স্করপেন তথ্য পড়েই ছিল খোলা হাটে, দাবি অস্ট্রেলিয়ার সংবাদপত্রে

স্করপেন ডুবোজাহাজের গোপন তথ্য শুধু সংবাদমাধ্যমেই ফাঁস হয়নি। তা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের হাতে এসে পড়েছিল! এমনকী তা একটি ইন্টারনেট সার্ভারে দীর্ঘ দিন রাখাও ছিল! যেখান থেকে আরও অনেকের পক্ষেই তা দেখা সম্ভব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩৭
Share:

স্করপেন ডুবোজাহাজের গোপন তথ্য শুধু সংবাদমাধ্যমেই ফাঁস হয়নি। তা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের হাতে এসে পড়েছিল! এমনকী তা একটি ইন্টারনেট সার্ভারে দীর্ঘ দিন রাখাও ছিল! যেখান থেকে আরও অনেকের পক্ষেই তা দেখা সম্ভব। কিন্তু ফ্রান্স বা ভারত সরকার তার কিছুই জানত না বলে জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদপত্র ‘দ্য অস্ট্রেলিয়ান’।

Advertisement

অস্টেলিয়ার এই সংবাদপত্রেই প্রথম প্রকাশিত হয়, ভারতীয় নৌসেনার স্করপেন ডুবোজাহাজের যাবতীয় গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে গিয়েছে। এর ফলে ওই ডুবোজাহাজ ব্যবহার কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করছে নৌসেনা। অস্ট্রেলিয়া সরকারও একই যুদ্ধজাহাজ কিনছে বলে সে দেশেও স্করপেন নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ‘দ্য অস্ট্রেলিয়ান’ জানিয়েছে, যে ব্যক্তি এই বিষয়টি তাদের নজরে আনেন, তিনি সোমবার সমস্ত গোপন নথি সম্বলিত ডিস্কটি অস্ট্রেলিয়া সরকারের হাতে তুলে দেবেন। ওই ব্যক্তির উদ্দেশ্য ছিল অস্ট্রেলিয়া সরকারকে জানানো যে, তারা ফ্রান্সের যে সংস্থার থেকে স্করপেন কিনছে, তারাই ভারতকেও স্করপেন সরবরাহ করছে। কিন্তু ভারতের স্করপেন সংক্রান্ত গোপন নথির নিয়ন্ত্রণ আর তাদের হাতে নেই।

স্করপেন নিয়ে শোরগোলের আবহে শুক্রবারই নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর দাবি করেছিলেন, ফাঁস হওয়া গোপন নথিতে ডুবোজাহাজের অস্ত্রশস্ত্র সংক্রান্ত কোনও তথ্য নেই। নৌসেনা কর্তাদের যুক্তি ছিল, ডুবোজাহাজের টর্পেডোর বরাতই দেওয়া হয়নি। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার সংবাদপত্রটি জানিয়েছে, ফাঁস হয়ে যাওয়া গোপন নথিতে ডুবোজাহাজের অস্ত্রনিক্ষেপ ব্যবস্থার তথ্যও রয়েছে। পর্রীকর যে ভুল বলছেন, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে সোমবারই

Advertisement

ওই নথি প্রকাশ করে দেবে সংবাদপত্রটি। তবে ভারতের নিরাপত্তায় যাতে আঘাত না আসে, সে জন্য এই সংক্রান্ত স্পর্শকাতর তথ্য কালো কালিতে ঢাকা থাকবে।

চাপের মুখে ফরাসি জাহাজ নির্মাতা সংস্থা ডিসিএনএস গত কালই প্যারিসে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ দায়ের করেছিল। অস্ট্রেলিয় সংবাদপত্রটির দাবি, পাঁচ বছর আগে ডিসিএনএস-এ কাজ করার সময় ফ্রান্সেরই এক প্রাক্তন নৌসেনা অফিসার এবং তাঁর এক ফরাসি সহযোগী স্করপেন সংক্রান্ত গোপন তথ্য সরিয়ে ফেলেন। এর পরে তাঁরা দু’জনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি বেসরকারি প্রতিরক্ষা সংস্থায় কাজ করতে শুরু করেন। ওখানে কাজে লাগবে ভেবেই তাঁরা ওই তথ্য সরিয়েছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই ওই বেসরকারি প্রতিরক্ষা সংস্থাটির কর্মীদের হাতে সে সব তথ্য চলে আসে। কিছু দিন পরে ওই প্রাক্তন নৌসেনা অফিসার এবং তাঁর সহযোগীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় এবং স্করপেন সংক্রান্ত গোপন তথ্য সংস্থার সিঙ্গাপুরের সদর দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

অস্ট্রেলিয় সংবাদপত্রটির দাবি, ২০১৩-র এপ্রিলে স্করপেন সংক্রান্ত গোপন তথ্য একটি ইন্টারনেট সার্ভারে রাখা হয়। ওই সার্ভারে কত দিন ধরে ওই তথ্য ছিল, তা-ও কারও জানা নেই। যে কোনও বিদেশি গুপ্তচর সংস্থাই ওই সময়ের মধ্যে সার্ভার হ্যাক করে সেই তথ্য পেয়ে যেতে পারে। কেউ পেয়ে গিয়েছে কি না, সেটা জানা নেই। ফলে বিপদটা থাকছেই বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

সংবাদপত্রটির দাবি, এর পর একটি ডিস্কে করে সাধারণ ডাকে তা সিডনিতে এক ব্যক্তির কাছে পাঠানো হয়। প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিটির পক্ষে ওই গোপন তথ্যের গুরুত্ব বুঝতে দেরি হয়নি। তিনি ওই তথ্য নতুন ডিস্কে ভরে পুরনো ডিস্ক থেকে তথ্য মুছে তা হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে নষ্ট করে ফেলেন। তার পর নতুন ডিস্কটি নিজের অফিসের ক্যাবিনেটে রেখে দেন। সেখানেও ওই ডিস্ক

বেশ কিছু দিন পড়ে ছিল। এখন অস্ট্রেলিয়াও স্করপেনের বরাত দেওয়ায় তিনি সরকারকে তা জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে ‘দ্য অস্ট্রেলিয়ান’-এর দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন