চিন নিয়ে ভারসাম্যের নীতি মোদীর

আর নতুন করে বিতর্ক নয়, বরং এ বার চিনা প্রধানের সফরের সময়ে দলাই লামার সক্রিয়তা নিয়ে গোড়া থেকেই সতর্ক থাকতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। গত কালই বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ অখণ্ড-চিন নীতির কথা ঘোষণা করেছেন। শুধু কথাই নয়, কাজেও তা করে দেখানোর ইঙ্গিত মিলেছে সরকারের একটি সিদ্ধান্তে। ১৭ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর, চিনের প্রেসিডেন্ট সি জিনপিং-এর ভারতে আসার কথা।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১২
Share:

বিজেপির সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই

আর নতুন করে বিতর্ক নয়, বরং এ বার চিনা প্রধানের সফরের সময়ে দলাই লামার সক্রিয়তা নিয়ে গোড়া থেকেই সতর্ক থাকতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।

Advertisement

গত কালই বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ অখণ্ড-চিন নীতির কথা ঘোষণা করেছেন। শুধু কথাই নয়, কাজেও তা করে দেখানোর ইঙ্গিত মিলেছে সরকারের একটি সিদ্ধান্তে। ১৭ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর, চিনের প্রেসিডেন্ট সি জিনপিং-এর ভারতে আসার কথা। ওই সময়েই ভারতে একটি ধর্মীয় সভা করার পরিকল্পনা করেছিলেন দলাই লামা। সরকারি সূত্রের খবর, কেন্দ্র দলাই লামার অফিসকে জানিয়েছে, ধর্মীয় মহাসভা দিল্লিতে হোক, তাতে সাউথ ব্লকের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু এর সময় পিছিয়ে দেওয়া হোক। চিনা প্রেসিডেন্ট ভারত ছাড়ার পরে, অর্থাৎ ২০ এবং ২১ তারিখ নাগাদ ওই অনুষ্ঠান করতে সাউথ ব্লকের পক্ষ থেকে দলাই লামার অফিসকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

একেই বলে ঠেকে শেখা! ঠিক তিন বছর আগে চিনের স্টেট কাউন্সিলার দাই বিনগুয়োর ভারত সফর বাতিল হয়ে যায় ঠিক এই একই কারণে। যে দিন ওই শীর্ষ চিনা কূটনৈতিক কর্তার দিল্লিতে পা রাখার কথা, ঠিক সে দিনই দলাই লামা দিল্লিতে ‘গ্লোবাল বুদ্ধিস্ট সামিট’ ফেঁদে বসেছিলেন। দাই বিনগুয়োর সে দিনের সফর ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কেননা তিনি ভারত-চিন সীমান্ত বিষয়ক আলোচনার চিনা পক্ষের বিশেষ প্রতিনিধিও ছিলেন। কিন্তু সে সময় দিল্লিতে দলাই লামার উপস্থিতির প্রতিবাদে দাই বিনগুয়োর সফর স্থগিত করে দিয়েছিল চিন।

Advertisement

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, অখণ্ড চিন নীতির কথা বলে এবং দলাই লামার অনুষ্ঠান পিছিয়ে দিয়ে বেজিংকে এক দিকে কিছুটা স্বস্তিতে রাখতে চাইছে সরকার। চিনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়ে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতি কমানো মোদীর বিদেশনীতির অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ে। এটাও ঠিক যে চিনা নেতৃত্বের সঙ্গে মোদীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভাল। চিনের সঙ্গে বাণিজ্য-সহ বিভিন্ন আলোচনা ভেস্তে না যায় বিদেশমন্ত্রীকে সে দিকেও নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

স্টেপল ভিসা থেকে অরুণাচল, দক্ষিণ চিন সাগরে বেজিং-এর সক্রিয়তা থেকে সীমান্তে অনুপ্রবেশের মত বিষয়গুলি নিয়েও পাল্টা চাপ ধরে রাখতে চাইছে সরকার। মোদী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার দিন তিব্বতের নির্বাসিত প্রধানমন্ত্রী সিকিয়োঙ্গ লোবসাং সানগেকে রাষ্ট্রপতি ভবনের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ করার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির। আমন্ত্রণ করা হয় তিব্বত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দোলমা গাইরিকেও। এই ঘটনার পর চিনের গাত্রদাহ আরও বাড়িয়ে তিব্বতের সরকারি ওয়েবসাইটে লেখা হয়, এই প্রথম অন্যান্য রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে একাসনে বসার স্বীকৃতি পেল কেন্দ্রীয় তিব্বতি প্রশাসনের মন্ত্রীরা। গোটা বিষয়টি নিয়ে মোদী সরকার নীরব থাকলেও চিনা নেতৃত্ব প্রতিবাদ জানিয়েছেন মোদীর কাছে।

গত সপ্তাহে জাপানে গিয়ে চিনা আগ্রাসন নীতি নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন মোদী, তার থেকেও চাপ রাখার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি, এই মুহূর্তে ভারত সফর করছে তাইওয়ানের একটি বাণিজ্য প্রতিনিধি দল। এই বিষয়টিও খুশি করছে না বেজিংকে। চিনা রক্তচক্ষু অগ্রাহ্য করেই বিগত কয়েক বছর ধরে নয়াদিল্লি কিন্তু তাইওয়ানের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে চলেছে। গত কাল সুষমা বলেছেন, “চিনকে মনে রাখতে হবে ভারতও এক এবং অখণ্ড। অরুণাচল ভারতের অঙ্গরাজ্য। দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো বরদাস্ত করব না।”

রাজনৈতিক সূত্রের খবর, চিন-নীতির প্রশ্নে কঠোর অবস্থান নিতে মোদী সরকারের উপর চাপ রাখছে আরএসএস। দু’মাস আগে চিনের বিদেশমন্ত্রীর নয়াদিল্লি সফরের আগে আরএসএসের তৎকালীন মুখপাত্র রাম মাধব একটি নিবন্ধ লিখে চিন সম্পর্কে মোদী সরকারকে সতর্ক করেছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন