ঘুষকাণ্ডে প্রধান অভিযুক্ত হিসাবে নাম উঠে এল রাকেশ আস্থানার। —ফাইল চিত্র।
ঘুষকাণ্ডে আরও বিপাকে সিবিআইয়ের বিশেষ ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানা। পদাধিকার বলে সিবিআই’তে দু’নম্বরে রয়েছেন তিনি। কিন্তু, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিবিআই) গত মঙ্গলবার একটি এফআইআরে তাঁকে প্রধান অভিযুক্ত হিসাবে উল্লেখ করেছে। রাকেশ আস্থানার পাশাপাশি ওই এফআইআরে র’এর বিশেষ ডিরেক্টর সমন্ত কুমার গয়ালেরও নাম করেছে সিবিআই। যদিও তাঁকে ওই মামলায় এখনও অভিযুক্ত হিসাবে উল্লেখ করা হয়নি।
আস্থানার বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের অভিযোগ, মইন কুরেশি দুর্নীতিকাণ্ডে এক ব্যবসায়ীর থেকে ঘুষ চেয়েছিলেন তিনি। ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষও নেন। মইন কুরেশি মামলায় বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-এর নেতৃত্বে ছিলেন আস্থানা। সূত্রের খবর, আস্থানার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণ জমা দিয়েছে সিবিআই। তার মধ্যে রয়েছে, টেলিফোনে আড়ি পেতে পাওয়া কথোপকথনের অংশবিশেষ, হোয়াট্সঅ্যাপ মেসেজ এবং ঘুষের টাকা কোন পথে হাতবদল হয়েছে তার সূত্র। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৬৪ ধারায় একটি বিবৃতি দিয়ে ওই তথ্যপ্রমাণ জমা দেওয়া হয়েছে। তবে এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের প্রশ্নের কোনও উত্তর দেননি আস্থানা।
গত ২১ সেপ্টেম্বর সিবিআই দাবি করে, আস্থানার বিরুদ্ধে ছ’টি দুর্নীতি মামলায় তদন্ত করা হচ্ছে বলে কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনকে জানানো হয়েছে। আস্থানার বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের আরও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তাদের দাবি, সংস্থার ডিরেক্টর অলোক বর্মার ভাবমূর্তিতে কালিমা লেপন করতে উদ্যত হয়েছেন আস্থানা। এমনকি, বিভিন্ন সিবিআই আধিকারিকের উপর তিনি চাপ সৃষ্টি করছেন যাতে তাঁরা অলোক বর্মার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনের কাছে নালিশ করেন। এই অভিযোগের বিরুদ্ধে আস্থানাও পাল্টা দাবি করেছেন। এ নিয়ে অলোক বর্মার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে একটি চিঠিও লিখেছেন তিনি। তাতে তাঁর দাবি, বিভিন্ন তদন্তে নাক গলাচ্ছেন অলোক বর্মা। সেই সঙ্গে তাঁর কাজকর্মেও বাধার সৃষ্টি করছেন। এমনকি, তাঁর ভাবমূর্তিও নষ্ট করছেন।
আরও পড়ুন
মহাকাল মন্দির উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিল লস্কর-ই-তৈবা
মইন কুরেশি দুর্নীতি মামলায় মনোজ প্রসাদ নামে দুবাইয়ের এক বাসিন্দা তথা মধ্যস্থতাকারীকে গ্রেফতারের পরেই আস্থানার বিরুদ্ধে তদন্তে নামে সিবিআই। সানা সতীশ নামে হায়দরাবাদের এক ব্যবসায়ীর অভিযোগের ভিত্তিতে মনোজকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ওই মামলায় সিবিআইয়ের বিশেষ তদন্তকারী দলের নেতৃত্বে ছিলেন আস্থানা। ২০১৪-র ফেব্রুয়ারিতে আয়কর দফতরের অভিযানে মইন কুরেশির ব্ল্যাকবেরি মেসেঞ্জার থেকে বেশ কিছু মেসেজ উদ্ধার হয়। তাতে দেখা যায়, প্রাক্তন সিবিআই ডিরেক্টর এ পি সিংহের সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছিল মইনের। ওই ঘটনার প্রকাশ্যে আসার পরই ইস্তফা দেন এ পি সিংহ। এর তিন বছর পর ২০১৭-তে একটি মামলা দায়ের করে সিবিআই। আস্থানার নেতৃত্বে ওই তদন্তের দায়িত্বে ছিল সিট।
আরও পড়ুন
‘একটি পরিবারকে তুলে ধরতেই নেতাজিকে উপেক্ষা করেছে কংগ্রেস’
গত ৪ অক্টোবর ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে একটি বয়ানে সানা সতীশ দাবি করেন, ওই মামলায় যাতে তাঁকে না জড়ানো হয় তার জন্য রাকেশ আস্থানা, মনোজ প্রসাদ এবং মনোজের আত্মীয় সোমেশ শ্রীবাস্তবকে তিন কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছেন। ২০১৭-র ডিসেম্বর থেকে দশ মাস ধরে ওই টাকা দিয়েছিলেন তিনি। এমনকি, আরও টাকা দেওয়ার জন্য সিবিআই আধিকারিকেরা তাঁকে হেনস্থা করেছেন। এ ছাড়া, সিট-এর প্রশ্নের মুখে যাতে তাঁকে না পড়তে হয় সে জন্য গত ৯ অক্টোবর মনোজ প্রসাদের নির্দেশে আরও এক ব্যক্তিকে ২৫ লক্ষ টাকা দেন তিনি। এর পর ১৬ অক্টোবর দুবাই থেকে দিল্লিতে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা নিতে আসেন মনোজ। সে সময়ই তাঁকে গ্রেফতার করে সিবিআই। সিবিআইয়ের এফআইআরে দাবি করা হয়েছে, মনোজ এবং সোমেশের বিশেষ পরিচিত ছিলেন র’এর বিশেষ ডিরেক্টর সমন্ত কুমার গয়াল। তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও ছিল তাঁর।
(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরা বাংলা খবর পেতে পড়ুন আমাদের দেশ বিভাগ।)