স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে না ক্যানসার আক্রান্ত

মারণ-রোগের চিকিৎসার জন্য আবাসিক স্কুল ছাড়তে হয়েছিল বছর পনেরোর কিশোরকে। কয়েক মাস বন্ধ ছিল পড়াশোনা। মুখ্যমন্ত্রীর তহবিল থেকে সাহায্যে পেয়ে ভিন্‌রাজ্যের হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে ফেরার পর আরও জটিল সমস্যায় পড়েছে ক্যানসারে আক্রান্ত সিদ্ধার্থ পাল। নবম শ্রেণিতে নতুন পড়ুয়া ভর্তির নিয়ম না থাকার ‘নিয়মে’ কেন্দ্রীয় কোনও বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পাচ্ছে না সে! শরীরের এই পরিস্থিতিতে ফিরে যেতে পারছে না পুরনো আবাসিক স্কুলেও।

Advertisement

উত্তম সাহা

শিলচর শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৫
Share:

সিদ্ধার্থ পাল।— নিজস্ব চিত্র।

মারণ-রোগের চিকিৎসার জন্য আবাসিক স্কুল ছাড়তে হয়েছিল বছর পনেরোর কিশোরকে। কয়েক মাস বন্ধ ছিল পড়াশোনা। মুখ্যমন্ত্রীর তহবিল থেকে সাহায্যে পেয়ে ভিন্‌রাজ্যের হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে ফেরার পর আরও জটিল সমস্যায় পড়েছে ক্যানসারে আক্রান্ত সিদ্ধার্থ পাল।

Advertisement

নবম শ্রেণিতে নতুন পড়ুয়া ভর্তির নিয়ম না থাকার ‘নিয়মে’ কেন্দ্রীয় কোনও বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পাচ্ছে না সে! শরীরের এই পরিস্থিতিতে ফিরে যেতে পারছে না পুরনো আবাসিক স্কুলেও।

অর্থসঙ্কটের জেরে ছেলেকে সিবিএসসি বোর্ডের অধীনে বেসরকারি কোনও স্কুলে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গতি নেই সিদ্ধার্থের বাবা সুরজিৎবাবুর। শুধু তা-ই নয়, ছেলের চিকিৎসার জন্য দৌঁড়ঝাপ করতে গিয়ে তিনি হারিয়েছেন ফুটপাতে ঝুঠো চুড়ি বিক্রির তাঁর ছোট্ট দোকানের জায়গাটাও!

Advertisement

২০১৩ সালে দুর্গাপুজোর আগে গলা ফুলে গিয়েছিল সিদ্ধার্থর। তখন সে জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। চিন্তায় পড়েন তারা মা-বাবা। প্রথমে হোমিওপ্যাথি এক চিকিৎসকের কাছে ছেলেকে নিয়ে যান। তিনি টনসিলের ওষুধ দেন। সমস্যা না কমায় তাঁরা যান শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ঘোরেন বেসরকারি হাসপাতালেও। সিদ্ধার্থের পরিজনদের অভিযোগ, এক চিকিৎসক বলেন— থাইরয়েডে সমস্যা। অন্য জন তা মানতে নারাজ। এর পর তাঁরা সিদ্ধার্থকে ভেলোরে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

হিরণপ্রভা দেব শিশুমন্দিরে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার পর জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল সিদ্ধার্থ। সেখানেই থাকা-খাওয়া, পড়াশোনা। অসুস্থ হওয়ার পর ২০১৩ সালের নভেম্বরে স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয় তার। তবে, সেখানকার অধ্যক্ষ তাকে ফাইনাল পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেন। পাশ করে নবম শ্রেণিতে ওঠে সিদ্ধার্থ। কিন্তু ক্যানসারে আক্রান্ত

ছেলেকে আর আবাসিক স্কুলে রাখার ভরসা পাননি সুরজিৎবাবু। ‘ট্রান্সফার সার্টিফিকেট’ দিয়ে তাকে সেখান থেকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।

সুরজিৎবাবু জানান, সেই বছর ২১ নভেম্বর ভেলোরের হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, ক্যানসার হয়েছে সিদ্ধার্থর। তার সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ৭০ শতাংশ। তবে তিন বছর হাসপাতালেই তাকে থাকতে হবে। খরচ হবে ৫-৬ লক্ষ টাকা।

এত টাকা কোথায় পাবেন, চিন্তায় পড়েন সুরজিৎবাবু। ফুটপাতের দোকানে কোনও রকমে সংসার চালানোর খরচ ওঠে। ভাড়াঘরে স্ত্রী, দুই ছেলেকে নিয়ে চার জনের পরিবার। বড় ছেলে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বি-ফার্মার ছাত্র।

খবর পেয়ে পাশে দাঁড়ান অনেকেই। এগিয়ে আসে ‘অরুণোদয় সংঘ’ ও ‘কল্পতরু’ নামে দু’টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার লোকেরাও। মুখ্যমন্ত্রীর ক্যানসার চিকিৎসা তহবিল থেকে সিদ্ধার্থের জন্য সাহায্যের ব্যবস্থা করেন। প্রথম পর্যায়ে দু’বার ভেলোরে চিকিৎসার করিয়ে ফেরার পর তাদের সামনে নতুন সমস্যা হাজির।

সেটা সিদ্ধার্থের পড়াশোনা নিয়ে। পুরনো আবাসিক স্কুলে নিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। সেখানে সিবিএসই পাঠ্যক্রমে ছিল সিদ্ধার্থ। তাই অসম সরকারের পাঠ্যক্রমে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। আর্থিক সমস্যায় বেসরকারি স্কুলে ছেলেকে পড়ানোরও সাধ্য নেই সুরজিৎবাবুর। এক মাত্র উপায় কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়গুলি। কিন্তু নিয়মের ‘ফাঁসের’ কথা জানিয়ে সেখানকার কর্তৃপক্ষ সিদ্ধার্থকে ভর্তি করতে তাঁদের অক্ষমতার কথা জানান।

এ বিষয়ে শিলচর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডি এন ঝা বলেন, ‘‘আমাদের অনেক নিয়ম মেনে চলতে হয়। ক্যানসার রোগীর জন্য আলাদা ব্যবস্থা এখানে নেই। আমরা কী করতে পারি!’ মাসিমপুর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আর কে ব্যাস বলেন, ‘‘কোনও কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের ছাত্র হলেও সমস্যা ছিল না। আমার এখানে ভর্তি নিতে পারতাম। কিন্তু অন্য স্কুলের কাউকে আমি এ ভাবে ভর্তি করতে পারি না।’’

তবে কি আর পড়াশোনা করতে পারবে না সে? এই চিন্তা জুড়েছে সিদ্ধার্থের মনে। পরিচিত এক জন গত কাল তাঁকে স্কুলব্যাগ উপহার দিয়েছিলেন। তা হাতে নিয়ে সিদ্ধার্থ বলল, ‘‘এই ব্যাগ নিয়ে আর কোনও দিন কী স্কুলে যেতে পারব? কেউ তো আমাকে ভর্তি নিতেই রাজি হচ্ছে না এখনও।’’

সেই উত্তরই খুঁজছে গোটা পাল পরিবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন