যে সব খাদ্যসামগ্রীর বিপুল পরিমাণ উৎপাদন হয়েছে, সেগুলিরই দাম বাড়ছে। এই ধাঁধার সমাধান বের করতে নরেন্দ্র মোদীর সরকার এ বার অত্যাবশ্যক পণ্য আইন কড়া করতে চাইছে। বেআইনি মজুতদারি, কালোবাজারি ও ফাটকাবাজির মতো অপরাধ এ বার জামিনঅযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। রাজ্যগুলির চাপে কেন্দ্র আজ এ বিষয়ে মৌখিক সম্মতি দিয়েছে।
কেন্দ্র মনে করছে, বাজারে আলু-পেঁয়াজ থেকে শুরু করে সব রকম খাদ্যসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ার পিছনে একমাত্র কারণ বেআইনি মজুতদারি, কালোবাজারি ও ফাটকাবাজি। আলু-পেঁয়াজের দাম কমানোর জন্য এত দিন কেন্দ্রের তরফে রাজ্যগুলির উপর চাপ তৈরি করা হচ্ছিল। আজ রাজ্যগুলি পাল্টা দাবি তুলেছে, অত্যাবশ্যক পণ্য আইন আরও কঠোর করা হোক। মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ, বিহারের মতো কংগ্রেস ও অন্যান্য অ-বিজেপি দলের শাসনে থাকা রাজ্যগুলি অভিযোগ তোলে, আম জনতাকে সুরাহা দিতে কেন্দ্র যথেষ্ট পদক্ষেপ করছে না। দু’দিন আগেই আলু ও পেঁয়াজকে অত্যাবশ্যক পণ্য আইনের আওতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার। নিজেদের চাহিদা মতো আলু-পেঁয়াজের মজুতের সর্বোচ্চ পরিমাণ বেঁধে দেওয়ার কথা বলে রাজ্যের ঘাড়েই দায় ঠেলে দিয়েছিল কেন্দ্র। আজ কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠকে সব রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রীরা জানান, মজুতদারদের ধরা হলেও তারা জামিনে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছেন। লাভের লাভ কিছু হচ্ছে না। চাই কড়া আইন। কেন্দ্রকেই তা করতে হবে। সেই দাবি কার্যত মেনে নিয়েছে কেন্দ্র। খাদ্যমন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান বলেন, “সব রাজ্যই এ বিষয়ে একমত। খুব তাড়াতাড়ি ওই আইন সংশোধনের জন্য মন্ত্রিসভায় নোট পাঠানো হবে।”
এ ছাড়া চাল, জোয়ার, বাজরা, আলু, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে ডাল, তেল, দুধ, ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে এ দিনের বৈঠকে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ছ’মাসের মধ্যে সেগুলি কার্যকর করা হবে। খাদ্যমন্ত্রীর কথায়, “মূলত খাদ্যসামগ্রীর মজুত ও তার বণ্টনের ক্ষেত্রে আমরা সুব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাইছি।”
লোকসভা ভোটের প্রচারে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে মনমোহন সরকারের ব্যর্থতাকেই বড় হাতিয়ার করেছিল বিজেপি। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পরে সেই একই সমস্যা মোদী সরকারের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থায় মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাজ্যগুলিকে পাশে পাওয়ার জন্যই কেন্দ্র আজ রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রীদের বৈঠক ডেকেছিল। খাদ্যমন্ত্রী রামবিলাস তো বটেই। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিংহও বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠকের আলোচ্য বিষয়ে মূল্যবৃদ্ধির জন্য মাথাপিছু আয় বেড়ে যাওয়া, ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে সরকারি অর্থ ব্যয়, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং খাদ্যাভাসের বদলকেও দায়ী করা হয়েছিল। কংগ্রেসি রাজ্যের মন্ত্রীরা এ নিয়ে আপত্তি তোলেন। চাপের মুখে পিছু হঠেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। জেটলি বৈঠকের শুরুতে বেআইনি মজুতদারিকে দাম বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করলেও পরে তিনিও মেনে নেন এটাই প্রধান কারণ মূল্যবৃদ্ধির। জেটলির কথায়, “রেকর্ড উৎপাদনের পরেও যখন খাদ্যসামগ্রীর দাম বাড়ছে, তখন বুঝতে হবে বেআইনি মজুত হচ্ছে।” এর ব্যাখ্যাও দেন জেটলি। তাঁর বক্তব্য, বৃষ্টি কম হবে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ব্যবসায়ীরা তার ফায়দা তুলতে চান। কিন্তু খাদ্যসামগ্রীর জোগানে কোনও সমস্যা নেই। প্রতি বছরই এ ভাবেই মুনাফা লোটার চেষ্টা হয়। আর তাই রবি ফসল বাজারে এসে যাওয়ার পরে খরিফ ফসল আসা পর্যন্ত জুলাই থেকে নভেম্বরের মধ্যে খাদ্যসামগ্রীর দাম বেড়ে যায়। প্রশাসনের পরীক্ষা হল, মজুতদারদের খপ্পর থেকে খাদ্যসামগ্রী বের করে তা বাজারে নিয়ে আসা। সেখানে কেন্দ্র ও রাজ্যকে কড়া হাতে আইন প্রয়োগ করতে হবে। কেন্দ্র যে আগেভাগেই মূল্যবৃদ্ধির বিপদের আঁচ করে মাঠে নেমে পড়েছে, সেই কৃতিত্বও দাবি করেন জেটলি।
রাজ্যের মন্ত্রীরা অবশ্য সব দায় নিতে চাননি। কেন্দ্রকেও পুরো কৃতিত্ব দিতে চাননি। বিহারের খাদ্যমন্ত্রী শ্যাম রজক বলেন, “খাদ্যসামগ্রীর দাম নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রেরও দায়িত্ব রয়েছে। তাদেরই আইন তৈরি করতে হবে।” মহারাষ্ট্রের খাদ্যমন্ত্রী, এনসিপি নেতা অনিল দেশমুখ বলেন, “শুধু মজুতদারির জন্য পেঁয়াজের দাম বাড়ছে না। এটা কেন্দ্রের ব্যর্থতা, যার দায় তারা রাজ্যের ঘাড়ে চাপাতে চাইছে।” পশ্চিমবঙ্গের জ্যোতিপ্রয় মল্লিক বলেন, “কেন্দ্রকে প্রতি সপ্তাহে জিনিসের দাম পর্যালোচনায় বৈঠক করতে হবে। যেমনটা পশ্চিমবঙ্গ সরকার করে।”