নির্বাচনী প্রচারে নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার মহারাষ্ট্রের বারামতীতে। ছবি: পিটিআই।
অভিযোগ করেছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। খারিজ করল নির্বাচন কমিশন। কমিশনের এই সিদ্ধান্তে কংগ্রেস বাড়তি অক্সিজেন পেলেও ভোটের মুখে রবার্ট বঢরার বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রসঙ্গ থেকে সরে আসতে নারাজ বিজেপি।
মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায় ভোট প্রচার শেষ হতে মাত্র চার দিন বাকি। শেষ বাজারে হাওয়া গরম করতে ক’দিন আগে হরিয়ানার এক জনসভায় গিয়ে সনিয়া গাঁধীর জামাই রবার্টের বিরুদ্ধে জমি কেলেঙ্কারির অভিযোগ খুঁচিয়ে তুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর দাবি, নির্বাচনের দিন ক্ষণ ঘোষণার পরেই হরিয়ানার হুডা সরকার আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন করে রবার্টকে জমি পাইয়ে দিয়েছে। কমিশনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কমিশন খতিয়ে দেখে জানিয়েছে, ১৬ জুলাই হরিয়ানার ভূমি রাজস্ব দফতর বঢরার জমি-চুক্তি বৈধ বলে ঘোষণা করে। আর ভোট ঘোষণা হয়েছে ১২ সেপ্টেম্বর। অর্থাৎ, প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ ঠিক নয়।
মোদীর অভিযোগের পর থেকেই প্রতিবাদে সরব ছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। আজ কমিশনের রায়ের পরে আরও আক্রমণাত্মক হন তাঁরা। কংগ্রেস মুখপাত্র আনন্দ শর্মা বলেন, “হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত প্রধানমন্ত্রীর।” দলের নেতা শাকিল আহমেদের কথায়, “দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে বারবার মিথ্যাচার করলে ভুল বার্তা যায়। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী যখন গোটা দেশ ও নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে বিভ্রান্ত করেন।” “বিজেপির মুখে ডিম ছুড়ে মেরেছে কমিশনের এই নির্দেশ,” মন্তব্য করেন আনন্দ।
লোকসভা ভোটের প্রচারেও মোদী বঢরার জমি কেলেঙ্কারির বিষয়টি তুলে সনিয়াকে আক্রমণ করেছিলেন। পরে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। বিধানসভা ভোট আসতেই ফের বিষয়টি খুঁচিয়ে তুলে কংগ্রেস ও হুডা সরকারকে বিঁধতে চেয়েছিলেন মোদী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হয়ে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিতর্কের মোড় অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেন তিনি। বিজেপি নেতারা ঘরোয়া মহলে কবুল করছেন, “আসলে দলেরই কেউ প্রধানমন্ত্রীকে ভুল তথ্য দিয়েছেন। যার ফলে প্রধানমন্ত্রীও জনসভায় নির্বাচন কমিশনকে জড়িয়ে ফেলেছেন।” তবে তাঁদের দাবি, “রবার্ট বঢরা জমি কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত নন, তা-ও নয়। তাই ভোটের সময় এই ইস্যুটিও কোনও ভাবে হাতছাড়া করা যাবে না।”
অস্বস্তি ঢাকতে আজ দিল্লিতে দলের সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন আজ নির্বাচন বিধি লঙ্ঘন না হওয়ার কথা জানালেও দুর্নীতি যে হয়েছে, সেটা তো বাস্তব। তাই কংগ্রেসের এত উল্লসিত হওয়ার কিছু নেই।” তাঁর হুঁশিয়ারি, “হরিয়ানায় কংগ্রেসের সরকার যেতে বসেছে। বিজেপি সেখানে সরকার গড়লে এই গোটা জমি কেলেঙ্কারির তদন্ত হবে।”
শুধু হরিয়ানা নয়, রাজস্থানেও বঢরার বিরুদ্ধে জমি-দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। সে রাজ্যে বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে সে নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। তিনটি এফআইআরও হয়েছে। তবু বঢরার বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। হরিয়ানায় ক্ষমতায় এলেও বিষয়টি নিয়ে বিজেপি কতদূর এগোয়, সেটাই দেখার।