ক্ষমা চান প্রধানমন্ত্রী, ‘চৌরাস্তায়’ নোটবন্দির তুলোধোনা কংগ্রেসের

কারণ, আজ নোটবন্দির জন্মদিন। তিন বছর আগে আজকের দিনেই রাত আটটায় আচমকাই টেলিভিশনের পর্দায় আবির্ভাব হয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৪২
Share:

কংগ্রেসের প্রতিবাদ। ছবি: পিটিআই।

চৌরাস্তায় জড়ো হয়েছে কংগ্রেস। প্রধানমন্ত্রীর অপেক্ষায়।

Advertisement

কারণ, আজ নোটবন্দির জন্মদিন। তিন বছর আগে আজকের দিনেই রাত আটটায় আচমকাই টেলিভিশনের পর্দায় আবির্ভাব হয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর। এক ধাক্কায় বাতিল করে দিয়েছিলেন পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট। বিরোধীদের অনেকে বলেন, এখনও কানে আতঙ্কের মতো বাজে ‘মিত্রোঁ’ শব্দটি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পরে বলেছিলেন, তাঁকে জীবন্ত জ্বালিয়ে দিলেও তিনি থামবেন না। দেশ শুধু তঁকে ৫০ দিন দিক। তার পরে তাঁর কোন গলদ বা অসৎ উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া গেলে যে কোনও সাজা মাথা পেতে নেবেন দেশের যে কোনও চৌরাস্তায়।

সনিয়া গাঁধীর নির্দেশে আজ রাজধানীর চৌরাস্তার মোড়েই অপেক্ষায় রইলেন কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। প্রধানমন্ত্রী না-আসায় শেষ পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখালেন। প্রতিবাদ জানালেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে। দাবি তুললেন, ক্ষমা চাইতে হবে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে। যে দিল্লি পুলিশকে ক’দিন আগেই আইনজীবীদের হাতে হেনস্থা হতে হয়েছে, তাদের পক্ষেও স্লোগান তুলল কংগ্রেস। বললেন, ‘‘পুলিশ-বিরোধী মোদী, হায় হায়!’’ আর সনিয়া, রাহুল গাঁধী, প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরারাও তোপ দাগলেন প্রধানমন্ত্রীকে।

Advertisement

এ দিন দীর্ঘ বিবৃতি দিয়েছেন সনিয়া। বলেছেন, ‘‘আজ নোটবন্দির তুঘলকি বিপর্যয়ের তিন বছর। মানুষের উপর অত্যাচারী সরকারের প্রহার। নরেন্দ্র মোদীর প্রতিশ্রুতি ছিল, কালো টাকা, জাল নোট, সন্ত্রাস-মাওবাদ শেষ হবে। সুপ্রিম কোর্টকে সরকার বলল, ৩ লক্ষ কোটি কালো টাকা আসবে। নগদের বদলে অর্থনীতি ডিজিটাল হবে। সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ মোদী। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বলছে ৯৯.৩ শতাংশ নোট ফিরে এসেছে, জাল টাকাও ধরা পড়েছে সামান্য, সন্ত্রাস ও মাওবাদী হানা বরং বেড়েছে। নগদ রাখার প্রবণতাও বাড়ছে।’’

আরও পড়ুন: দ্বিপাক্ষিক অনাস্থার ছায়ায় যাত্রা শুরু করতারপুরে

সনিয়ার প্রশ্ন, ‘‘নোটবন্দি তবে করল কী?’’ নিজেই তার জবাব দিলেন, এক কোটির বেশি রোজগার খেল, জিডিপি ২ শতাংশ কমল। সব মিলিয়ে মোদী সরকারের খারাপ ভাবে চলা প্রশাসনের মডেলটিই প্রকট হল। এর উপর অবশ্য মিথ্যা প্রচার করে নোটবন্দির মতো হাস্যকর ও সঙ্কীর্ণ দৃষ্টির পদক্ষেপ থেকে মোদী সরকার দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছে। ২০১৭ সালের পর বিজেপির কেউ এই নিয়ে কথা বলেননি। ভেবেছিলেন, মানুষ ভুলে যাবে। সনিয়া বলেন, ‘‘কংগ্রেস সুনিশ্চিত করবে দেশ, ইতিহাস যাতে না-ভোলে ও ক্ষমা না-করে।’’

নোটবন্দিকে সরাসরি জঙ্গি হানার সঙ্গে যোগ করে রাহুলও বলেন, ‘‘এই হামলা অর্থনীতিকে ধ্বংস করল, প্রাণ নিল, ব্যবসা চৌপাট করল, কোটি কোটি বেকার তৈরি করল। অথচ হামলাকারীর বিচার হল না। প্রিয়ঙ্কাও প্রশ্ন তুললেন, ওই ‘তুঘলকি’ পদক্ষেপের দায় কে নেবেন। শশী তারুর টুইট করলেন, ‘‘না, প্রধানমন্ত্রী, গণতান্ত্রিক দেশে কাউকে জীবন্ত পোড়ানো হয় না। তা উচিতও নয়। তবে নোটবন্দির বিপর্যয়ের জন্য এক বার ক্ষমা চাইতে পারতেন। ব্রিটিশদের কাছে এটাই তো আমরা দীর্ঘদিন ধরে চেয়ে এসেছি, এত মানুষের ক্ষতি করার জন্য এক বার ক্ষমা চাক তারা।’’

কিন্তু গোটা দিন বিজেপির কোনও বড় নেতা নোটবন্দি নিয়ে উচ্চবাচ্য করলেন না। দিনের শেষে সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়ার ভার পড়ল নীতি আয়োগের উপাধ্যক্ষ রাজীব কুমারের উপরে। যিনি সনিয়া-রাহুল-প্রিয়ঙ্কা, তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েনদের মতো রাজনৈতিক নেতাদের মোকাবিলা করতে নামলেন টুইটারে। তাঁর বক্তব্য, কালো টাকা ও আয় বহির্ভূত সম্পত্তি যাঁরা রাখতে চান, তাঁদের কাছেই নোটবন্দি একটি অভিশাপ। কালো টাকার অর্থনীতিকে সাফ করে সৎ ব্যক্তিদের পুরস্কার দেওয়াই নোটবন্দির লক্ষ্য। শীঘ্রই এর ইতিবাচক ফল চোখে পড়বে।

প্রশ্ন হল, কবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন