শতাব্দী প্রাচীন ইঞ্জিনগুলোর কলকব্জা সবই ইংল্যান্ডে তৈরি। কবেই বন্ধ হয়েছে কোম্পানি। ধুঁকতে-ধুঁকতে স্থবির হয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্যতম দার্জিলিং হিমালয়ান রেলের স্টিম ইঞ্জিনরা। তাদের জায়গা নিয়েছে ডিজেল ইঞ্জিন। অবশেষে, রাঁচীর হিন্দুস্তান ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের হাত ধরে ফের পাহাড়ের ন্যারো গেজ লাইনে ফিরতে চলেছে বাঙালির ঐতিহ্য ও আবেগের সঙ্গে জড়িত টয় ট্রেনের কয়লার ইঞ্জিনরা।
দার্জিলিং হিমায়লয়ান রেলের ইঞ্জিনগুলি ‘বি ক্লাস’-এর। ইংল্যান্ডের ‘শার্প, স্টুয়ার্ট অ্যান্ড কোম্পানি’ এবং পরে ‘নর্থ ব্রিটিশ লোকোমোটিভ কোম্পানি’ ১৮৮৯ থেকে ১৯২৫ সালের মধ্যে এমন ৩৪টি ইঞ্জিন তৈরি করেছিল। অবশ্য এখন ১০টির মতো ইঞ্জিন কার্যক্ষম আছে। সেগুলিও খারাপ হতেই থাকে। তিনধরিয়ার ওয়ার্কশপে কোনওমতে জোড়াতালি দিয়ে কলকব্জা বদলে ইঞ্জিনগুলি চালানো হচ্ছে। চারটি ডিজেল ইঞ্জিন দিয়ে চালানো হচ্ছে যাত্রী ট্রেনগুলি।
আরও পড়ুন
৮ অগস্ট রাজ্যসভার ভোট, বাংলার ৬ আসনের মধ্যে ৫টিতেই নিশ্চিত তৃণমূল
কয়লার ইঞ্জিনগুলোর ভিতরের কল-কবজা ঠিক আগের মতো করে তৈরি করা সম্ভব কি না— তা নিয়ে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের ইঞ্জিনিয়াররা বছর তিনেক আগে রাঁচির ‘হিন্দুস্তান ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন’ বা এইচইসির সঙ্গে যোগাযোগ করে। সেখানকার বিশেষজ্ঞরা পুরনো ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশের ডায়াগ্রাম তৈরি করেন। এর পর তৈরি করা হয় যন্ত্রাংশগুলি। পরীক্ষা করে দেখা যায় রাঁচীতে তৈরি কলকব্জা বিলিতি ইঞ্জিনে একেবারে খাপ খেয়ে গিয়েছে।
উৎফুল্ল উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল সিদ্ধান্ত নেয়, বিকল ইঞ্জিনগুলিকে এইচইসির সাহায্যে ফের সচল করা হবে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখপাত্র জয়ন্ত শর্মা বলেন, ‘‘শুধু পর্যটন বিকাশই নয়, বাংলা তথা ভারতের কাছে দার্জিলিং টয় ট্রেনের গুরুত্ব স্বতন্ত্র। ডিজেল ইঞ্জিন বিকল্প হলেও, কয়লার ইঞ্জিনের রোম্যান্স ও ঐতিহাসিক ছোঁয়া সেখানে থাকে না। তাই জোড়াতালি নয়, সঠিক যন্ত্রাংশ লাগিয়ে ইঞ্জিনগুলি ফের সচল করা গেলে তা বিশ্ব ঐতিহ্যের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে। নতুন যন্ত্র লাগানো হলে ইঞ্জিনগুলি আরও ৩০-৪০ বছর চলতে পারে।’’
সিদ্ধান্ত হয়েছে, টয় ট্রেনের কয়লার ইঞ্জিনে যন্ত্রাংশ সরবরাহ করা নিয়ে আগামী ১৯ মে, কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী রাজেন গোঁহাইয়ের সঙ্গে এইচইসি কর্তাদের চুক্তি স্বাক্ষর হবে। অনুষ্ঠান হবে উত্তর-পূর্ব রেলের সদর দফতর মালিগাঁওতে।