কৌশল: ইমপিচমেন্ট নিয়ে দিল্লিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল। সোমবার। পিটিআই
এমন আইনি যুদ্ধ এ দেশের ইতিহাসে নেই।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ। সেই অভিযোগ খারিজ করেছেন দেশের উপরাষ্ট্রপতি। এ বার উপরাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সেই সুপ্রিম কোর্টেই মামলা ঠুকতে চলেছেন রাজ্যসভার বিরোধী দলের সাংসদরা। সেই সঙ্গে উঠছে একটি অভূতপূর্ব প্রশ্ন। সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে মামলা— তার বিচার করবেন কোন বিচারপতি? কারণ, সুপ্রিম কোর্টে কোন মামলার শুনানি কার বেঞ্চে হবে, তা ঠিক করার ক্ষমতা প্রধান বিচারপতিরই হাতে। তাই কংগ্রেসের কপিল সিব্বলের দাবি, প্রধান বিচারপতি নিজে যেন এই মামলা না শোনেন। যদি তিনি নিজেই মামলা শোনেন বা তাঁর পছন্দের বিচারপতিদের কাছেই পাঠান? সিব্বলের জবাব, ‘‘দেখতেই পাবেন, তার পর কী হয়!’’
প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রকে পদ থেকে হঠাতে যে ‘ইমপিচমেন্ট’ প্রস্তাব আনা হয়েছিল, তার অন্যতম অভিযোগটি ছিল, তিনি ‘মাস্টার অব দ্য রোস্টার’-এর ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক স্পর্শকাতর মামলা নিজের বাছাই করা বিচারপতিদের বেঞ্চে পাঠাচ্ছেন। এর বিরুদ্ধেই চার প্রবীণ বিচারপতি ‘বিদ্রোহ’ করেছিলেন।
‘ইমপিচমেন্ট’ প্রস্তাব খারিজ করার পিছনে বেঙ্কাইয়ার যুক্তি, এ’টি সুপ্রিম কোর্টের অভ্যন্তরীণ বিষয়। প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যেহেতু অভিযোগ, তাই এ ক্ষেত্রে তিনি তাঁর সঙ্গে কথা বলেননি বলেও জানিয়েছেন বেঙ্কাইয়া। যদিও সিব্বল মনে করেন, উপরাষ্ট্রপতির অন্তত ওই ‘বিদ্রোহী’ চার বিচারপতির সঙ্গে কথা বলা উচিত ছিল।
প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি, নিজের দুর্নীতির মামলাতেই রায় দেওয়া, মিথ্যে হলফনামা নিয়ে জমি আদায়ের মতো যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে, তাতে কোনও সারবত্তা নেই বলে বেঙ্কাইয়ার দাবি। তাই এ নিয়ে তদন্তের প্রয়োজন নেই বলে সিদ্ধান্তে জানিয়েছেন বেঙ্কাইয়া। এখানেই তাঁর সিদ্ধান্তকে ‘বেআইনি’ আখ্যা দিয়েছেন সিব্বল। তাঁর যুক্তি, অভিযোগ সত্যি কি মিথ্যে, তা নিয়ে তদন্ত না করিয়ে বেঙ্কাইয়া নিজেই রায় দিয়েছেন। প্রস্তাব নিয়মমাফিক পেশ হয়েছে কি না, শুধু সেইটুকু দেখারই অধিকার রয়েছে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের। সেই কারণেই আজ পর্যন্ত কোনও ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব খারিজ হয়নি।
বেঙ্কাইয়া তাঁর দশ পাতার নির্দেশে বলেছেন, প্রধান বিচারপতি হিসেবে দীপক মিশ্রর কাজে অসঙ্গতি প্রমাণিত নয়। সিব্বলের প্রশ্ন, তদন্ত না হলে তা প্রমাণ হবে কেমন করে!
বেঙ্কাইয়ার যুক্তি, যে ৬৪ জন সাংসদ ‘ইমপিচমেন্ট’ প্রস্তাব এনেছেন, তাঁরা অভিযোগ সম্পর্কে নিজেরাই নিশ্চিত নন। তাই প্রতিটি অভিযোগে ‘হয়তো’, ‘মনে হচ্ছে’, ‘হতে পারে’-র মতো শব্দ ব্যবহার করেছেন। সিব্বলের প্রশ্ন, অভিযোগের তদন্ত হওয়ার আগে কী করে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব? বেঙ্কাইয়া বলেছেন, সব অভিযোগ সত্যি বলে ধরে নিলেও ‘ইমপিচমেন্ট’ প্রস্তাব গ্রহণ করা যায় না। সিব্বলের যুক্তি, অভিযোগ সত্যি বলে ধরে নিলে ‘ইমপিচমেন্ট’-এর প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত। বেঙ্কাইয়া বলেছেন, ‘ইমপিচমেন্ট’-এর নোটিস দিয়েই বিরোধী সাংসদরা তা সংবাদমাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। এটা নিয়মবিরুদ্ধ। সিব্বলের দাবি, এমন কোনও নিয়মই নেই।