ধর্মীয় নির্যাতনের দরুন বাংলাদেশ থেকে যাঁরা অসমে এসে বসবাস করছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দানের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজনীয় কাজ করে চলেছে বলে জানালেন বিজেপি-র ‘হাই প্রোফাইল’ সাধারণ সম্পাদক রামমাধব। তাঁর কথায়, আইন পরিবর্তন-সহ বেশ কিছু জটিল বিষয় এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। কেন্দ্রের বিভিন্ন মন্ত্রক সেই সব জটিলতা পাকাপাকি কাটানোর ব্যাপারে শলা-পরামর্শ করছে। বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও এ নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব, তাদের নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য সরকারের উপর দলের তরফে চাপ অব্যাহত রাখা হয়েছে।
বরাক সফরে এসে এই ক’টি কথা আজ বারবার উল্লেখ করতে হয়েছে রামমাধবকে। সংঘের বৈঠক কিংবা বিজেপির বরাক উপত্যকা সমন্বয় কমিটির আলোচনা—সব জায়গায় এ নিয়েই উত্কণ্ঠা প্রকাশ করতে দেখেছেন তিনি। আশ্বস্ত করেছেন, ভাববেন না। এ শুধু ঘোষণার অপেক্ষায়। কাজকর্ম গুটিয়ে আনা হয়েছে।
সব জায়গায় এক কথা শুনতে শুনতে আরএসএস-এর এই প্রাক্তন মুখপাত্র সাংবাদিক সম্মেলনে বলেই বসেন, সাংবাদিকরা সবাই এ নিয়ে এত চিন্তিত কেন। পরে নিজেই বলেন, বুঝতে পারছি, এনআরসি এই অঞ্চলের মানুষের বিরাট সমস্যা। কেন্দ্র বা বিজেপি নেতৃত্ব, সবাই বাংলাদেশ থেকে আসা নির্যাতিতদের নাগরিকত্ব প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাঙালিদের পাশাপাশি, নির্যাতনের শিকার বেশ কিছু চাকমাও রয়েছেন। নাগরিকত্ব পাবেন তাঁরাও। সঙ্ঘের সঙ্গে বিজেপির সংযোগকারী এই নেতা তাঁরক সব ক’টি সভা ও সাংবাদিক সম্মেলনে জোর দিয়ে বলেন, ‘‘আশ্রিতদের একজনকেও ভারত ছাড়তে হবে না, অসম ছাড়তে হবে না।’’ সে ব্যবস্থা পাকা করছে তাঁর দলের সরকার। তবে তিনি কোনও সময়সীমা উল্লেখ করতে চাননি।
কিন্তু এনআরসি নবীকরণ চূড়ান্ত হওয়ার আগে নাগরিকত্বের জটিলতা কাটানো না গেলে যে বহু মানুষের নাম এনআরসি থেকে বাদ থেকে পড়বে, সে কথা গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন বিজেপি ও সংঘ পরিবারের স্থানীয় কর্মকর্তারা। রামমাধব তাঁদের জানান, এ নিয়েও দলে কথা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত এনআরসি-র সময় ধরা না গেলে কেন্দ্র প্রয়োজনীয় নির্দেশ পাঠাবে। রাজ্য সরকারকে বলা হবে, নির্যাতিতদের নাগরিকত্বের সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না। সাংবাদিক বৈঠকে অবশ্য রামমাধব এতটা খোলামেলা বলেননি। সেখানে তাঁর কৌশলী মন্তব্য, ‘‘এনআরসি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে হচ্ছে। রাজ্য সরকার সেই নির্দেশ কার্যকর করছে। এর সঙ্গে নাগরিকত্বের ইস্যু সম্পর্কিত নয়। তবু এ টুকু বলতে পারি, কোনও আশ্রিতকেই বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে না। তাঁরা ভারতে থাকবেন, অসমে থাকবেন।’’
দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত সংঘ ও তার শাখা সংগঠনগুলির কার্যকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন রামমাধব। প্রথমে সকলের বক্তব্য শোনেন। স্থানীয় কার্যকর্তারা নানাভাবে সতর্ক করে দেন, নাগরিকত্বের সমস্যা না মিটলে শুধু বরাক উপত্যকাই নয়, গোটা অসমে বিজেপি প্রত্যাশিত ফলাফল থেকে দূরে থেকে যাবে। তাঁরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শিলচর ভাষণও টেনে আনেন। মোদী নির্বাচনী বক্তৃতায় বলেছিলেন, আশ্রিতদের নাগরিকত্ব দেবেন। ডি-ভোটার সমস্যা মিটিয়ে দেবেন। কিন্তু বিজেপি শাসনের এক বছরে না মিটেছে নাগরিকত্বের জটিলতা। না কেটেছে ডি ভোটার সমস্যা। প্রতিদিন সন্দেহভাজন বাংলাদেশি বলে সাধারণ মানুষকে জেলে পোরা হচ্ছে।
মনোযোগ দিয়ে সব শুনে ধীরে ধীরে জবাব দেন রামমাধব। তিনি বলেন, বর্তমানে ভারতে যে আইন রয়েছে তা মেনে বাংলাদেশ থেকে আসা নির্যাতিতদের নাগরিকত্ব প্রদান সম্ভব নয়। সে জন্য নতুন আইন প্রণয়ন করতে হচ্ছে। সেখানে সংশয় রয়েছে, আইন অনুমোদনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা দলের নেই। এর উপর এমন আইন প্রণয়নে বহু দলের বিরোধিতাও রয়েছে। তাই ভেবেচিন্তে এগোতে হচ্ছে। তবে যে কোনও পরিস্থিতিতে দলকে অসমে ক্ষমতায় আনতে যে হবে, তা গুরুত্ব-সহ শুনিয়ে দেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা। সঙ্গে ছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য ও পর্যবেক্ষক মহেন্দ্র সিংহ।
তখনই দাবি ওঠে, তাহলে আপাতত ডি-ভোটারের নোটিশ দেওয়া, ধরপাকড় বন্ধ রাখা হোক। আজ এই সব নিয়ে মুখর ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, বিধায়ক দিলীপকুমার পাল, করিমগঞ্জ জেলা বিজেপির সভাপতি বিশ্বরূপ ভট্টাচার্য, অধিবক্তা পরিষদের উত্তর-পূর্ব সম্পাদক শান্তনু নায়েক, সংঘ কর্মকর্তা গৌরীশঙ্কর চক্রবর্তী, দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য, বিমলনাথ চৌধুরী, অসিত দত্ত প্রমুখ।
পরে সাংবাদিক বৈঠকে রামমাধব তরুণ গগৈ সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘‘এই সরকার নাগরিকত্বের কথা বলছে, আবার ডি ভোটার নোটিশ দিয়ে বাড়ি বাড়ি পুলিশ পাঠাচ্ছে।’’ একে গগৈয়ের দ্বিচারিতা বলেই মনে করেন তিনি।