যা কখনও হয়নি, তাই হতে চলেছে চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং-এর আসন্ন ভারত সফরে। এই প্রথম দিল্লির বাইরে বিনিয়োগ এবং বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে কেন্দ্র। সেটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাতে।
একটি বৃহৎ প্রতিনিধি দল নিয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর গুজরাতে পা রাখছেন চিনফিং। সফরের প্রথম দিনেই আমদাবাদে মোদী ও চিনফিংয়ের উপস্থিতিতে শিল্প পার্ক সংক্রান্ত চুক্তি সই হবে। প্রথম পর্বের আলোচনাও হবে দুই নেতার মধ্যে।
বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরুদ্দিনের কথায়, “সাধারণত দিল্লিতেই দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয়। এই প্রথম দু’দেশের শীর্ষ নেতার উপস্থিতিতে দিল্লির বাইরে কোনও রাজ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হচ্ছে।”
কিন্তু কেন? আকবরুদ্দিন বলেন, “প্রধানমন্ত্রী দিল্লি ছাড়াও গোটা দেশের বিশালত্বকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে বিশেষ ভাবে আগ্রহী।” আকবরুদ্দিনের ব্যাখ্যায়, মোদী সরকারের নীতি হল বিদেশি নেতাদের সামনে গোটা দেশের রূপরেখা এবং বাণিজ্য সম্ভাবনার দিকগুলি তুলে ধরা। তাই এই পদক্ষেপ। শুধু গুজরাতেই নয়, দিল্লিতেও দু’দেশের মধ্যে একাধিক বাণিজ্য চুক্তি সই হবে।
শিল্প পার্ক সংক্রান্ত চুক্তি সইয়ের দিনই সাবরমতী আশ্রম ঘুরে রাতে দিল্লি পৌঁছবেন চিনা প্রেসিডেন্ট। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়-সহ বিভিন্ন নেতার সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। বিরোধী দলনেতা যদিও নেই, কিন্তু ঐতিহ্য মেনে সর্ববৃহৎ বিরোধী দল কংগ্রেসের নেত্রী সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা করবেন চিনফিং। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকের পাশাপাশি শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা, কৃষি, পরিকাঠামো ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
চিনের সঙ্গে বাণিজ্য ক্ষেত্রে যখন মাইলফলক রচনার চেষ্টা করা হচ্ছে, তখনই লাদাখে চিনা অনুপ্রবেশ ও অশান্তি অব্যাহত। সেখানকার ডেমচকে একটি সরকারি প্রকল্পের অধীনে বাঁধের কাজ চলছে। বাঁধ তৈরির প্রতিবাদে এক সপ্তাহ ধরে চিনা সেনা ভারতীয় সীমান্তের ৫০০ মিটার ভিতরে ঢুকে এসেছে বলে অভিযোগ। চিনা নাগরিকরাও বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তবে বিষয়টি যাতে চিনফিং-এর সফরে ছায়া ফেলে বাণিজ্যিক বিনিময়কে ব্যাহত না-করতে পারে, সে জন্য সতর্ক নয়াদিল্লি। এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আকবরুদ্দিন আজ বলেন, “সীমান্তে আমাদের সেনারা রয়েছেন। তাদের উপর আমাদের আস্থা রয়েছে।” এ কথায় স্পষ্ট যে, সীমান্তে মতান্তরের বিষয়টি নিয়ে বিশেষ প্রতিনিধি স্তরে আলোচনা করে জট ছাড়ানোর চেষ্টা করবে সরকার। কিন্তু পাশাপাশি চিনের মতো এশিয়ার সর্ববৃহৎ অর্থনীতিকে জাতীয় স্বার্থে কাজে লাগানোটাই এখন অগ্রাধিকার মোদীর কাছে।