Congress

Rahul Gandhi: চিন্তন শিবিরের শেষ দিনে কংগ্রেসের অভিমুখ নির্ণয় করবেন রাহুল গান্ধীই

সচিনের সমর্থকরা বিক্ষোভ দেখালেন। তাঁদের সন্দেহ, এর পিছনে নিশ্চিত মুখ্যমন্ত্রী গহলৌতের হাত রয়েছে। কারণ, চিন্তন শিবিরের আয়োজন করে তিনি বাহবা কুড়োতে চাইছেন। গহলৌতের শিবিরের বক্তব্য, উদয়পুর নগর নিগম যে বিজেপির দখলে। তাঁরা সচিনের ছবি সরিয়েছে। গহলৌত কী করবেন!

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

উদয়পুর শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২২ ০৭:১৪
Share:

চিন্তন শিবিরে যোগ দিতে যাওয়ার পথে সরাই রোহিলা রেল স্টেশনে রাহুল গান্ধী। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

মুঘল সম্রাট আকবর চিত্তোরগড় দখল করে ফেলায় মেবাড়ের রাজা দ্বিতীয় উদয় সিংহ উদয়পুরে এসে রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। নরেন্দ্র মোদীর দাপটে কংগ্রেসের একার দখলে থাকা রাজ্যের সংখ্যা এখন গোটা দেশে মাত্র দু’টি। ছত্তীসগঢ় এবং এই রাজস্থান। তেতাল্লিশ ডিগ্রি তাপমাত্রা সত্ত্বেও তাই কংগ্রেসকে রাজস্থানেই চিন্তন শিবিরের আয়োজন করতে হয়েছে। যাতে রাজ্য সরকারের সহযোগিতা পাওয়া যায়।

Advertisement

আজ সন্ধ্যায় রাহুল গান্ধী-সহ কংগ্রেসের জনা পঁচাত্তর নেতা যখন দিল্লি থেকে উদয়পুরের ট্রেনে উঠছেন, তখন দিল্লির নিজামুদ্দিন স্টেশনে অনেকেই উৎসাহী হয়ে মেবাড় এক্সপ্রেসের সামনে ভিড় জমালেন। যদি রাহুলকে এক ঝলক দেখা যায়। সচরাচর তো রাহুলকে ট্রেনে যাতায়াত করতে দেখা যায় না। কিন্তু রাহুলরা মেবাড় নয়, চেতক এক্সপ্রেসে দিল্লি থেকে উদয়পুর যাচ্ছেন শুনে উৎসাহী জনতা হতাশ হল। কারণ, সে ট্রেন রওনা হবে দিল্লির সরাই রহিল্লা স্টেশন থেকে। ওই স্টেশনে রাহুলকে স্বাগত জানায় মালবাহকদের সংগঠন, সমস্যার কথাও জানায়। পরে প্রায় প্রতিটি স্টেশনেই রাহুলকে সংবর্ধনা দেন দলীয় কর্মীরা। উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, হরিয়ানা দিয়ে যাচ্ছে চেতক এক্সপ্রেস, ফলে বিভিন্ন স্টেশনে এই সংবর্ধনা দলীয় কর্মীদের সঙ্গে নেতার সংযোগও বটে।

এ বারের চিন্তন শিবিরেও কংগ্রেসের দুই মুখ্যমন্ত্রী, অশোক গহলৌত, ভূপেশ বঘেল এবং রাহুলের অনুগামীরা তাঁর কাছে ফের কংগ্রেসের সভাপতি হওয়ার দাবি তুলবেন। রাহুলের ঘনিষ্ঠ মহলের অবশ্য দাবি, চিন্তন শিবিরের পরেই কংগ্রেসের সাংগঠনিক নির্বাচন। দলের সভাপতি কে হবেন, তা সেখানেই ফয়সালা হবে। ফলে তিনি ফের সভাপতি পদে ফিরতে ইচ্ছুক কি না, তা নিয়ে রাহুল উদয়পুরে মুখ খুলবেন না।

Advertisement

তা হলে চিন্তন শিবিরে রাহুলের ভূমিকা কী হবে? কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, সোমবার, চিন্তন শিবিরের শেষ দিনে তিনিই দলের অভিমুখ ঠিক করে দেবেন। শিবিরে আলোচনার জন্য রাজনৈতিক, সাংগঠনিক, অর্থনীতি, কৃষি, যুব, সামাজিক ন্যায়—এই ছয়টি বিষয়ে খসড়া প্রস্তাব তৈরির কমিটি গঠন হয়েছে। শিবিরে চারশোর বেশি প্রতিনিধি যোগ দেবেন। সভানেত্রী হিসেবে সনিয়া গান্ধী শুক্রবার চিন্তন শিবিরের শুরুতে বক্তৃতা করবেন। তারপর চিন্তন শিবিরের প্রতিনিধিদের ছ’টি গোষ্ঠীতে ভাগ করে ওই ছ’টি বিষয়ে আলোচনা হবে। সেখানেও প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রস্তাব চূড়ান্ত করতে রাহুল ভূমিকা নেবেন। সনিয়া রবিবার শিবিরের শেষে ফের বক্তৃতা করবেন। তবে সনিয়ার ঠিক আগে রাহুলই প্রধান বক্তা হিসেবে অভিমুখ ঘোষণা করবেন।

কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, “রাহুল গান্ধীর মার্গদর্শন, তাঁর চিন্তাভাবনা, নির্ভীক মনোভাব এই চিন্তন শিবিরের প্রেরণা। আমার বিশ্বাস, বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে গিয়েও বিভিন্ন বিষয়ে তিনি নিজের রায় দেবেন। সেই আলোচনাকে চূড়ান্ত করতে নির্ণায়ক ভূমিকা নেবেন।” কংগ্রেস নেতারা মানছেন, নির্ণয় যা-ই হোক। তা আর লোক দেখানো পদক্ষেপ হলে চলবে না। ঘুরে দাঁড়াতে হলে দলের সংগঠন, কাজকর্ম, সিদ্ধান্তগ্রহণ, নেতৃত্বে সক্রিয়তা, বিক্ষোভ কর্মসূচি, সব কিছুতেই আমূল পরিবর্তন দরকার।

প্রশান্ত কিশোর কংগ্রেস নেতাদের দেওয়া পরামর্শে বলেছিলেন, বিজেপির মেরুকরণ আদৌ কোনও চ্যালেঞ্জ নয়। এক জন হিন্দু বিজেপির হিন্দুত্বে প্রভাবিত হলে অন্য এক জন হিন্দু হন না। বিরোধীরা সরকারের বিরুদ্ধে অন্যান্য বিষয়ে লেগে থাকতে পারেনি। নিজেদের ব্যর্থতা মানলেও কংগ্রেস নেতারা মেরুকরণের সমস্যা একেবারে উড়িয়ে দিতে রাজি নন। সুরজেওয়ালা বলেন, শাসক দল ও সরকারের নীতিই হল ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’। এই কারণেই যে সব রাজ্যে ভোট হয়ে গিয়েছে, সেখানে আর সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হচ্ছে না। যেখানে ভোট আসছে, সেখানে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হচ্ছে। বিজেপি ও মোদী সরকারের এই ধর্মীয় বিভাজনের নীতির মোকাবিলাতেই কংগ্রেস ‘নব-সঙ্কল্প’ নিতে চাইছে।

ধর্মীয় বিভাজনের মোকাবিলায় চিন্তন শিবির শুরুর আগেই অবশ্য কংগ্রেসের বিভাজন প্রকাশ্যে চলে এসেছে। আগামী বছর রাজস্থানের বিধানসভা নির্বাচন। সচিন পাইলট বহু দিন ধরেই চাইছেন, অশোক গহলৌতকে সরিয়ে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করা হোক। সনিয়া-রাহুল গান্ধীকে সে কথা মনে করিয়ে দিতেই হয়তো সচিনের সমর্থকরা চিন্তন শিবিরের বাইরে তাঁর বড় বড় ছবির ব্যানার, পোস্টার ঝুলিয়েছিলেন। সনিয়া-রাহুল পৌঁছনোর আগেই বৃহস্পতিবার দুপুরে উদয়পুর নগম নিগমের লোকেরা এসে সেই সব ছবি খুলে নিয়ে গিয়েছে। সচিনের সমর্থকরা বিক্ষোভ দেখালেন। তাঁদের সন্দেহ, এর পিছনে নিশ্চিত মুখ্যমন্ত্রী গহলৌতের হাত রয়েছে। কারণ, চিন্তন শিবিরের আয়োজন করে তিনি বাহবা কুড়োতে চাইছেন। গহলৌতের শিবিরের বক্তব্য, উদয়পুর নগর নিগম যে বিজেপির দখলে। তাঁরা সচিনের ছবি সরিয়েছে। গহলৌত কী করবেন!

উদয়পুরে পা রেখেই এই কাণ্ড দেখে কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতার মন্তব্য, “পরাজয়ের ধারা বন্ধ করতে হলে এখানকার পিচোলা লেকে এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও বিসর্জন দিয়ে যেতে হবে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন