চন্দা কোছর।—ফাইল চিত্র।
স্বামীর ব্যবসা নিয়ে মাথা ঘামাননি কখনও। তাই ভিডিয়োকন কর্তার সঙ্গে তাঁর ব্যবসায়িক লেনদেনের কথাও জানতেন না। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে (ইডি) জানালেন আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিইও চন্দা কোছর। দুর্নীতি মামলায় চলতি মাসের শুরুতে চার-চারবার তাঁকে জেরা করেছেন গোয়েন্দারা। সেখানেই এমন দাবি করেন চন্দা।
একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, আইসিআইসিআই দুর্নীতিকাণ্ডে চলতি মাসের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত চারবার জেরা করা হয়েছে চন্দা কোছরকে। কিন্তু গোয়েন্দাদের সামনে নিজের দাবিতেই অনড় ছিলেন তিনি। গোয়েন্দাদের প্রশ্নের জবাবে জানান, স্বামীর ব্যবসা নিয়ে কখনও মাথা ঘামাননি। ভিডিয়োকন কর্তা বেণুগোপাল ধূতের সঙ্গে স্বামীর ব্যবসায়িক লেনদেন রয়েছে তাও জানতেন না। নিজের কাজ নিয়েও কখনও স্বামীর সঙ্গে আলোচনা করতেন না। তাই ভিডিয়োকন সংস্থাকে মোটা টাকার ঋণ দেওয়া নিয়ে তাঁদের মধ্যে কোনও কথা হয়নি।
আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক থেকে ৩০০ কোটি টাকার ঋণ পেয়ে চন্দার স্বামী দীপক কোছরের নিউপাওয়ার সংস্থায় ৬৪ কোটি টাকা ঢালেন ভিডিয়োকন কর্তা বেণুগোপাল ধূত। কিন্তু সে কথা তিনি জানতেন না বলে দাবি করেছেন চন্দা। ঋণের বিনিময়ে ভিডিয়োকনের কাছ থেকে কোনওরকম সুবিধা নেওয়ার অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি। তবে চন্দা অস্বীকার করলেও, মরিশাস থেকে দীপক কোছরের সংস্থায় বেণুগোপাল টাকা পাঠিয়েছিলেন বলে সম্প্রতি জানতে পেরেছেন ইডি আধিকারিকরা। সেই লেনদেন সংক্রান্ত সবিস্তার তথ্য হাতে পেতে মরিশাসের একটি আইনি সংস্থাকে ইতিমধ্যেই লিখিত অনুরোধ জানানো হয়েছে। জেরা করা হয়েছে ভিডিয়োকন কর্তা বেণুগোপাল ধূত এবং দীপক কোছরকেও।
আরও পড়ুন: মাসুদ আজহারকে পৌঁছতে কন্দহর যাননি ডোভাল, তা হলে কারা ছিলেন সেদিন?
আরও পড়ুন: সারা দেশে চলছে অঘোষিত ‘সুপার-ইমার্জেন্সি’, বিজেপিকে তোপ মমতার
২০০৯ সালের ১ মে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব হাতে পান চন্দা কোছর। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে ২০১৬ সালে। তবে সিবিআই তদন্ত শুরু হয় গতবছর। তাতেই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। জানা যায়, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার নেতৃত্বাধীন ২০টি ব্যাঙ্কের কনসর্টিয়াম থেকে মোট ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল ভিডিয়োকন সংস্থা, যার মধ্যে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক থেকেই ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা হাতে পেয়েছিল তারা। ঘুরপথে সেই টাকার কিছু অংশ গিয়ে পৌঁছয় চন্দা কোছরের স্বামী দীপক কোছর ও তাঁর দুই আত্মীয়ের প্রতিষ্ঠা করা নিউপাওয়ার সংস্থায়। ২০১০ সালে নিজের একটি সংস্থার মাধ্যমে নিউপাওয়ার সংস্থায় ৬৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন ভিডিয়োকন কর্তা বেণুগোপাল ধূত। তবে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ঋণের টাকা শোধ করেননি তিনি। ২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা বাকি থাকতেই অনুৎপাদক সম্পদের আওতায় গত বছর তা বাতিল হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক মাথাচাড়া দিলে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করেন চন্দা কোছর।
তবে তাতেই নিস্তার পাননি তিনি। গত ২২ ফেব্রুয়ারি চন্দা কোছর, দীপক কোছর এবং বেণুগোপাল ধূতের বিরুদ্ধে লুকআউট সার্কুলার জারি করে সিবিআই। যার পর গতমাসেই তাঁদের বিরুদ্ধে অপরাধ মামলা দায়ের করে ইডি।
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)