উন্নয়নে কি শান্ত হবে ভূস্বর্গ, সংশয়ে কেন্দ্র

ছররায় একের পর এক কাশ্মীরির অন্ধ হয়ে যাওয়া ক্ষোভ তৈরি করেছিল। পাথর ছোড়ার মোকাবিলায় কাশ্মীরি যুবককে সেনার জিপের সামনে বেঁধে ঘোরানোর পর উপত্যকার ক্ষোভের আগুনে ঘি পড়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:২৩
Share:

ছররায় একের পর এক কাশ্মীরির অন্ধ হয়ে যাওয়া ক্ষোভ তৈরি করেছিল। পাথর ছোড়ার মোকাবিলায় কাশ্মীরি যুবককে সেনার জিপের সামনে বেঁধে ঘোরানোর পর উপত্যকার ক্ষোভের আগুনে ঘি পড়ে। আজ কাশ্মীরে সেনা ঘাঁটিতে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে স্থানীয় মানুষ সেনা জওয়ানদের উপরেই পাথর ছুড়েছেন। এ থেকে স্পষ্ট, কাশ্মীরের আমজনতা একেবারেই নিরাপত্তা বাহিনীর পাশ থেকে সরে গিয়েছেন।

Advertisement

মোদী সরকারের অন্দরমহলে এই ধারণা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে যে, কড়া হাতে অশান্ত কাশ্মীরকে শান্ত করতে গিয়ে পরিস্থিতি হাতের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে। কিন্তু সেই পরিস্থিতি সামলাতে কী নীতি নেওয়া হবে, তা নিয়ে এখনও দিশেহারা সরকার।

অনন্তনাগে ২৫ মে উপ-নির্বাচন হওয়ার কথা। সেই ভোটের জন্য কেন্দ্রের কাছ থেকে ৭৪ হাজার আধাসেনা চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা জানাচ্ছেন, পাঁচ রাজ্যে সাম্প্রতিক নির্বাচনে মোট ৭০ হাজার আধাসেনা মোতায়েন করা হয়েছিল। কেবল একটি উপ-নির্বাচনে এত আধাসেনা ব্যবহার করার প্রয়োজন হলে এখন ভোট না করাই উচিত বলে মনে করেন তাঁরা। এক স্বরাষ্ট্র কর্তার মতে, ‘‘শ্রীনগরে আমাদেক কথা না শুনে ভোট করতে গিয়ে বিপর্যয় ডেকে এনেছিল কমিশন। অনন্তনাগে তার পুনরাবৃত্তি হওয়া উচিত নয়।’’

Advertisement

পাশাপাশি মানুষের মন জয়ের উপায় খুঁজতে আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বিভিন্ন মন্ত্রক, নিরাপত্তা বাহিনী ও জম্মু-কাশ্মীর সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জম্মু-কাশ্মীরের এক হাজার মহিলাকে কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ করা হবে। তাঁদের নিয়ে তৈরি হবে একটি পৃথক ব্যাটেলিয়ন। কেন্দ্র আগেই পাঁচটি আইআরবি (ইন্ডিয়া রিজার্ভ ব্যাটেলিয়ন) তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। মহিলা পুলিশের ব্যাটেলিয়ন তারই অঙ্গ হবে। পাথর ছোড়ার মোকাবিলায় এই মহিলা ব্যাটেলিয়নকে কাজে লাগানো হবে।

আরও পড়ুন...
কুপওয়ারার সেনা ঘাঁটিতে ফের জঙ্গি হানা, হত ৬

উন্নয়নে আরও অর্থ ঢেলেও কাশ্মীরের মানুষের মন জেতার রাস্তা খুঁজছেন মোদী-রাজনাথ। ২০১৫-র নভেম্বরে কাশ্মীরের জন্য ৮০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আজকের বৈঠকের পর জানানো হয়, এর মধ্যে প্রায় ৬১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে বিভিন্ন মন্ত্রক সিলমোহর বসিয়েছে। রাজ্য সরকার ও অন্যান্য সংস্থাকে ১৯,৯৬১ কোটি টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোন প্রকল্পের কাজে কতখানি অগ্রগতি হয়েছে, তা খতিয়ে দেখেন রাজনাথ। কিন্তু শুধু পুলিশে নিয়োগ করে, উন্নয়নে টাকা ঢেলে কাশ্মীরিদের পাশে পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পোড়খাওয়া কর্তাদের বক্তব্য, এ কথা ঠিকই যে গোটা জম্মু-কাশ্মীরের ২২টি জেলার মধ্যে উপত্যকার ৫টি জেলাতেই অশান্তি হচ্ছে। এই পাঁচটি জেলার একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষই পাথর ছুড়ছে। তাদের পিছনে যে পাকিস্তানের উস্কানি, আর্থিক মদত রয়েছে, তা-ও সত্যি। কিন্তু এদের কড়া হাতে সামলাতে গিয়ে ভুল পদক্ষেপের ফলে গোটা উপত্যকার মানুষই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। গত রবিবার সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়ত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন