— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
আর্থিক লেনদেনে সংযুক্ত অনলাইন গেম নিষিদ্ধ হতে চলেছে ভারতে! এই সংক্রান্ত একটি বিল লোকসভায় পেশ করতে চলেছে সরকার। এ ধরনের খেলার প্রচারের উপরেও বসতে পারে জরিমানা। মঙ্গলবার ‘দ্য প্রমোশন অ্যান্ড রেগুলেশন অব অনলাইন গেমিং বিল, ২০২৫’-এ অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। বুধবার বিলটি সংসদে পেশ করা হতে পারে। আর তা নিয়েই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ভারতের অনলাইন গেমিং সংস্থাগুলির। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই বিল আইনে পরিণত হলে রীতিমতো ধসে পড়বে ভারতের গেমিং শিল্পের ভবিষ্যৎ।
বেশ কিছু বছর ধরে ভারতে গেমিং শিল্পকে একটি উদীয়মান ক্ষেত্র হিসাবে দেখা হচ্ছে। অনলাইন গেমে বাজি ধরার পিছনে প্রতি মাসে ভারতে গড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। তাই গত কয়েক বছরে গেমিং শিল্পে ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে বহু ছোটবড় সংস্থা। ফলে এমন আইন এলে রাতারাতি ক্ষতির মুখে পড়বে বহু সংস্থা, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। কাজ হারাতে পারেন দুই লক্ষ মানুষ। শুধু তা-ই নয়, ২৫,০০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ ক্ষতির মুখে পড়লে তা থেকে প্রাপ্ত বার্ষিক ২০,০০০ কোটি টাকার জিএসটি আদায়ও হবে না।
ভারতের অন্যতম বড় গেমিং সংস্থার এক শীর্ষকর্তা সংবাদমাধ্যম ‘টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’কে বলেন, ‘‘এই বিল যদি আইনে পরিণত হয়, তা হলে আমাদের হাত তুলে নেওয়া ছাড়া আর কিছু করার থাকবে না। আশ্চর্যের বিষয় হল, সরকার নানা বিষয় নিয়ে নিয়মিত আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে। অথচ এমন একটি প্রস্তাব নিয়ে কোনও রকম আলোচনাই করা হল না!”
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে প্রশ্নের মুখে পড়েছে ফ্যান্টাসি স্পোর্টস গেমিং সংস্থাগুলিরও ভবিষ্যৎ। যদিও এর মধ্যে বেশিরভাগ সংস্থারই দাবি, তারা বাজি ধরা, টাকা নয়ছয় করা কিংবা অবৈধ জুয়া খেলার মতো কোনও রকম ‘অবৈধ কার্যকলাপে’ জড়িত নয়। ফ্যান্টাসি গেমিংয়েও টাকার লেনদেন হয় বটে, তবে ঘুরপথে। এই ধরনের খেলায় প্রথমে অল্প টাকার বিনিময়ে পরিচিত তারকা বা খেলোয়াড়দের নিয়ে তালিকা বানাতে হয়। সেই খেলোয়াড়েরা বাস্তবে কেমন ফল করলেন, তার ভিত্তিতে টাকা লেনদেন হয়। জিতলে লক্ষ লক্ষ টাকার পুরষ্কারের হাতছানি থাকে। একে সরাসরি ‘জুয়া’ বলা যায় না। এমপিএল বা ড্রিম ১১ এই ধরনেরই সংস্থা। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়তে পারে তারাও। তবে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের তরফে ড্রিম ১১ ও এমপিএলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও এ বিষয়ে মুখ খোলেননি সংস্থার কেউ। এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের তরফেও এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
ব্রিটেন, আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলিতেও অনলাইন গেমিং খুবই জনপ্রিয়। তবে তা নিয়ে বিস্তর কড়াকড়ি রয়েছে। কেওয়াইসি, বিজ্ঞাপন ও প্রচারের নানা নিয়ম রয়েছে। সে সব মানলে তবেই ব্যবসার লাইসেন্স মেলে। ফলে অনলাইন গেমিংয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা না জারি করে বিকল্প ব্যবস্থাগুলি ভেবে দেখা যেত বলেও সরব হয়েছেন অনেকে।