দুর্নীতির অভিযোগ আসতেই প্রথম রাতেই বিড়াল মারতে চাইল মোদী সরকার। কিন্তু সংসদের অধিবেশনের আগে অনেকটা একঘরে হয়ে যাওয়া কংগ্রেস কিছুতেই হাল ছাড়তে চাইছে না।
সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হওয়ার দশ দিন আগে গতকাল কংগ্রেস কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে টেলিকম দুর্নীতির অভিযোগ আনে। কাল রাতেই টেলিকম মন্ত্রক থেকে সাফাই দিয়ে বলা হয়, কোনও দুর্নীতিই হয়নি। অভিযুক্ত ৬টি টেলিকম সংস্থার বকেয়া পাই পাই উসুল করা হবে। কিন্তু তাতেও থামছে না কংগ্রেস। আজ ফের একই অভিযোগ নিয়ে ফের চেপে ধরতে চেয়েছে মোদী সরকারকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সদ্য খোয়ানো টেলিকম মন্ত্রকের মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ আজ আসরে নামেন। নিজেই নতুন দফতর আইন নিয়ে কিছু না বলে সাংবাদিকদের ডেকে নিজের পুরনো মন্ত্রক টেলিকম নিয়েই সাফাই দেন।
২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ৬টি টেলিকম সংস্থা তাদের আয় ৪৫ হাজার কোটি টাকা কম দেখিয়ে সরকারের রাজস্বের লোকসান করেছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিএজি সেই সংস্থাগুলির খাতা খতিয়ে দেখে এ বছরের মার্চে রিপোর্ট পেশ করেছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, তার পরেও টেলিকম মন্ত্রক সিএজির মূল্যায়ণে ভরসা না রেখে মন্ত্রকে নতুন করে হিসেব কষে দেখছে। যাতে ৬টি টেলিকম সংস্থাকে আরও সুবিধা দেওয়া যায়। কংগ্রেসের দাবি, এটাই দুর্নীতি। এই চার বছরে সরকারের প্রাপ্য সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা। আর চার বছরের পরের সালগুলি ধরলে এই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ১ লক্ষ কোটি টাকার বেশি।
রবিশঙ্কর আজ সাফাই দিয়ে বলেন, এটিকে দুর্নীতি বলে কংগ্রেস আসলে নিজের পায়ে নিজেই কুড়ুল মেরেছে। কারণ, টেলিকম সংস্থাগুলি নিজেদের আয় কম দেখিয়েছে ইউপিএ আমলে। অথচ সেই সময় টেলিকম মন্ত্রী কপিল সিব্বল বলতেন, সরকারের কোনও লোকসানই হয়নি। আর টেলিকম মন্ত্রক সিএজি থেকে যাবতীয় নথি হাতে পেয়েছে জুন মাসের মাঝামাঝি। যেহেতু টেলিকম মন্ত্রকে বিশেষ অডিট চলছে আর অনেক সময় দেখা যায় সিএজির মূল্যায়ণের থেকেও মন্ত্রকের হিসেবে আরও বেশি রাজস্ব পাওয়া যায়, তাই মন্ত্রকও সব হিসেব খতিয়ে দেখছে। এর মধ্যে মোদী সরকারের কোনও দুর্নীতি নেই। যদি থাকে, সেটি ইউপিএ জমানারই দুর্নীতি। কারণ, তাদের সময়ে টেলিকম সংস্থাগুলি অনিয়ম করে গিয়েছে। আর সে সময় সরকার তা শুধু দেখে গিয়েছে। আজ রবিশঙ্করের জবাব দিয়ে কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা বলেন, সিএজিতে ভরসা না রেখে নতুন করে অডিট করার নেপথ্যেই দুর্নীতি লুকিয়ে আছে।
কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, আসলে এ বারে সংসদের অধিবেশনের আগে আর কোনও বড় ইস্যু হাতড়ে পাচ্ছে না কংগ্রেস, যা নিয়ে সংসদে হল্লা করা যায়। তার উপর পণ্য ও পরিষেবা কর নিয়ে কংগ্রেস এখন একঘরে হয়ে গিয়েছে। কংগ্রেস ছাড়া বিরোধী শিবিরের সিংহভাগ দল এখন সরকারের পাশে। যে কারণে সনিয়া গাঁধীও এ বারে ইফতার পার্টি করেননি। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস সংসদ অচল করার জন্য কোনও ছুতো খুঁজছে। তাতে কোনও লাভ হবে না। তবে সরাসরি মোদী সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এসে পড়ায় সরকার যে চিন্তিত, তা প্রকাশ পেয়েছে পর পর দু’দিন এই নিয়ে সাফাই দেওয়ার ঘটনায়।