পরিভাষা বদলাচ্ছে সন্ত্রাসের। পাল্টাচ্ছে হামলার ধাঁচও। সীমান্ত পেরিয়ে আসা কিংবা দেশের ভিতর সন্ত্রাসবাদী হামলা রোখার পাশাপাশি সাইবার সন্ত্রাস আটকানোও এখন সরকারের বড় মাথাব্যাথার কারণ। বদলে যাওয়া সময়ের এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করতেই দেশের সব রাজ্যের পুলিশি ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর উন্নতিতে আগামী তিন বছরে ২৫,০৬০ কোটি টাকা খরচ করার পরিকল্পনা নিল কেন্দ্র। পুলিশি ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের ৮০ শতাংশ টাকা কেন্দ্র দেবে। বাকি ২০ শতাংশ অর্থ দিতে হবে রাজ্যগুলিকে। আজ নিরাপত্তা সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নতির এই প্রস্তাবটিকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
গোয়েন্দাদের মতে, কাশ্মীর কিংবা উত্তর-পূর্বের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি কিংবা মাওবাদীরা— নিত্যনতুন প্রযুক্তির সাহায্যে এরা বদলে ফেলছে আক্রমণের কৌশল। এই পরিস্থিতিতে দীর্ঘ দিন ধরেই নিরাপত্তা বাহিনীর আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র কেনা কিংবা প্রশিক্ষণের জন্য দাবি উঠছিল। পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে রাজ্যগুলির মধ্যে বিস্তর তালমিলের অভাবকেও লক্ষ্য করছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তাই সব রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থার মান বাড়াতে বড় মাপের সংস্কারে হাত দিল কেন্দ্র। পুলিশের আধুনিকীকরণের যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তাতে বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির পুলিশি পরিকাঠামোর উন্নতিতে। সেখানে বাড়তি ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। তেমনি জঙ্গি মোকাবিলায় জম্মু-কাশ্মীরে বাড়তি নজর দেওয়া হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মাওবাদী সমস্যা মোকাবিলায়। চলতি বছরে ছত্তীসগঢ়ে দু’টি বড় মাপের মাওবাদী হামলা হয়েছে। মারা গিয়েছেন সিআরপি-র একাধিক জওয়ান। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের মানচিত্রে এই মুহূর্তে প্রথম পাঁচটি কুখ্যাত জঙ্গি গোষ্ঠীর তালিকায় স্থান পেয়েছে এ দেশের মাওবাদীরা। সেই কারণে দেশের ৩৫টি সবচেয়ে মাওবাদী অধ্যুষিত জেলার উন্নয়ন খাতে বিপুল পরিমাণে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। তেমনি মাওবাদী দমনে নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে অত্যাধুনিক হাতিয়ার, মাইনবিরোধী গাড়ি কেনা-সংক্রান্ত যে দীর্ঘ দিনের দাবি রয়েছে, তা পূরণে সব মিলিয়ে ৩০০০ কোটি টাকা খরচের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, এই টাকার বড় অংশ অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, সুরক্ষা সংক্রান্ত পরিকাঠামো উন্নয়ন ও মহিলাদের সুরক্ষায় খরচ হবে। জঙ্গি হানা রুখতে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা খাতে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে কেন্দ্র। রাজ্য পুলিশের হাতে জঙ্গি দমনে আধুনিক অস্ত্র, বিস্ফোরক সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ও অপরাধ দমনে মেট্রো শহরের পুলিশের হেলিকপ্টার কেনার জন্য রাজ্যগুলিকে আলাদা করে অর্থ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র।