নিতিন সন্দেসরা
৫৭০০ কোটি টাকা ব্যাঙ্ক জালিয়াতির পান্ডা, গুজরাতের স্টারলিং বায়োটেক-এর মালিক নিতিন সন্দেসরা এখন ঠিক কোন দেশে লুকিয়ে রয়েছেন, তা নিয়ে ধন্দে সিবিআই ও ইডি। বিজয় মাল্য, ললিত মোদী, নীরব মোদী, মেহুল চোক্সীর মতো নিতিনও যে ব্যাঙ্ক জালিয়াতির পরে এ দেশ ছেড়েছেন, সে ব্যাপারে অনেক আগে থেকেই নিশ্চিত তদন্তকারীরা। তবে এঁদের অধিকাংশই কোথায় রয়েছেন, তা নিয়ে নির্দিষ্ট খবর থাকলেও সন্দেসরা পরিবারকে নিয়ে একেবারেই অন্ধকারে সিবিআই ও ইডি-র অফিসারেরা। এরই মধ্যে নিতিনের নাইজেরিয়াতে লুকিয়ে থাকার সম্ভাবনা নিয়ে খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পেতেই নরেন্দ্র মোদী সরকারের অস্বস্তি বেড়েছে। কারণ, আফ্রিকার ওই দেশটির সঙ্গে ভারতের কোনও প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই। এমনকি, পারস্পরিক আইনি সহযোগিতার সমঝোতাও নেই। ফলে নাইজেরিয়ায় ঘাঁটি গাড়লে নিতিনদের ভারতে ফেরানো অনেক কঠিন হতে পারে।
অগস্টের মাঝামাঝি অবশ্য খবর ছিল, ব্যাঙ্ক জালিয়াতিতে অভিযুক্ত ওই ব্যবসায়ীকে আটক করেছে দুবাইয়ের পুলিশ। ভারতীয় তদন্তকারীরা এতে আশার আলো দেখলেও শেষ পর্যন্ত জানা যায়, ধরা পড়েননি নিতিন। সিবিআইয়ের একটি সূত্র আজ জানিয়েছে, নিতিন সন্দেসরা সংযুক্ত আরব আমিরশাহি কিংবা নাইজেরিয়া— কোথায় লুকিয়েছেন, তা জানা যাচ্ছে না। ওই ব্যবসায়ীই শুধু নন, সংবাদ মাধ্যমে খবর, নিতিনের ভাই চেতন, বৌদি দীপ্তিবেনও নাইজেরিয়ায় ঘাঁটি গেড়েছেন। বডোদরার স্টারলিং বায়োটেক কেলেঙ্কারিতে ওই তিন জনের বিরুদ্ধেই জালিয়াতির অভিযোগ এনেছে সিবিআই ও ইডি।
মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাতের বডোদরার স্টারলিং বায়োটেক ২০০৪ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ব্যাঙ্ক থেকে ৫৭০০ কোটি টাকা জালিয়াতি করেছে বলে দাবি ইডি-র। এই মামলায় গগন ধাওয়ান-সহ বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইডি জানিয়েছে, প্রায় ৪৭০৩ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্তও করা হয়েছে।
ভারতে আর্থিক কেলেঙ্কারি করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, এমন ব্যক্তিদের একটি তালিকা গত জুলাই মাসে লোকসভায় পেশ করেছিল মোদী সরকার। তাতে নাম ছিল নিতিন, চেতন ও দীপ্তিবেনের। তখন থেকেই অবশ্য খোঁজ মিলছে না তাঁদের।
চোক্সীর মতো অনেকেই কেলেঙ্কারি করে ভারত ছাড়ার পরে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন। পরে তাঁদের খবর পেয়েছে সিবিআই। এত দিন তদন্তকারী সংস্থার ধারণা ছিল, নিতিন সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতেই রয়েছেন। কিন্তু সেখান থেকে তিনি অন্য কোথাও চলে গিয়েছেন কিনা, তা নিয়ে সিবিআইয়ের কাছে এখন কোনও খবর নেই। একটি সূত্র জানাচ্ছে, ভারত সরকার এ বার সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সরকারের কাছে জানতে চাইবে, নিতিনকে সেখানে আটক করা হয়েছিল কিনা, কিংবা সে দেশে তাঁকে দেখা গিয়েছিল কিনা। সন্দেসরা পরিবারকে ধরতে ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিস জারি করানোরও চেষ্টা চলছে। তদন্তকারীদের কাছে খবর এসেছে, নিতিন নাকি একসঙ্গে তিনটি পাসপোর্ট নিয়ে সফর করছিলেন। ফলে জটিলতা আরও বেড়েছে। এরই মধ্যে গুজরাতি নিতিনকে নিয়ে মোদীকে নিশানা করেছে বিরোধীরা। কংগ্রেস বলেছে, ‘‘ব্যাঙ্ক জালিয়াতি করে দেশ ছেড়ে পালালেন গুজরাতি ব্যবসায়ী। আর চৌকিদার তখন ঘুমিয়ে ছিলেন।’’ আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণও মোদীকে কটাক্ষ করে টুইট করেছেন, ‘‘চৌকিদার একের পর এক প্রকল্প নিয়ে দেশকে বিভ্রান্ত করছেন।... আর এক গুজরাতি ব্যবসায়ী নিতিন সন্দেসরা ২০ হাজার কোটিরও বেশি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেলেন!’’