পাঠ্য: সচেতনতা বাড়াতে চলছে ক্লাস। রাঁচীতে। —নিজস্ব চিত্র।
স্টেডিয়ামে ঝাড়খণ্ডের কোচদের প্রশিক্ষণ চলছিল। রাঁচীর মোরাবাদী ফুটবল স্টেডিয়ামের জড়ো হয়েছেন রাজ্যের শ’খানেক কোচ। সরকারি উদ্যোগে ক্রীড়া ক্ষেত্রের বিভিন্ন বিষয়ের কোচদের দেওয়া হচ্ছে আরও উন্নত প্রশিক্ষণ। সকালের প্রশিক্ষণ পর্ব শেষ। এখানে ওখানে চলছে কোচদের জটলা। হঠাৎই মূল ফটক দিয়ে একটি গাড়ি ঢুকল। গাড়ি থেকে নামলেন কালো কোট-টাই পরা রাঁচী হাইকোর্টের দুই আইনজীবী। স্যার এসে গিয়েছেন। সব বিভাগের সব কোচরাই ফের ছুটলেন। এ বার মাঠে নয়, ক্লাস রুমে। থিওরি ক্লাস, বিষয়: দ্য প্রিভেনশন অফ চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস অ্যাক্ট (পকসো আইন)!
চার দিকে যে ভাবে প্রশিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগে অভিযুক্ত হচ্ছেন, তাতে তাঁদের এই পাঠ আবশ্যিক বলেই মনে করছেন ঝাড়খণ্ড প্রশাসন। আর সে কারণেই ফুটবল, অ্যাথলেটিক্স, হকি, তীরন্দাজী সব বিভাগের কোচদের মাঠ থেকে ক্লাসরুমে টেনে আনার এই সিদ্ধান্ত। শিক্ষক-আইনজীবীরা তাঁদের সহজ ভাষায় শেখাচ্ছেন ‘পকসো’ আইন। স্লাইড শো’র মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে তাঁদের। বোঝানো হচ্ছে শিক্ষার্থীর শরীরে কোন অংশ কেমন ভাবে তাঁরা ছুঁতে পারেন। বোঝানো হচ্ছে, এই সীমারেখার বাইরে গেলে তাঁদের কী শাস্তি হতে পারে তাও।
আইনজীবী মিথিলেশ পাণ্ডের ক্লাসে উঠে এলো সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনা। কলকাতার জি ডি বিড়লা স্কুলের শিশুছাত্রীর যৌন নির্যাতনের প্রসঙ্গও এসেছে অবধারিত ভাবেই। লাতেহারের মহুয়াটাঁড় থেকে এসেছেন অ্যাথলেটিক্স কোচ টারসিটিয়াস কুজুর। উঠে দাঁড়িয়ে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ছোট বাচ্চারা ভল্ট খেতে গিয়ে পড়ে যায়। হাতে পায়ে চোট পায়। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা আমাদেরই করতে হয়। ‘পকসো আইনের’ ভয়ে তাহলে এই সব খুদে খেলোয়ারদের শরীর স্পর্শ করাই যাবে না?!’’ সিমডেগার হকি কোচ বাসব টোপ্পর প্রশ্ন, ‘‘বাচ্চা ছেলেমেয়েদের হকির প্রশিক্ষণ দিতে গিয়ে কতবারই তো আমাদের হাতে ধরে খেলা শেখাতে হয়। খুদে বাচ্চারা মনোযোগী না হলে মারধরও তো করেছি। ভাল খেললে আদরও করেছি। তাহলে কী এ সব বন্ধ! আমাদের রোবট হয়ে যেতে হবে?’’
কোচদের এই সব প্রশ্নের উত্তর মিথিলেশবাবুদের জানা নেই। তাঁদের বক্তব্য, এই আইন। এই ভাবে চলুন। শিশুদের যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ‘কেস’-এর কথাও বিশদে আলোচনা করেন তিনি। সেই সব মামলায় অভিযুক্তরা পকসো আইনে কী ভাবে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন, জানালেন তাও।