রাকেশ আস্থানা
সিবিআইয়ের শীর্ষ দুই কর্তার দ্বৈরথ চূড়ান্ত ধাপে গিয়ে পৌঁছল।
ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে ১৫ অক্টোবর সিবিআই তাদেরই স্পেশ্যাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানার নামে এফআইআর দায়ের করেছে বলে সিবিআইয়ের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে। অভিযোগ, মাংস ব্যবসায়ী মইন কুরেশি-র কাছ থেকে ২ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন আস্থানা। ঘরোয়া ভাবে এ খবর জানালেও সিবিআই সরকারি ভাবে মুখ খোলেনি। রবিবার সিবিআইয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আজ রবিবার। জানাও মুশকিল।’’
গোটা ঘটনায় সিবিআইয়ের ডিরেক্টর অলোক বর্মার হাতই দেখছে আস্থানা শিবির। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, অলোক নাকি আস্থানাকে সাসপেন্ড করার জন্য পিএমও-তে ফাইলও পাঠিয়েছেন। অলোক বা আস্থানা, কারও প্রতিক্রিয়াই অবশ্য জানা যায়নি।
তবে শনিবার রাতে এই খবর সামনে আসার পরে রবিবার সন্ধ্যায় আস্থানা শিবিরের পক্ষ থেকে পাল্টা অভিযোগের কথাও প্রকাশ পাচ্ছে। সেখানে বলা হয়েছে, অগস্ট মাসে ডিরেক্টর অলোক বর্মার নামে ১০টি দুর্নীতির অভিযোগ এনে ক্যাবিনেট সেক্রেটারির কাছে আস্থানা একটি চিঠি দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, সতীশ সানা নামে এক ব্যক্তি কুরেশি সংক্রান্ত মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য অলোককে ২ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন। অভিযোগ, কুরেশির বেআইনি কারবারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এই সতীশও।
সিবিআইয়ের শীর্ষ দুই কর্তার মধ্যে এই নজিরবিহীন দ্বৈরথ নিয়ে সরগরম রাজধানী। অস্বস্তিতে বিজেপি সরকারও। সিবিআইয়ে কর্মরত এমন শীর্ষ কর্তার বিরুদ্ধে এফআইআর (আরসি ১৩-এ, ২০১৮) এর আগে কখনও হয়েছে বলেও মনে করতে পারছেন না প্রাক্তন কর্তারা।
ডিরেক্টরের পদ থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে অবসর নেওয়ার কথা অলোকের। তার পরে আস্থানারই ডিরেক্টর হওয়ার কথা। এই অবস্থায় অলোক এফআইআর করে দিয়ে আস্থানার ডিরেক্টর হওয়ার পথে পাঁচিল তোলার চেষ্টা করলেন বলে মনে করছেন রাকেশ-ঘনিষ্ঠরা। বলা হচ্ছে, যাঁর নামে সিবিআই নিজেই এফআইআর করে, তাঁকে কী করে পরবর্তী ডিরেক্টর করা হবে?
আস্থানা শিবিরের পাল্টা অভিযোগ, এফআইআর করার চার দিন পরে শুক্রবার কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনারকে চিঠি দিয়ে আস্থানা জানিয়েছিলেন, তিনি সতীশকে গ্রেফতার করে জেরা করতে চান। অভিযোগ, এই অনুমতি চেয়ে তিনি ২০ সেপ্টেম্বর ডিরেক্টরের কাছে ফাইল পাঠান। কিন্তু চার দিন পরে সেই ফাইল পাঠিয়ে দেওয়া হয় অন্য এক শীর্ষ কর্তার কাছে। সেই ফাইল ৩ অক্টোবর আবার ডিরেক্টরের কাছে পাঠানো হলেও সেটি এখনও তাঁর কাছেই রয়েছে। এর মাঝে আস্থানাই উদ্যোগী হয়ে সতীশের বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারি করার আবেদন জানান বলে দাবি একটি শিবিরের। একটি খবর অনুযায়ী, এই ঘুষ কাণ্ডের ‘মিডলম্যান’ মনোজ কুমার প্রসাদকে ১৫ অক্টোবর দুবাই থেকে ফেরার পরেই সিবিআই গ্রেফতার করেছে। মনোজ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে গোপন জবানবন্দি দিয়ে আস্থানার ঘুষ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বলেও দাবি করা হয়েছে! বলা হয়েছে, ওই এফআইআর-এ গোয়েন্দা বাহিনী ‘র’-এর অফিসার সমন্ত কুমার গোয়েলের নামও উল্লেখ করা আছে। যদিও তাঁকে রাকেশের মতো সরাসরি অভিযুক্ত করা হয়নি।
খবরে প্রকাশ, গত বছরের অক্টোবরে আস্থানার নাম স্পেশাল ডিরেক্টর হিসেবে মনোনীত হলে আপত্তি জানান অলোক। আস্থানার বিরুদ্ধে অভিযুক্তদের ‘সুবিধা’ পাইয়ে দেওয়ার তদন্ত চলছে — অলোকের তোলা এই যুক্তি সে বার ধোপে টেকেনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, গুজরাত ক্যাডারের আইপিএস আস্থানাকে এই বছরের মাঝামাঝি সারদা সহ যাবতীয় চিটফান্ড তদন্তের ভার দেওয়া হয়। কলকাতায় এসে তিনি তদন্ত তদারকি করে যান। এখন আস্থানার বিরুদ্ধে সিবিআই ব্যবস্থা নিলে সারদা-রোজ ভ্যালি তদন্তে তার প্রভাব পড়বে কি না, তা নিয়েও এ বার সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এমনকী অগুস্তা-ওয়েস্টল্যান্ড এবং বিজয় মাল্যের ঋণ খেলাপ নিয়ে তদন্তের দায়িত্বেও রয়েছেন আস্থানা।
এ দিকে কুরেশির বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের বেশ কয়েকটি মামলার তদন্ত চলছে। অভিযোগ, সেই কুরেশির সঙ্গে আস্থানার হোয়াটসঅ্যাপ বার্তার কিছু অংশ নাকি সিবিআইয়ের হাতে এসেছে। দাবি, মনোজের ফোনে আড়ি পেতে পাওয়া গিয়েছে তাঁর সঙ্গে আস্থানার কিছু কথোপকথনও। কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনকে সেই সব নথি
দেখানোর পরে এবং সেখান থেকে সবুজ সঙ্কেত আসার পরেই নাকি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ, মোট ৫ কোটি টাকার কথা হয়েছিল।
সিবিআইয়ের শীর্ষ কর্তার বিরুদ্ধে মামলার উদাহরণ অবশ্য এই প্রথম নয়। ২-জি মামলায় অবসরপ্রাপ্ত ডিরেক্টর রঞ্জিত সিংহের ভূমিকা নিয়ে তদন্ত করছে সিবিআই। এই কুরেশির সঙ্গেই প্রাক্তন ডিরেক্টর এ পি সিংহের ঘনিষ্ঠতা নিয়েও তদন্ত চলছে। সেই দুই মামলার এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। আস্থানার বিরুদ্ধে আপাতত যে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, তার ভিত্তিতে তাঁকে কতটা দায়ী করা যাবে— সে প্রশ্নও তুলছেন রাকেশ ঘনিষ্ঠ অফিসারেরা।