—প্রতীকী ছবি।
দিল্লিতে দশ জনপথে রাহুল গান্ধী ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাকভোরের বৈঠক এবং মুম্বইয়ে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সম্মেলন। দু’জায়গাতেই দ্রুত আসন সমঝোতা নিয়ে কংগ্রেসের উপরে চাপ বাড়িয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু কংগ্রেস শিবির থেকে আসা প্রাথমিক সঙ্কেত দেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের অনুমান, এ বিষয়ে আপাতত ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়েই চলবে কংগ্রেস। বিশদে কথা বলবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য-নেতাদের সঙ্গে। একই ভাবে, অন্য কয়েকটি আঞ্চলিক বিরোধী দলের নেতৃত্বও এমনটাই আঁচ করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর।
রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, তড়িঘড়ি আসন সমঝোতা সেরে ফেলে (তৃণমূলের দাবি ১৫ অক্টোবরের মধ্যে অবশ্যই তা করতে হবে, তার বেশি বিলম্ব নয়) এখন থেকেই দলের নেতা-কর্মীদের রাজ্যে-রাজ্যে ‘বসিয়ে’ দেওয়ার পক্ষপাতী নয় কংগ্রেস। তাতে সাংগঠনিক ক্ষতি। তার উপরে, সামনেই পাঁচ রাজ্যে নির্বাচন। যার মধ্যে অন্তত তিনটিতে জেতার বিষয়ে আশাবাদী কংগ্রেস নেতা রাহুল। ফলে তখন সংখ্যার হিসাবে আরও শক্তিশালী হয়ে সব দলের সঙ্গে দর কষাকষির টেবিলে বসতে চাইছে কংগ্রেস। কিন্তু এই আঁচ পেয়ে তৃণমূলের এক শীর্ষ পর্যায়ের নেতার বক্তব্য, ‘‘সে ক্ষেত্রে আমরা কংগ্রেসের লেজ ধরে চলব না।’’
সব মিলিয়ে ‘ইন্ডিয়া’র ঈশান কোণে মেঘ দেখা যাচ্ছে কি না, তা বলার সময় হয়তো এখনই আসেনি। কিন্তু রাজনৈতিক মহল মনে করছে, প্রস্তাবিত ১৫ তারিখের মধ্যে আসন রফা না হলে, এই জোটের ভবিষ্যৎ ঐক্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতেও পারে। তৃণমূল-সহ বিরোধীদের একাংশ চেয়েছিলেন, মুম্বই-প্রস্তাবেই আসন সমঝোতার তারিখ নির্দিষ্ট করে বলে দেওয়া থাক। কিন্তু কংগ্রেসের ‘অনুৎসাহে’ তা থাকেনি।
সূত্রের খবর, মুম্বই বৈঠকে দৃশ্যতই করজোড়ে জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার রাহুলকে বলেছিলেন, ‘আপনারা যত দ্রুত সম্ভব আসন সমঝোতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করুন। দেরি করবেন না।’ আপ নেতা অরবিন্দ কেজরীওয়াল মাত্র ৩০ সেকেন্ড কথা বলে বুঝিয়ে দেন, আসন রফা না হলে এই ধরনের সম্মেলনে বক্তৃতা দেওয়া অর্থহীন। তিনি শুধু এটুকুই বলেছিলেন, ‘দ্রুত আসন সমঝোতা হোক। বাকি সব তার পরে হবে।’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেকের বক্তব্য ছিল, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ফয়সালা করা হোক। তা না হলে বড়জোড় ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত তা পিছিয়ে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু তার বেশি দেরি করা অর্থহীন। সূত্রের খবর, মমতা এটাও পরে বলেন যে, তিনি কথা নয় কাজে বিশ্বাসী। একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তিনি বিশ্বাস করেন, ভোটের আগে কোনও রাজনৈতিক জোটের প্রাথমিক কর্তব্যই হল দ্রুত আসন সমঝোতা সেরে ফেলা।
রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, বিহার, তামিলনাড়ু বা মহারাষ্ট্র নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। সেখানে জোট রয়েইছে। কেরলকেও কার্যত ‘ইন্ডিয়া’ জোট-হিসাবের বাইরে রেখেছে। কারণ, সেখানে সরাসরি বাম এবং কংগ্রেস মুখোমুখি লড়ছে। সেখানে কোনও রফার প্রশ্ন নেই। কিন্তু বাংলা, দিল্লি এবং পঞ্জাবের পরিস্থিতি জটিল। এখানে ফয়সলা করার বিষয় রয়েছে। এই তিনটি রাজ্য মিলিয়ে ৬২টি আসন, যা নেহাত কম নয়।
রাজনৈতিক সূত্রের খবর, তৃণমূলের পক্ষ থেকে কংগ্রেসকে বলা হয়েছে, বাংলায় সর্বোচ্চ দু’টি আসন তারা ছাড়তে পারে, তার বেশি নয়। ২০১৯-এর লোকসভা এবং ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের খতিয়ান সামনে তুলে এনে তৃণমূল নেতৃত্বের পক্ষ থেকে কংগ্রেসের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে, কেন দু’টির বেশি আসন মমতা ছাড়বেন? দু’টি আসন ছাড়লে, মেঘালয় এবং অসমেও আসনের দাবি তৃণমূল রাখছে বলেই সূত্রের খবর।