ভুয়ো মার্কশিট দেখিয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা জাহির করার অভিযোগে কিছু দিন আগেই দিল্লি সরকারের আইনমন্ত্রীর পদ খুইয়েছেন জীতেন্দ্র সিংহ তোমর! সামনের রবিবার দিল্লিতে এক বছর পূর্ণ করবে অরবিন্দ কেজরীবাল সরকার। তার চার দিন আগে এ বার দুর্নীতির অভিযোগ উঠে গেল দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী ইমরান হুসেনের বিরুদ্ধে।
কেজরীবাল মন্ত্রিসভার সংখ্যালঘু মুখ হলেন ইমরান। থাকেন পুরনো দিল্লির বাল্লিমারান এলাকায়। তাঁর বিরুদ্ধে স্থানীয় এক বাসিন্দা সম্প্রতি একটি স্টিং অপারেশন চালান। আজ সেই ভিডিও এবং অডিও ফুটেজ প্রকাশ্যে এনে কংগ্রেস অভিযোগ করে, রীতিমতো তোলাবাজি চালাচ্ছেন ইমরান। স্বচ্ছ প্রশাসনের জন্য আন্দোলনে নেমে দিল্লিতে যে সরকার পত্তন করেছিলেন কেজরীবাল, দেখা যাচ্ছে, তাঁর ঝুলি থেকে একটার পর একটা দাগী মুখ বেরিয়ে পড়ছে!
যদিও স্টিং অপারেশনের সিডি-তে ইমরানের মুখ দেখা যাচ্ছে না, বা তাঁর গলার স্বর নেই। তবে এটা দেখা যাচ্ছে, তাঁর ভাই ফুকরান ও ব্যক্তিগত সহায়ক হামাদ মন্ত্রীর নাম নিয়ে বহালতবিয়তে তোলাবাজি চালাচ্ছেন। ইমরানের ভাই ও হামাদের উপর স্টিং অপারেশনটি করেন বাল্লিমারানের স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ কাসেম। পৈতৃক ভিটেয় পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি বানাচ্ছেন কাসেম। কিন্তু ফুকরান ও হামাদ কখনও তাঁর বাড়ি বয়ে গিয়ে বা কখনও ফোনে তাঁকে হুমকি দেন যে সে জন্য ৩০ থেকে ৩৫ লক্ষ টাকা মন্ত্রীকে দিতে হবে। কিন্তু মেহনতের পয়সা খামোখা মন্ত্রীকে দেবেন কেন? জবাবে ইমরানের ভাই ও সহায়ক বলেন, ‘‘বাহ! ভোটে লড়তে খরচ নেই? নির্বাচনে লড়তে ও তার পর মন্ত্রিত্ব পেতে পাঁচ থেকে সাত কোটি টাকা চলে গেছে! সেই টাকা উঠবে কোথা থেকে? এ ভাবেই তো আসবে!’’
ভিডিও এবং অডিও ফুটেজ দু’টি ফাঁস করে দিয়ে কংগ্রেস আজই মন্ত্রিসভা থেকে ইমরানকে অপসারণের দাবি জানিয়েছে। সর্বভারতীয় কংগ্রেসের মুখপাত্র তথা দিল্লির প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অজয় মাকেন বলেন, ‘‘ইমরান ইস্তফা না দিলে কংগ্রেস তাঁর বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করবে। সেই সঙ্গে সিবিআইয়ের কাছেও তদন্তের দাবি জানাবে।’’ কেজরীবালকে খোঁচা দিয়ে মাকেন এ-ও বলেন, ‘‘অন্না হজারের হাত ধরে দুর্নীতিদমনে লোকপাল বিল পাশের দাবিতে কেজরীবাল আন্দোলন শুরু করেছিলেন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, আগে-পিছে দুর্নীতিপরায়ণদের নিয়ে ঘুরছেন কেজরীবাল। আপ-এর এক তৃতীয়াংশ বিধায়কের বিরুদ্ধে কোনও না কোনও অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।’’
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আম আদমি পার্টি এখনও কংগ্রেসের অভিযোগের জবাব দেয়নি। শুধু কেজরীবাল আজ জানিয়েছেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্ষপূর্তির দিন বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত একটানা দু’ঘণ্টা তিনি দিল্লির মানুষের সঙ্গে ‘ফোন পে চর্চা’ করবেন। ফোনে মানুষের কাছ থেকে প্রশ্ন শুনবেন ও জবাব দেবেন।
কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, ইমরানের ইস্তফা না হলে সে দিন ফোন করে কেজরীবালের সেই অনুষ্ঠানে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হবে। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, দিল্লিতে কেজরীবালের জনপ্রিয়তা কমাতে অজয় মাকেনরা এমনিতে সক্রিয়। তবে আরও একটি কারণে এখন কেজরীবালের হাটে হাঁড়ি ভাঙতে চায় কংগ্রেস। সামনে পঞ্জাব নির্বাচন। সেখানে আপ এখন ভালমতোই একটি রাজনৈতিক শক্তি। কিন্তু আপ-বিরোধী ভোটে ভাগ বসালে কংগ্রেস সেখানে সমস্যায় পড়বে। বরং বিরোধী ভোটের কাটাকাটিতে পঞ্জাবে ফের বিজেপি-অকালির সুবিধা হয়ে যাবে। তাই ভাবমূর্তি মলিন করতে এখন আদাজল খেয়ে নেমেছেন কংগ্রেস নেতারা। সন্দেহ নেই, ইমরানের ইস্তফা না হলে কেজরীবালের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান মাটি করে দিতে কংগ্রেস চেষ্টার ত্রুটি রাখবে না।