শবরীমালা নিয়ে অবস্থান বদলালেন রাহুল

কেন্দ্র ও রাজ্যে অবস্থানের ফারাক মুছে ফেলে শেষ পর্যন্ত শবরীমালা-প্রশ্নে কেরল কংগ্রেসেরই পাশে দাঁড়িয়ে পড়ল দলের হাইকম্যান্ড। শুরু হয়ে গেল সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সমালোচনা এবং নতুন উদ্যমে বিক্ষোভও! কারণ, দলের কেরল নেতৃত্বের হাতেই শবরী-কাণ্ডে সব ভার ছেড়ে দিলেন রাহুল গাঁধী।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:০০
Share:

কেন্দ্র ও রাজ্যে অবস্থানের ফারাক মুছে ফেলে শেষ পর্যন্ত শবরীমালা-প্রশ্নে কেরল কংগ্রেসেরই পাশে দাঁড়িয়ে পড়ল দলের হাইকম্যান্ড। শুরু হয়ে গেল সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সমালোচনা এবং নতুন উদ্যমে বিক্ষোভও! কারণ, দলের কেরল নেতৃত্বের হাতেই শবরী-কাণ্ডে সব ভার ছেড়ে দিলেন রাহুল গাঁধী।

Advertisement

শবরীমালায় মহিলাদের প্রবেশ করার অধিকার দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আদেশকে আগে স্বাগত জানিয়েছিলেন রাহুল। বলেছিলেন, মহিলাদের সমানাধিকারেই তাঁরা বিশ্বাসী। রাজ্যে কংগ্রেসের বিক্ষোভের সময়ে কংগ্রেস সভাপতির ওই অবস্থানকে দেখিয়েই হাইকম্যান্ডের কাছে বিহিত চাইছিলেন সিপিএম নেতৃত্ব। কিন্তু দুবাইয়ে গিয়ে এখন সেই রাহুলই বলেছেন, পরম্পরাকে এত সহজে অবজ্ঞা করা যায় না। এবং তার পরেই কেরলে গিয়ে এআইসিসি-র ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য ও প্রবীণ নেতা এ কে অ্যান্টনি প্রদেশ নেতাদের রাজনৈতিক অবস্থানেই সিলমোহর দিয়েছেন। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের সুর বদল করায় স্বভাবতই ক্ষুব্ধ সিপিএম। লোকসভা নির্বাচনের আগে শবরী-প্রশ্নে এখন এক দিকে বিজেপি-কংগ্রেস এবং অন্য দিকে সিপিএম পরিচালিত এলডিএফ— এমনই আড়াআড়ি ভাবে বিভক্ত হয়ে গেল কেরলের রাজনৈতিক শিবির।

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি অবশ্য জানিয়েছেন, লোকসভা ভোটে রাজ্যওয়া়ড়ি সমঝোতা হবে। কেরলের প্রভাব বাংলার রাজনৈতিক সমীকরণে এসে পড়বে না। বাংলার প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বেরও মত, সব রাজ্যের পরিস্থিতি এক নয়।

Advertisement

দুবাইয়ে গিয়ে প্রশ্নের জবাবে রাহুল বলেছেন, ‘‘শবরীমালা নিয়ে এক তরফা অবস্থান নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, বিষয়টা যথেষ্ট জটিল। মহিলাদের সমানাধিকার থাকা উচিত, এটাও যেমন সত্যি, তেমনই পরম্পরাও রক্ষা করা দরকার।’’ কংগ্রেস সভাপতির ব্যাখ্যা, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরে তাঁর প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল ‘ব্যক্তিগত মত’ থেকে। কিন্তু পরে তিনি বুঝেছেন, আয়াপ্পা মন্দিরের পরম্পরার সঙ্গে বহু মানুষের ভাবাবেগ জড়িত। রাহুলের কথায়, ‘‘কেরলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি, এটা গুরুতর আবেগের প্রশ্ন। কোনওটাই খারিজ করা যায় না, অন্য দিকের মতটার মধ্যেও যুক্তি আছে। তাই কেরলের দল এবং মানুষের হাতেই বিষয়টা আমরা ছেড়ে দিচ্ছি।’’

আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশে ৮০টি আসনেই একা লড়বে তারা, জানিয়ে দিল কংগ্রেস

স্বয়ং সভাপতির ‘সবুজ সঙ্কেত’ পাওয়ার পরে অ্যান্টনি এ বার কেরলের প্রদেশ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক এবং পরে যুব কংগ্রেসের সভায় গিয়ে বলেছেন, ‘‘প্রতিটা রাজ্যের রেওয়াজ, প্রথা আলাদা। বৈচিত্রই ভারতের বৈশিষ্ট্য। বৈচিত্র আছে বলেই দেশটা এখনও সোভিয়েতের মতো ভেঙে পড়েনি! একটা কোনও রায় দিয়ে প্রথা এবং বৈচিত্রকে খারিজ করা যায় না।’’ শীর্ষ নেতাদের এমন কথা শোনার পরে তিরুঅনন্তপুরম, কোল্লাম, পাতানামতিট্টা, কোট্টয়মের মতো নানা জেলায় পিনারাই বিজয়নের সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নেমে পড়েছেন কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা।

এআইসিসি শেষমেশ প্রদেশ নেতাদের পাশে দাঁড়ানোয় রাজ্যের সিপিএম নেতারা এখন প্রশ্ন তুলছেন, তা হলে আর বিজেপির সঙ্গে তাদের ফারাক কী রইল? হিন্দুত্বের ভাবাবেগ নিয়ে কংগ্রেস কি তা হলে এতটাই চিন্তিত? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক কোডিয়ারি বালকৃষ্ণনের প্রশ্ন, ‘‘আদালতের নির্দেশে মহিলাদের সমানাধিকার নিশ্চিত করা অপরাধ? এ বার জানতে চাইব, সনিয়া গাঁধীও কি একই কথা মনে করেন?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন