National News

লালু-চিদম্বরম একই দিনে বিদ্ধ: বিরোধীরা বলছেন ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’

বিরোধী শিবিরকে ঘিরে ক্রমশ চেপে বসছে তদন্তের ফাঁস। সপ্তাহখানেক আগেই পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে নতুন করে বিচারের নির্দেশ হয়েছে বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) প্রধান লালুপ্রসাদ যাদবের বিরুদ্ধে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৭ ১৭:১৫
Share:

বিজেপি-র বিরুদ্ধে যতগুলি কণ্ঠস্বর মুখর, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে কাজে লাগিয়ে সেই সব ক’টি কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার চেষ্টা চলছে। অভিযোগ বিরোধীদের। —ফাইল চিত্র।

বিরোধী শিবিরকে ঘিরে ক্রমশ চেপে বসছে তদন্তের ফাঁস। সপ্তাহখানেক আগেই পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে নতুন করে বিচারের নির্দেশ হয়েছে বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) প্রধান লালুপ্রসাদ যাদবের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার বেনামি জমি কেলেঙ্কারির অভিযোগে লালু-ঘনিষ্ঠদের অফিস, বাসভবন-সহ ২২টি জায়গায় একসঙ্গে হানা দিলেন আয়কর বিভাগের কর্তারা। একই দিনে সিবিআই হানার মুখে পড়েছেন দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা কংগ্রেস সাংসদ পি চিদম্বরম এবং তাঁর ছেলে কার্তি চিদম্বরম। বিরোধী পক্ষের সব কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার, সেই কারণেই দেশ জুড়ে এই ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’— মন্তব্য চিদম্বরমের।

Advertisement

এ দিন সকালে বেনামি জমি তদন্তে দিল্লি, গুরুগ্রাম এবং রেওয়ারির বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছে আয়কর বিভাগ। বেনামে ১০০০ কোটি টাকার জমি কেনাবেচা হয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে বলে আয়কর বিভাগের দাবি। লালুপ্রসাদ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা এই বেনামি লেনদেনের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ। খুব নামী কয়েক জন ব্যবসায়ী এবং রিয়েল এস্টেট এজেন্টের বাড়ি ও অফিসে তল্লাশি চালানো হয়েছে। আয়কর বিভাগের অন্তত ১০০ জন প্রতিনিধি পুলিশকে নিয়ে একসঙ্গে ২২টি জায়গায় এ দিন তল্লাশি চালিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

বিহার বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা তথা কেন্দ্রীয়মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের অভিযোগ, লালুপ্রসাদ যাদব রেলমন্ত্রী থাকাকালীন বেনামে ওই জমি লেনদেন করেছিলেন। যে সব সংস্থার নামে জমির লেনদেন হয়েছিল, সেই সংস্থাগুলি আসলে লালুর পরিবারের সদস্যদেরই, দাবি রবিশঙ্কর প্রসাদের। তিনি আরও জানিয়েছেন, রেলমন্ত্রী থাকাকালীন দিল্লিতে লালুপ্রসাদ যাদবের যে সরকারি বাসভবন ছিল, বেনামি জমি লেনদেনে জড়িত সংস্থাগুলির মালিকদের ঠিকানাও সেই বাসভবনই।

Advertisement

৯০০ কোটি টাকার পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় এক বার জেল খেটে আসার পরে সম্প্রতি ফের নতুন করে ওই মামলায় বিচারের সম্মুখীন হয়েছেন লালু। লালু বিহারের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন গৃহপালিত পশুর খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহের নামে পশুপালন দফতরের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলার ট্রেজারি থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ লুঠ হয়েছিল বলে অভিযোগ। চাইবাসা ট্রেজারি মামলায় লালু দোষী সাব্যস্তও হন। তাঁকে আদালত পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়। সম্প্রতি ওই দেওঘর ট্রেজারি মামলাতেও অভিযুক্ত হয়েছেন লালু, সেই মামলাতেও তাঁর বিরুদ্ধে বিচার হবে বলে দেশের সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে। সেই রায় লালুপ্রসাদের জন্য নিঃসন্দেহে বড় ধাক্কা ছিল। তার সপ্তাহখানেকের মাথায় ফের লালুপ্রসাদ বিপাকে। এ বার ১০০০ কোটি টাকার জমি কেলেঙ্কারির অভিযোগ।

চিদম্বরমের চেন্নাইয়ের বাংলো। এখানেই মঙ্গলবার হানা দেয় সিবিআই। ছবি: পিটিআই।

বিভিন্ন কেলেঙ্কারির অভিযোগে লালুপ্রসাদকে ঘিরে ধরার এই চেষ্টা আসলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, বলছে বিরোধী দলগুলি। শুধু লালুপ্রসাদ নন, প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমকেও ঘিরে ফেলার চেষ্টা শুরু হয়েছে বলে কংগ্রেসের দাবি। চিদম্বরম দেশের অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন নিয়ম বহির্ভূত ভাবে একটি সংস্থাকে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ পেতে সাহায্য করেছিলেন বলে অভিযোগ। সেই অভিযোগের তদন্তেই মঙ্গলবার চিদম্বরম ও তাঁর ছেলে কার্তির বাড়ি ও অফিসে হানা দেয় সিবিআই। চিদম্বরম ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে যে সংস্থাকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, সেই সংস্থার দফতরেও তল্লাশি হয়েছে। সব মিলিয়ে দিল্লি, গুরুগ্রাম, মুম্বই ও চেন্নাইয়ে ১৪টি জায়গায় এ দিন সিবিআই হানা হয়েছে।

চিদম্বরম এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘সরকার আমাকে নীরব করে দিতে চাইছে। চাইছে আমার লেখা বন্ধ করতে। ঠিক যেমন ভাবে, অন্য দলের রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক এবং সামাজিক সংগঠনগুলির মুখ বন্ধ করতে চাইছে। তবে, আমি মুখ এবং লেখা কোনওটাই বন্ধ করব না।’’

আরও পড়ুন: চিদম্বরমের বাড়ি-সহ দেশ জুড়ে প্রায় ১৪ জায়গায় সিবিআই হানা

দেশ জুড়ে যখন গেরুয়া ঝড়, তখন বিহারে লালুপ্রসাদ, নীতীশ কুমার এবং কংগ্রেস হাত মিলিয়ে থামিয়ে দিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর বিজয় রথ। ২০১৫-র বিধানসভা নির্বাচনে বিহারে বিপুল জয় পেয়েছিল মহাজোট। এখনও জোট সরকারই চলছে বিহারে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এখন লালু ও কংগ্রেসের হাত ছেড়ে বিজেপির দিকে ঝুঁকতে আগ্রহী বলে জল্পনা রয়েছে। অর্থাৎ বিহারে জোরদার বিজেপি-বিরোধী মুখ এখন একমাত্র লালুই। অন্য দিকে সংসদে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রধান কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছেন পি চিদম্বরম। ২০১৪ সাল থেকে তিনি সংসদে ছিলেন না। কিছু দিন আগে তাঁকে মহারাষ্ট্র থেকে জিতিয়ে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছে কংগ্রেস। প্রবীণ এবং অভিজ্ঞ রাজনীতিক চিদম্বরম সংসদে ফিরেই বিরোধী শিবিরের মধ্যমণি হয়ে উঠেছেন। কংগ্রেসের দাবি, চিদম্বরমের তোলা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না সরকার। তাই বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে তাঁর মুখ বন্ধ করার চেষ্টা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন