্ত সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলনের গায়ে ‘মুসলিম প্রতিবাদের’ তকমা সেঁটে দিলেও আদতে নাগরিকত্ব প্রমাণের কাগজ জোগাড়ে দৌড়বে সারা দেশই।

Advertisement

ক্ষোভের সাত কাহন

• প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথম রাতেই কড়া হাতে মোকাবিলার নির্দেশ দিলেন না কেন?

• টুইটে একটা বার্তা দিতে কেন তিন দিন লেগে গেল প্রধানমন্ত্রীর?

• শিখ দাঙ্গায় অভিযুক্ত কংগ্রেস নেতাদের নিয়মিত বেঁধে বিজেপি। সংঘর্ষে ইন্ধন জোগানো নিজেদের নেতাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়নি তারা?

• এই তা হলে প্রধানমন্ত্রীর ‘সব কা বিশ্বাস’? সংসদে দেওয়া প্রতিশ্রুতিও মিথ্যে?

• পুলিশ কেজরীবালের হাতে নেই। তা বলে সংঘর্ষ থামাতে আপ নেতাদেরও কেন দেখা গেল না কেন?

• চাকরি নেই। লাফিয়ে বেড়েছে জিনিসপত্রের দাম। এ সব থেকে নজর ঘোরাতেই কি সিএএ
আর সংঘর্ষ?

• শাহিন বাগকে ‘বদনাম’ করে ভোটে জেতার চেষ্টা ভেস্তে গিয়েছে। এ বার গোষ্ঠী সংঘর্ষের দায়ও শান্তিপূর্ণ ভাবে ৮০ দিন আন্দোলন চালানো
শাহিন বাগেরই?

৭০ দিন বসে থাকা মেহরুন্নিসাদের পাশে দাঁড়িয়ে অমিতা তাই বলছিলেন, ‘‘খাস রাজধানীতে গোষ্ঠী সংঘর্ষ কত লজ্জার, সরকার বোঝে?’’ তাঁর অভিযোগ, শিক্ষা-স্বাস্থ্যে নজর না-দিয়ে দেশকে অন্য বিষয়ে তোলপাড় করে দেওয়া আসলে সরকারের কৌশল। সিএএ নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম এক লাফে দেড়শো টাকা বাড়াতে সুবিধা হয়েছে। প্রশ্ন কম উঠছে কাজের সুযোগ তৈরি না-হওয়া নিয়ে। এখন ধর্মের নামে বিভেদ খাড়া করতে পারলে, আড়ালে চলে যাবে বাকি বিষয়ও। অমিতার কথায়, ‘‘কাগজ যে সবার কাছে নেই, তা সরকার জানে বলেই ভয় দেখাতে চাইছে। রুখে না-দাঁড়িয়ে উপায় কী?’’

তুলির টানে লেখা হিন্দি পোস্টারের সঙ্গে চোখে পড়ল বাংলায় লেখা পোস্টারও— ‘একই বৃন্তে দু’টি কুসুম হিন্দু-মুসলমান।’ এখানে কেউ বাংলা বোঝেন? অমিতার উত্তর, ‘‘এক জন বুঝলেও লেখা জরুরি। বোঝানো দরকার যে, বিপদ কতটা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন