Pahalgam Terror Attack

ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বে নজর অস্ত্র বিক্রির প্রতিযোগিতায়

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের হিসাব অনুযায়ী, এক দশকের মধ্যে ভারত-পাকিস্তানের নিরাপত্তা সরঞ্জাম কেনার ধরন অনেক বদলে গিয়েছে। ২০০৬ থেকে ২০১০ সালে ভারত সামরিক সরঞ্জামের প্রায় ৭৫ শতাংশ কিনত রাশিয়ার থেকে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২৫ ০৯:৩৮
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

পহেলগামে জঙ্গি হামলা, তার পরে পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটিতে ভারতীয় সেনার অভিযান— দু’দেশের মধ্যে চূড়ান্ত উত্তেজনাটা আকস্মিক। কিন্তু উপমহাদেশে আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাণিজ্যের ক্রমশ বদলাতে থাকা যে ছবিটা রয়েছে নেপথ্যে, এই আবহে তা দৃষ্টি আকর্ষণ করছে ভূরাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। চর্চায় উঠে আসছে ঠান্ডা যুদ্ধ পরবর্তী বিশ্বে অস্ত্র বাজারের বদলাতে থাকা সমীকরণ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমেরিকাকে নিয়ে বরাবর দ্বিধাগ্রস্ত থাকা ভারত গত এক দশকে রাশিয়ার থেকে সস্তার অস্ত্র কেনা কমিয়ে প্রায় অর্ধেক করে আমেরিকা ও পশ্চিমের দেশগুলির থেকে অস্ত্র কেনা বাড়িয়েছে। অন্য দিকে আবার, পাকিস্তান আমেরিকা থেকে অস্ত্র কেনা একেবারে বন্ধ করে দিয়েছে এই সময়ে। তারা চিনের থেকে অস্ত্র কেনা বাড়িয়ে দ্বিগুণের বেশি করেছে।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের হিসাব অনুযায়ী, এক দশকের মধ্যে ভারত-পাকিস্তানের নিরাপত্তা সরঞ্জাম কেনার ধরন অনেক বদলে গিয়েছে। ২০০৬ থেকে ২০১০ সালে ভারত সামরিক সরঞ্জামের প্রায় ৭৫ শতাংশ কিনত রাশিয়ার থেকে। তা ছাড়া ইজ়রায়েলের থেকে ৬%, আমেরিকা থেকে ২% ও ফ্রান্স থেকে ১% অস্ত্র কেনা হয়েছিল। ২০২০-২৪ সালে রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনা অর্ধেক হয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশে। এ দিকে, ফ্রান্স থেকে এসেছে ৩৩%, ইজ়রায়েল থেকে ১৩% এবং আমেরিকা থেকে ১০%। অন্য দিকে, ২০০৬-১০ সালে পাকিস্তান সামরিক সরঞ্জামের ৩৬% করে কিনেছিল চিন এবং আমেরিকা থেকে। ফ্রান্স থেকে ৭%। ২০২০-২৪ সালে তারা চিন থেকে ৮১% অস্ত্র কিনেছে। ৬% নেদারল্যান্ডস থেকে। আমেরিকা ও ফ্রান্স থেকে কোনও অস্ত্র কেনেনি এই সময়পর্বে।

ঠান্ডা যুদ্ধের সময় ভারত নিরপেক্ষ বিদেশনীতি নিয়ে চলেছিল। পাকিস্তান আমেরিকার সঙ্গে জোটে ছিল। ১৯৬২ সালের চিন যুদ্ধের পরে ভারতকে অল্প মূল্যে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি শুরু করে রাশিয়া। পাকিস্তান ঠান্ডা যুদ্ধের সময়ে আমেরিকার থেকে অস্ত্র ও অর্থ পেয়েছে। সেই সহযোগিতা বজায় ছিল পরেও। নব্বইয়ের দশকে ভারত এবং পাকিস্তান, দুই দেশই পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা করে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে। ছবিটা বদলায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার পরে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সূত্রে। পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহে প্রথম স্থানে উঠে আসে আমেরিকা, চিন দ্বিতীয় স্থানে। এ দিকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওঠে জঙ্গি দমনে দ্বিচারিতার অভিযোগ। আফগান যুদ্ধ মেটার পরে অবশ্য আমেরিকার কাছে পাকিস্তানের গুরুত্বও এখন বিশেষ নেই।

পাকিস্তানের মাটিতে জঙ্গি ঘাঁটিতে অভিযানের আগে এ বার প্রাথমিক ভাবে ভারতের পাশে থাকার যে রকমের বার্তা দিয়েছিল আমেরিকা, তা সাম্প্রতিক অতীতে নজিরবিহীন বলেই মত অনেকের। আমেরিকা দুই দেশের মধ্যে উত্তজনা প্রশমণের কথা বললেও ভারতের এই অভিযানে তাদের সবুজ সঙ্কেত ছিল বলে মত পর্যবেক্ষদের একাংশের। পহেলগামে হামলার পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ফোনে কথা হয় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টের। ঘটনার সপ্তাহ খানেক পরে রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী ফোনে কথা বলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে মোদীর শেষ পর্যন্ত কথা হয় চলতি সপ্তাহে।

এ দিকে, চিন উত্তেজনা কমানোর কথা বলেও পাকিস্তানকে প্রকাশ্য সমর্থন জানিয়েছে। ‘সমস্ত পরিস্থিতির কৌশলগত সহযোগিতার অংশীদার’ বলে পাকিস্তানকে বর্ণনা করেছে তারা। আমেরিকার প্রাক্তন প্রতিরক্ষা আধিকারিক লিন্ডসে ফোর্ড একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, “ভবিষ্যত ভাবতে গেলে মনে করা যেতেই পারে, আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলির সঙ্গে মিলে ভারত চিন ও পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন