Hinduism

Covid 19: ‘হিন্দু-মুসলিমের হিসাব আছে, কেন্দ্রের কাছে নেই শুধু অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুর হিসাব’

অক্সিজেন সঙ্কট না থাকলে বিদেশ থেকে অক্সিজেন  আমদানি, হাসপাতালে অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরি, অক্সিজেন অডিট— এগুলো কেন হয়েছিল?

Advertisement

সুজিষ্ণু মাহাতো

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২১ ০৭:০৭
Share:

ফাইল চিত্র।

‘‘কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়ার নেই। প্রতিক্রিয়া দেওয়া কারও পক্ষে সম্ভব নয়। কিসি কে বস কি নহি হ্যায় রিঅ্যাকশন দেনে কি!’’

Advertisement

অক্সিজেন না পেয়ে মৃত্যুর সংখ্যা কেন্দ্রীয় সরকার জানে না বলে মঙ্গলবারই সংসদে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ভারতী পওয়ার। তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়ায় এমনই উত্তর মিলল দিল্লির বাসিন্দা যশ সিন্ধওয়ানির নাম করে দেওয়া ফোন নম্বরে।

নম্বরটি এখনও রয়েছে টুইটারে। সেই নম্বর দিয়ে ৩ মে অক্সিজেন চেয়ে টুইট করেছিলেন খোদ উত্তর-পশ্চিম দিল্লির বিজেপি সাংসদ হংসরাজ হংস। তাতে জবাব দিয়ে যুব কংগ্রেস নেতা বি ভি শ্রীনিবাস লিখেছিলেন, যশের বাবার জন্য তাঁরা অক্সিজেন জোগাড় করার চেষ্টা করছেন। মঙ্গলবার সরকারের জবাবের পরে তাই কোভিডে স্বজনহারা অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, মাস আড়াই আগে অক্সিজেনের জন্য যে হাহাকারের ছবি দেশের নানা জায়গায় দেখা গিয়েছিল, তা কি কাল্পনিক ছিল? অক্সিজেন সঙ্কটের সেই সাক্ষীদের আরও প্রশ্ন, অক্সিজেন সঙ্কট না থাকলে বিদেশ থেকে অক্সিজেন আমদানি, হাসপাতালে অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরি, অক্সিজেন অডিট— এগুলো কেন হয়েছিল?

Advertisement

এপ্রিলের ১৭ তারিখে চোখের সামনে বাবা বিনয় শ্রীবাস্তবকে হারিয়েছিলেন তাঁর ছেলে হর্ষিত। অসুস্থ হওয়ার পরে অক্সিজেন চেয়ে যেখানে পারছিলেন আকুল আবেদন করছিলেন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, বছর পঁয়ষট্টির বিনয়। কোনও আবেদনেই কাজ হয়নি। বাড়িতেই পরিজনের চোখের সামনে মৃত্যু হয় বিনয়ের। টুইটারে এখনও রয়েছে বিনয়ের টুইট— ‘‘আমার অক্সিজেনের মাত্রা ৩১। কখন কেউ আসবে?’’ রয়েছে অক্সিমিটারের সেই ছবিও। তবে তথ্য নেই সরকারের কাছে। বুধবার তা শুনে হর্ষিতের প্রশ্ন, ‘‘দেশে ক’জন হিন্দু, ক’জন মুসলিম তার তথ্য তো রয়েছে! তা হলে কত জন মারা গেলেন সেই তথ্য নেই কেন?’’ তিনি বলছেন, ‘‘হাসপাতালে যাঁরা মারা গিয়েছেন তাঁদের তথ্যই রাখা হয়নি। আমি তো বাবাকে হাসপাতালেই নিয়ে যেতে পারিনি। আসলে পরে যাতে সত্যিটা বেরিয়ে না আসে, সে জন্যই হয়তো তখন বিশদ তথ্য রাখা হয়নি।’’

সরকারি নথিতে না থাকলেও টুইটারে, হোয়াটসঅ্যাপ-টেলিগ্রাম গ্রুপে এখনও পাওয়া যাবে অক্সিজেন চেয়ে এমন অসংখ্য আবেদন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যখন তুঙ্গে, তখন দলের কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে রাতদিন এমন বহু আবেদন সামলেছেন যুব কংগ্রেস নেতা শ্রীনিবাস। বুধবার মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীতে অক্সিজেনের অভাবে এক বিজেপি নেতার মৃত্যুর খবর টুইট করে মন্ত্রীকে আক্রমণ করেছেন তিনি। অক্সিজেন সঙ্কটের নানা ছবি দিয়ে একটি ভিডিয়ো আপলোড করে শ্রীনিবাস লিখেছেন, ‘‘সমস্ত ঘটনা কাল্পনিক। ঐতিহাসিক ভারতে অক্সিজেন সঙ্কটের সঙ্গে এর কোনও মিল খুঁজে পেলে তা আপনার কল্পনা। ভারত সরকারের আদেশানুসারে।’’

কেন্দ্রীয় সরকারের হয়েই দীর্ঘদিন কাজ করেছেন অর্চনা দত্ত। ইন্ডিয়ান ইনফর্মেশন সার্ভিসে কর্মরত অর্চনাদেবী সামলেছেন দূরদর্শনের ডিরেক্টর জেনারেলের পদও। এপ্রিলের ২৭ ও ২৮ তারিখ কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে স্বামী ও মাকে হারান প্রবাসী বাঙালি অর্চনাদেবী। বহু চেষ্টাতেও তাঁদের জন্য শয্যা মেলেনি একাধিক হাসপাতালে। সেই চেষ্টাতে ছেলে অভিষেককে কী ভাবে ছোটাছুটি করতে হয়েছিল, তা মনে আছে অর্চনার। তিনি নিজে, তাঁর ছেলে, ভাইঝি, তাঁর বোন— সকলেই করোনা আক্রান্ত হন। ভাইঝির জন্যও অতি কষ্টে অক্সিজেন সিলিন্ডার পেয়েছিলেন তাঁরা। এখন সরকারের কাছে এর তথ্য না থাকাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ ও ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা’ বলেই মনে হচ্ছে তাঁর। প্রাক্তন আমলা হিসেবে তাঁর উপলব্ধি, ‘‘এই ধরনের সমস্যাকে অস্বীকার করে আমরা ভবিষ্যতে এমন সঙ্কট মোকাবিলার অপারগতাই প্রকাশ করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন