জম্মু ও কাশ্মীরের নওগাম থানায় বিস্ফোরণের ছবি। ছবি: এক্স।
রাতের নৈঃশব্দ্য ভেদ করে আচমকা তীব্র কানাফাটা শব্দ। থানার ভিতর আগুনের হলকা, ধ্বংসস্তূপ আর ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা দেহাংশ। জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরের নওগাম থানার ঘটনায় যে সমস্ত ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে এই দৃশ্যই উঠে আসছে। থানার সামনের বাড়ি থেকে একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ উদ্ধার করা হয়েছে। তাতে ধরা পড়েছে বিস্ফোরণের মুহূর্ত। এ ছাড়া, তার পরের বেশ কিছু ছবি এবং ভিডিয়োও সমাজমাধ্যমে ভাইরাল। এই সমস্ত ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম।
নওগাম থানায় প্রচুর পরিমাণে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট রাখা হয়েছিল। ফরিদাবাদ থেকে বাজেয়াপ্ত করা বিস্ফোরক পদার্থের পরীক্ষা চলছিল ওই থানার ভিতরে। সেখানেই শুক্রবার রাতে আচমকা বিস্ফোরণ ঘটে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, বিস্ফোরণে অন্তত ন’জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম ২৭ জন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই পুলিশ ফরেন্সিক আধিকারিক। একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, থানার মধ্যে আচমকা আগুন জ্বলে উঠল। বিস্ফোরণের অভিঘাতে থানার বন্ধ জানলা এক বার খুলে আবার বন্ধ হয়ে গেল। আরও একটি ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, ধোঁয়ায় ঢেকে রয়েছে থানা সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকা। চারদিকে ধ্বংসস্তূপ। তার মাঝে দাঁড়িয়ে আগুন নেবানোর চেষ্টা করছেন দমকলকর্মীরা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, নওগাম থানার ১৫ কিলোমিটার দূর থেকেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছে। বিস্ফোরণের অভিঘাতে থানা থেকে মৃতদেহ এবং দেহাংশ ছিটকে গিয়েছে দূরে। ৩০০ মিটার দূর থেকেও নিহত পুলিশকর্মীদের দেহাংশ মিলেছে। ধ্বংসস্তূপের নীচে কিছু দেহাংশ চাপা পড়েছিল। তা উদ্ধার করতে বেগ পেতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের।
কাশ্মীরের ডিজিপি বলেন, ‘‘শুক্রবার রাত ১১টা ২০ মিনিটে বিস্ফোরক পদার্থের নমুনা পরীক্ষার সময় নওগাম থানায় বিস্ফোরণ ঘটে। এর নেপথ্য অন্য কোনও কারণ নেই। ঘটনায় ন’জনের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশকর্মীদের সঙ্গে তিন জন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞও ছিলেন। এ ছাড়া, ২৭ জন পুলিশকর্মী, তিন জন সাধারণ বাসিন্দা-সহ মোট ৩৩ জন জখম হয়েছেন। থানাটি ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সংলগ্ন বিল্ডিংগুলিরও ক্ষতি হয়েছে। বিস্ফোরণের কারণ খুঁজতে তদন্ত চলছে। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছে।’’
উল্লেখ্য, শ্রীনগরে জইশ জঙ্গিদের সমর্থনে পোস্টার সাঁটার অভিযোগে আদিল আহমেদ নামের এক চিকিৎসককে গ্রেফতার করেছিল এই নওগাম থানার পুলিশ। তাঁকে জেরার মাধ্যমে ফরিদাবাদে মজুত বিস্ফোরক পদার্থের হদিস মেলে। ৩৬০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট উদ্ধার করা হয়েছিল গত ১০ নভেম্বর। সে দিন সন্ধ্যাতেই দিল্লির লালকেল্লার সামনে গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে, মৃত্যু হয় ১৩ জনের। ফরিদাবাদ থেকে বাজেয়াপ্ত সেই অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নওগাম থানায় রাখা হয়েছিল। তা পরীক্ষার সময় ফের অঘটন ঘটেছে।