রাজ্যে ফোন পিএমও-র, আমলা চেয়ে ধমক দিল্লির

সকাল ৯টায় ফোন এল প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে— অবিলম্বে লোক পাঠান দিল্লিতে। অনুরোধ নয়, বেশ কড়া সুরেই  আজ কথাগুলো জানিয়ে দেওয়া হল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধিদের।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৮ ০৫:০৫
Share:

সকাল ৯টায় ফোন এল প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে— অবিলম্বে লোক পাঠান দিল্লিতে। অনুরোধ নয়, বেশ কড়া সুরেই আজ কথাগুলো জানিয়ে দেওয়া হল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধিদের।

Advertisement

কেন্দ্রের বিভিন্ন দফতরের সুষ্ঠু কাজের স্বার্থে দিল্লিতে কয়েক জন আইএএস অফিসার দরকার। বিভিন্ন রাজ্য থেকেই এ জন্য কিছু নিয়ম মেনে অফিসার পাঠানো হয় দিল্লিতে। ঘটনা হল, এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের ৭৪ জন আইএএস অফিসারের দিল্লিতে কেন্দ্রের বিভিন্ন দফতরে থাকা উচিত। অথচ আছেন মাত্র ৯ জন! তার মধ্যে ৪ জন সচিব পর্যায়ের। আর সে কারণেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তরফে বার্তা পাঠানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছে।

পশ্চিমবঙ্গের তরফে এত কম আমলা থাকার বিষয়টিতে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী। তাঁর দফতর সূত্রের বক্তব্য, বহু দিন ধরেই অফিসার পাঠানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গকে বলা হচ্ছে। অথচ রাজ্য কর্ণপাত করছে না। সম্প্রতি অতিরিক্ত প্রধান সচিব প্রমোদ কুমার মিশ্রকে ডেকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অফিসারের এই ঘাটতি অবিলম্বে পূরণ করতে হবে। এর পরেই প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের কর্তারা ফোন করেন রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের। চাপের মুখে পড়ে যান মুখ্যসচিব এবং পার্সোনেল সচিব প্রভাত মিশ্র।

Advertisement

একটি সূত্রের দাবি, কেন্দ্রের প্রতিনিধি ফোনে বলেন, আপনারা কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন? তার পরে রাজ্য সরকারের অফিসারেরা দিল্লি আসবেন?

দেশে আইএএস অফিসারের সংখ্যা হওয়া উচিত ৬৫০০। কিন্তু এই সংখ্যা এখন ৫০০৪। অর্থাৎ ১৪৯৬ জন অফিসারের ঘাটতি আছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ জানান, বিহারে আইএএস অফিসার আছেন ২৪৩ জন। সংখ্যার বিচারে ১২৮ জনের ঘাটতি রয়েছে। তবু তারা ৪১ জনকে দিল্লি পাঠিয়েছে। সম্প্রতি আইএএস অফিসারদের সংগঠন প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়ে অভিযোগ করেছে, অফিসার পাঠানোর ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ সব চেয়ে বেশি অনমনীয় মনোভাব নিয়েছে। এখনই কিছু অফিসারকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে দিল্লি পাঠাতে হবে।

বাংলায় আইএএস অফিসার আছেন ৩৫৯ জন। ঘাটতি ২৭৭ জনের। রাজ্য সরকার এর আগে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিল, আমাদের নিজেদেরই আরও অফিসার প্রয়োজন। আমরা কী ভাবে দিল্লিতে অফিসার পাঠাব?

প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রে আরও অভিযোগ, অফিসার-দম্পতিদের ব্যাপারে অন্তত ৫টি ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না, যা কেন্দ্রীয় আইনের পরিপন্থী। স্বামী বা স্ত্রী অন্য রাজ্যে অন্য ক্যাডারে হলে তাঁদের একই রাজ্যে রাখার নিয়ম। কিন্তু ওই সব ক্ষেত্রে সেটা মানা হচ্ছে না |

আগে প্রতি রাজ্য থেকে জেলাভিত্তিক আমলার সংখ্যা স্থির হত। যেমন উত্তরপ্রদেশে জেলার সংখ্যা বেশি, তাই তাদের আমলার সংখ্যাও বেশি। অথচ পশ্চিমবঙ্গের জেলার সংখ্যা কম। এ ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্যের সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর দফতর এখন এই পদ্ধতিটাই তুলে দিয়েছে।

আসলে প্রধানমন্ত্রী এখন দফতর ধরে ধরে কাজের পর্যালোচনা করছেন। প্রায় সব দফতরই বলছে, আমলার ঘাটতি, তাই দীর্ঘসূত্রিতা বাড়ছে। সে কারণেই রাজ্যগুলির থেকে আমলা চাইছেন প্রধানমন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন