গান্ধীমূর্তির নীচে ধর্নায় তৃণমূল সাংসদরা।
‘তিন ভুবনের পারে’ চলচ্চিত্রের সেই জনপ্রিয় গান, ‘দূরে দূরে কাছে কাছে’ কি চলতি বাদল অধিবেশনে দুই প্রধান বিরোধী দলের থিম সং হয়ে উঠল?
এই দুই দল কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেস। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই রাজধানীতে শোনা যাচ্ছে এই গানের সুর! রাজ্যসভায় তৃণমূল নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন সংসদের চলতি বাদল অধিবেশন শুরুর মুখেই সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, তাঁদের উপযুক্ত সম্মান দিয়ে সমান চোখে দেখলে মসৃণ ভাবে কক্ষ সমন্বয় হতে পারে। কংগ্রেসের দিক থেকেও এর পরে নরম স্বরই শোনা গিয়েছে। কংগ্রেস নেতারা বলেছিলেন, আলোচনার মাধ্যমে বিরোধিতা দূর করে বিজেপির বিরুদ্ধে ঝাঁপানো হবে একযোগে। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, সেই সূত্র মেনে মঙ্গলবার রাতে বিরোধী কৌশল নিয়ে দীর্ঘ ক্ষণ ফোনে কথাও হয়েছে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খড়্গের। কিন্তু দিনের বেলায় কংগ্রেস সনিয়া গান্ধীর ইডি-অফিসে হাজির নিয়ে যে ভাবে সক্রিয়তা দেখিয়েছে (রাষ্ট্রপতিকে লেখা বিরোধীদের সই করা চিঠি-সহ) তার থেকে দূরেই থেকেছে তৃণমূল। এমনকি নিজেরা ভুক্তভোগী হলেও ইডি-র নামোচ্চারণ শোনা যায়নি তৃণমূলের সাংসদদের কণ্ঠে।
আবার বুধবার দেখা গিয়েছে তৃণমূল যখন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সংসদে গান্ধীমূর্তির নীচে ধর্না দিচ্ছে, সামান্য দূরেই কংগ্রেস ধর্না দিচ্ছে মূল্যবৃদ্ধি, সিবিআই-ইডি-র অপব্যবহার এবং বুধবার লোকসভা থেকে ৪ জন কংগ্রেস সাংসদকে সাসপেন্ড করার প্রতিবাদে। দূরত্ব যেন অনতিক্রমণীয়!
বুধবার সকালে মল্লিকার্জুন খড়্গে যখন সমস্ত বিরোধী দলের নেতাদের নিয়ে সংসদীয় কৌশল স্থির করার জন্য বৈঠক করেন প্রধান বিরোধী দলগুলি হাজির থাকলেও, সেখানে যায়নি তৃণমূল। এই না-যাওয়ার পিছনে যে তত্ত্ব দল দিচ্ছে, তা হল—‘আমরা সবাই সমমনস্ক বিরোধী দল। আমাদের কৌশল একই। কিন্তু প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছুটা তারতম্য থাকা স্বাভাবিক। কারণ কিছু সমমনস্ক দল কংগ্রেসের জোটসঙ্গী। এই তালিকায় রয়েছে শিবসেনা, এনসিপি, ডিএমকে। তাদের কংগ্রেসের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। আর ‘অন্য’ তালিকায় রয়েছে তৃণমূল, যারা কারও জোটসঙ্গী নয়।’ বুধবারের সাংবাদিক সম্মেলনে ডেরেক কংগ্রেসের নামোল্লেখ না-করে ‘গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি’ হিসাবেই কংগ্রেসকে বার বার সম্বোধন করেছেন। আবার আজ কংগ্রেস নেতা মানিকম টেগোর টুইট করে ‘সৌগত রায় দাদা’, এবং ‘কল্যাণদা’ (বন্দ্যোপাধ্যায়)-কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মঙ্গলবার লোকসভা থেকে কংগ্রেসের চার জন সাংসদকে সাসপেন্ড করার পরে তৃণমূল কংগ্রেসের এই দুই বর্ষীয়ান সাংসদ কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। পাশাপাশি অবশ্য ডিএমকে-র টি আর বালু এবং এনসিপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলেকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের টুইট, কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম এবং আপ সাংসদেরা সম্মিলিত ভাবেই সংসদ চত্বরে ৫০ ঘণ্টা ধর্নায় রয়েছেন। তাঁরা যেমন সংসদ থেকে বহিষ্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, তেমনই মূল্যবৃদ্ধি ও খাদ্যদ্রব্যে জিএসটি চাপানোরও। কংগ্রেস কি আরও কিছুটা ‘কাছে কাছে’ এল?