Congress

২৫ হাজার কোটির ড্রোন-দুর্নীতির নালিশ কংগ্রেসের

রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের অভিযোগ ছিল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে উদ্যোগী হয়ে অনিল অম্বানীর সংস্থাকে বরাত পাইয়ে দিয়েছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২৩ ০৮:১০
Share:

—প্রতীকী ছবি।

গত লোকসভা নির্বাচনের আগে রাহুল গান্ধী ফ্রান্সের থেকে রাফাল যুদ্ধবিমান কেনায় অনিয়মের অভিযোগ তুলেছিলেন। ২০২৪-এর সাধারণ নির্বাচনের আগে এ বার কংগ্রেস আমেরিকা থেকে ঘাতক ড্রোন কেনায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলল। তাদের অভিযোগ, এই ড্রোন কেনায় ২৫ হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি হয়েছে।

Advertisement

রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের অভিযোগ ছিল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে উদ্যোগী হয়ে অনিল অম্বানীর সংস্থাকে বরাত পাইয়ে দিয়েছিলেন। ওই যুদ্ধবিমান কেনা হয়েছিল অতিরিক্ত দামে। এ বার আমেরিকার জেনারেল অ্যাটমিক্স সংস্থা থেকে প্রায় ৩০৭ কোটি ডলারে ৩১টি ঘাতক ড্রোন কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, এ ক্ষেত্রেও মোদী সরকারের এক ঘনিষ্ঠ ও প্রভাবশালী ব্যক্তি এ বিষয়ে প্রভাব খাটিয়েছেন। তাই অনেক চড়া দামে এই ড্রোন কেনা হচ্ছে। মোদী সরকারের ঘনিষ্ঠ ওই ব্যক্তির সঙ্গে জেনারেল অ্যাটমিক্সের সিইও-র ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। প্রসঙ্গত, জেনারেল অ্যাটমিক্স গ্লোবাল কর্পোরেশনের সিইও বিবেক লাল ভারতীয় বংশোদ্ভূত। কংগ্রেসের অভিযোগ, এই সিইও ভারতের সেনাবাহিনীকে ড্রোন সরবরাহের চুক্তি পাকা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। তাই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির অনুমোদন ছাড়াই এই ড্রোন কেনার সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। রাফালের ক্ষেত্রেও প্রতিরক্ষা বা বিদেশ মন্ত্রককে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী একাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আমেরিকার এই ড্রোনের প্রযুক্তিও পুরনো আমলের। যাতে কৃত্রিম মেধা ব্যবহারই হয় না।

কংগ্রেসের মিডিয়া ও জনসংযোগ বিভাগের চেয়ারম্যান পবন খেরা আজ সাংবাদিক বৈঠকে অভিযোগ করেন, ‘‘অন্য দেশ যে দামে এই সব ড্রোন কিনছে, ভারত তার থেকে চার গুণ বেশি দামে কিনছে। ফলে সরকারকে ২৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আমেরিকা থেকে নৈশভোজ করে ফিরেছেন। এটা বোধহয় সব চেয়ে মহার্ঘ নৈশভোজ, যার খরচ ২৫ হাজার কোটি টাকা।’’

Advertisement

ভারতীয় নৌসেনা এত দিন ভাড়া নিয়ে সমুদ্রে নজরদারির জন্য দু’টি এমকিউ-নাইনবি প্রিডেটর ড্রোন ব্যবহার করছিল। ৩১টি ড্রোন কিনতে খরচ ৩০৭ কোটি ডলারের প্রসঙ্গ তুলে খেরার যুক্তি, এর অর্থ প্রতিটি ড্রোনের জন্য ভারতকে ১১ কোটি ডলার খরচ করতে হবে। অথচ, আমেরিকার বায়ুসেনা নিজে জেনারেল অ্যাটমিক্সের থেকে এর তুলনায় আধুনিক ড্রোন ৫.৬৫ কোটি ডলারে কিনেছে। ব্রিটেন একই ড্রোন সাত বছর আগে কিনেছে ১.২৫ কোটি ডলারে। স্পেন কিনেছে ৪.৭৬ কোটি ডলারে। তাইওয়ান, ইতালি, জার্মানিও অনেক কম দামে কিনেছে। অস্ট্রেলিয়া বেশি দাম বলে কেনেইনি। খেরার অভিযোগ, ‘‘বিশ বছর আগে এইসব ড্রোন লোভনীয় ছিল। তখন আমেরিকা এসব বাইরে বিক্রি করতে চাইত না। এখন আধুনিক প্রযুক্তির ড্রোন এসে যাওয়ায় আমেরিকা এ সব সস্তায় বেচে দিতে চাইছে। প্রধানমন্ত্রী আমেরিকা গিয়ে পুরনো প্রযুক্তির সমরাস্ত্র সস্তার বদলে বেশি দামে কিনে আনছেন।’’

মোদীর আমেরিকা সফরের আগে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের অধীন সমরাস্ত্র ক্রয় পরিষদ ড্রোন কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। রাজনাথ আজ যোধপুরে বলেছেন, মনমোহন সিংহের আমলে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল ঠিকই। কিন্তু মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কেউ দুর্নীতির অভিযোগ তুলতে পারবে না। বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয়ের কটাক্ষ, ‘‘আসলে বফর্স কেলেঙ্কারির পর থেকে কংগ্রেস সব প্রতিরক্ষা চুক্তিতেই দুর্নীতির ভূত দেখতে পায়। রাফাল নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে হারের পরেও শিক্ষা হয়নি।’’

বিজেপি আজ কংগ্রেসের অভিযোগের জবাবে নৌসেনা প্রধান অ্যাডমিরাল আর হরি কুমারের বক্তব্য তুলে ধরেছে। নৌসেনা প্রধান বলেছেন, ৩১টি ড্রোনের মধ্যে ২১টি ড্রোন ভারতে যন্ত্রাংশ জুড়ে তৈরি হবে। তাতে ছোট-মাঝারি সংস্থাগুলি লাভবান হবে। তাঁর যুক্তি, এই ড্রোনগুলি আকাশে টানা ৩৩ ঘণ্টা থাকতে পারে। ২৫০০ নটিক্যাল মাইলের বাইরে নজরদারি চালাতে পারে। বিজেপির প্রশ্ন, কংগ্রেসকে বিশ্বাস করা উচিত, না কি নৌসেনা প্রধানকে? বিজেপির যুক্তির পাল্টা হিসেবে পবন খেরার প্রশ্ন, ‘‘সামরিক বাহিনী দু’মাস আগেই ১৮টি ড্রোন কেনার কথা বলেছিল। তা হলে ৩১টি ড্রোন কেনা হল কেন? বাইরে থেকে ড্রোন কেনা হলে ‘আত্মনির্ভর ভারত’, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ স্লোগানের কী হল? ডিআরডিও-কে এই ড্রোন তৈরির জন্য ১,৭৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হল কেন? কেন এই ড্রোনের ক্ষেত্রে আমেরিকা মাত্র ৮-৯ শতাংশ প্রযুক্তি সরবরাহ করবে? কেনই বা মোদী সরকার প্রযুক্তির হাত বদলের চেষ্টা করেনি?’’ সংসদের আসন্ন অধিবেশনে কংগ্রেস এ নিয়ে সরব হবে বলে জানিয়েছেন খেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন