Bihar Voter Card Revision

ধরা পড়ল প্রায় ৫৭ লক্ষ ‘ভূত’! দেশ জুড়ে বিতর্কের ঝড় তুলে শেষ বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন

দেশ জুড়ে বিতর্কের ঝড় তুলে শেষ হল বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) প্রথম ধাপ। গণনা-পত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা ফুরনোর পরে নির্বাচন কমিশনের তরফে বলা হচ্ছে, মোট ৭ কোটি ২৩ লক্ষ ভোটার গণনা-পত্র পূরণ করে জমা দিয়েছেন।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৫ ০৭:১০
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

প্রাথমিক অভিযানে ধরা পড়ল প্রায় ৫৭ লক্ষ ‘ভূত’! এর পরে আরও চলবে ঝাড়াই-বাছাই। তাতে আরও কত ভূত বাড়বে, বা কত ভূত প্রাণ পেয়ে হয়ে উঠবে মূর্তিমান, সে উত্তর এখনও অজানা!

দেশ জুড়ে বিতর্কের ঝড় তুলে শেষ হল বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) প্রথম ধাপ। গণনা-পত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা ফুরনোর পরে নির্বাচন কমিশনের তরফে বলা হচ্ছে, মোট ৭ কোটি ২৩ লক্ষ ভোটার গণনা-পত্র পূরণ করে জমা দিয়েছেন। মৃত ভোটার পাওয়া গিয়েছে ২২ লক্ষ। স্থায়ী ভাবে স্থানান্তরিত হয়েছেন ৩৫ লক্ষ। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি, তাঁদেরও এ বার প্রথম দফার প্রক্রিয়া শেষে পাকাপাকি ভাবে স্থানান্তরিতদের মধ্যে জুড়ে দেওয়া হয়েছে (যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস)। একাধিক জায়গায় নাম রয়েছে প্রায় ৭ লক্ষ ভোটারের। ফর্ম পূরণ করে ফেরত দেননি এক লক্ষ ২০ হাজার ভোটার। কমিশন সূত্রের ইঙ্গিত, ভোটার তালিকা সংস্কারে শেষ পর্যন্ত নীতীশ কুমার, লালু প্রসাদের রাজ্যে প্রায় ৬০ লক্ষ নাম বাদ যেতে পারে।

কমিশনের প্রক্রিয়া অনুযায়ী, বিহারের ৩৮টি জেলার ৫৩৪টি ব্লক থেকে বুথ লেভেল অফিসারেরা (বিএলও) যে তথ্য নিয়ে এসেছেন ভোটারদের কাছ থেকে, তার ভিত্তিতে আগামী ১ অগস্ট খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে। তার পরে এক মাস সময় থাকবে যে কোনও ভোটার এবং রাজনৈতিক দলের তরফে আপত্তি বা আবেদন করার জন্য। যাঁদের নথি নিয়ে এখন সমস্যা থেকে গেল, তার ফয়সালা হবে ওই সময়েই। তার পরে আসবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। অর্থাৎ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পরে নাগরিক ও রাজনৈতিক জগতে আরও বড় ঝড়ের ইঙ্গিত রয়ে গেল!

যাঁরা পাকাপাকি ভাবে চলে গিয়েছেন বা যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি, তাঁদের একটা তালিকা রাজ্যে স্বীকৃত ১২টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠিয়েছে কমিশন। বিহারের আমজনতা এখনও জানে না, গণনা-পত্র পূরণ করে দেওয়ার পরে তাঁদের নাম ভোটার তালিকায় উঠে গিয়ে হ্যাপা মিটে গেল কি না! সে সব বোঝা যাবে ১ অগস্টের তালিকা প্রকাশের পরে। কমিশন সূত্রে বলা হচ্ছে, বিহারে ২০০৩ সালের ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম ছিল, অর্থাৎ সে বারের এসআইআর-পরীক্ষা যাঁরা পাশ করে এসেছেন, তাঁদের বা তাঁদের ছেলেমেয়েদের সমস্যা হবে না। তার পরে ভোটার হয়ে থাকলে কাগজপত্র-সহ প্রমাণ দিতে হবে।

শেষ লপ্তে এই কারণেই ছিল তাড়া। এমনিতে বিহারের শহরাঞ্চলে এই তালিকা সংশোধন নিয়ে সাধারণ মানুষের বিশেষ হেলদোল নেই। তবে উদ্বেগ আছে গ্রামাঞ্চলে। আবেদন জমা করার শেষ দিনে, শুক্রবার বৃষ্টির মধ্যে যেমন দেখা মিলেছিল প্রৌঢ় অনিল কুমারের। তাঁর নাতনি শান্তা কুমারীর নাম তুলতে হবে ভোটার তালিকায়। হাতের কাছে যা কাগজপত্র ছিল, সব কিছুর প্রতিলিপি নিয়ে দৌড়চ্ছেন বিএলও-র কাছে। এবং কমিশনের তথ্যেও, ফর্ম ফেরত না পাওয়ার সংখ্যা আগের দিনের সাত লক্ষ থেকে শেষ দিনে এক লক্ষ ২০ হাজারে চলে এসেছে। শেষ লগ্নে জমা পড়ার গতি বেড়ে গিয়েছে।

রাজনৈতিক উত্তাপ অবশ্যই গনগনে। বিহার বিধানসভার বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে বিরোধীরা ফের কালো পোশাকে হাজির হয়েছিলেন, সরব হয়েছেন এসআইআর নিয়েই। শাসক এনডিএ-র বিধায়কেরা আবার পাল্টা হেলমেট মাথায় অধিবেশনে ঢুকেছিলেন! বিরোধী দলনেতা, আরজেডি-র তেজস্বী যাদবের প্রশ্ন, “ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য অস্বাভাবিক তাড়াহুড়ো কেন? রাজ্যের আট কোটি ভোটারের কাছে কমিশন এক মাসে পৌঁছে গেল!” সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের পলিটব্যুরো সদস্য কুণালের মতে, “যে রাজ্যে ভোট নেই, সেখানে এসআইআর আগে করে এলে উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠত না। বিহারে যখন কয়েক মাসের মধ্যে বিধানসভা ভোট হবে, তার প্রস্তুতি চলছে, সেখানে হঠাৎ এটা চাপিয়ে দেওয়া হল। এর পরে যাবে বাংলায়, সেখানেও ভোটের আগে! তালিকা সংশোধনের নামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) মতো একটা প্রক্রিয়া চলছে।”

শাসক দল জেডিইউ-এর বর্ষীয়ান নেতা ও রাজ্যের মন্ত্রী বিজয় চৌধুরী অবশ্য বলছেন, “কোনও বৈধ নাগরিক যাতে ভোটার তালিকার বাইরে না থাকেন, আমাদের দলের অবস্থান এটাই। কমিশন তার কাজ করছে, করুক। আর যাঁরা সময় কম নিয়ে হইচই করছেন, তাঁদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ২০০২ সালে ১৫ জুলাই থেকে ১৪ অগস্ট পর্যন্ত এক মাস সময়েই এসআইআর-এর এই প্রক্রিয়া হয়েছিল।”

ভোটার তালিকার প্রশ্ন এলেই বিজেপির তাস বরাবরই ‘বিদেশি অনুপ্রবেশকারী’। সাংসদ রবিশঙ্কর প্রসাদ যেমন এখানেও বলেছেন, “কাগজপত্র যাচাই তো করতেই হবে। অরারিয়া, পূর্ণিয়া, কিসানগঞ্জে গিয়ে দেখুন, জনসংখ্যার ১২৫% আধার কার্ড হয়ে গিয়েছে! কারা এসে করল এগুলো?” বিজেপি নেতা যে এলাকার দিকে আঙুল তুলছেন, সেখানে মুসলিমের সংখ্যা অন্যান্য এলাকার তুলনায় বেশি। ইঙ্গিত তাই সহজবোধ্য! বিরোধীদের যদিও প্রশ্ন, আধার কার্ড নাগরিকের নিশ্ছিদ্র পরিচিতি, এই রব তো নরেন্দ্র মোদীর সরকারই তুলেছিল। এখন বাইরে থেকে কারা এসে নকল আধার কার্ড বানিয়ে ফেলল বলে হাতে ধুয়ে ফেললে চলবে?

(চলবে)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন