সনিয়া গাঁধী।
নরেন্দ্র মোদীর দেশভক্তির তাস খানিকটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার বিধানসভা নির্বাচনে। প্রধানমন্ত্রীর উপরে চাপ বাড়াতে এ বার আমজনতার সমস্যা নিয়ে সরব হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। আজ দলীয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রথম লক্ষ্য হবে মুক্ত আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি (আরসিইপি)। যে চুক্তিকে নোটবন্দি, জিএসটির পরে নরেন্দ্র মোদীর ‘তৃতীয় ধাক্কা’ বলে আখ্যা মহিলা দিয়েছে কংগ্রেস।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ক’দিন আগেই প্রবীণ ও নবীনদের মিলিয়ে একটি ঘরোয়া কমিটি গড়েছেন সনিয়া। তাতে রাহুল গাঁধী, আহমেদ পটেল যেমন আছেন, তেমনই রয়েছেন মনমোহন সিংহ, এ কে অ্যান্টনি, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, গুলাম নবি আজাদ, অধীর চৌধুরী, সুস্মিতা দেবরা। গোড়ায় প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাকে এই কমিটিতে রাখা হয়নি। কিন্তু আজ কমিটির বৈঠকে হাজির ছিলেন তিনি। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামিকাল থেকে মোদীর ‘মন কি বাত’-এর পাল্টা ‘জন কি বাত’ শুরু করবে কংগ্রেস। যেখানে আমআদমির সমস্যা নিয়ে কথা বলবেন দলীয় নেতারা। তার আগে আজ আরসিইপি নিয়ে সরব হয়েছে কংগ্রেস।
আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত দশটি এবং ভারত, চিন-সহ আরও ছয়টি— মোট ১৬টি দেশের মধ্যে মুক্ত আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি কার্যকর করতে আলোচনা চলছে গত কয়েক মাস ধরে। নভেম্বরে ব্যাঙ্ককে এই চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার কথা। কিন্তু আরসিইপি হলে দেশের শিল্পক্ষেত্র ধাক্কা খাবে বলে আশঙ্কা করছে শিল্পমহল। যেমন, তখন নিউজিল্যান্ড থেকে সস্তার দুগ্ধজাত পণ্য আসবে এ দেশে। ফলে বিপাকে পড়বে ডেয়ারি শিল্প। ‘আমূল’-এর এমডি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়ালকে চিঠি লিখে এই চুক্তি না করার দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি, চিনের সস্তা পণ্যে এ দেশের বাজার আরও ছেয়ে যাবে বলে আশঙ্কা। আরসিইপি-র প্রতিবাদে আগেই পথে নেমেছে সঙ্ঘ পরিবার। আজ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিল কংগ্রেস। দলীয় কমিটির বৈঠকে ঠিক হয়েছে, নভেম্বরের ৫ থেকে ১৫ তারিখ দেশ জুড়ে প্রতিবাদ হবে। দলের নেতা জয়রাম রমেশের অভিযোগ, ‘‘এই চুক্তি হলে দেশের ছোট ব্যবসা, কৃষিক্ষেত্র আরও মার খাবে। উহান ও মমল্লপুরমের ভারত ও চিনের মধ্যে কী কথা হয়েছে, জানা নেই। কিন্তু তার পরেই এই চুক্তি হচ্ছে।’’ কংগ্রেসের সংগঠনের দায়িত্বে থাকা নেতা কে সি বেণুগোপাল বলেন, ‘‘অন্যান্য বিরোধী দলকেও এই আন্দোলন শামিল হতে আহ্বান জানাচ্ছি।’’ শিল্পমহলের আশঙ্কার প্রেক্ষিতে সরকারও নড়েচড়ে বসেছে। সম্প্রতি প্রস্তাবিত চুক্তির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বাধীন বাণিজ্য সংক্রান্ত মন্ত্রিগোষ্ঠী। সরকারি সূত্রে দাবি, দেশের স্বার্থ সুরক্ষিত রেখেই সিদ্ধান্ত হবে।