লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজনের কাছে চিঠি দিয়ে আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে বিরোধী দলনেতার পদ দাবি করল কংগ্রেস। এ দিনই ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’ মামলায় তাঁকে আয়কর নোটিস ধরানো নিয়ে মোদী সরকারকে তুলোধোনা করে সুর চড়ালেন সনিয়া গাঁধী।
লোকসভার কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়গে, উপ-দলনেতা অমরেন্দ্র সিংহ এবং মুখ্যসচেতক জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া আজ স্পিকারের হাতে দাবিপত্র তুলে দেন। সেই দাবিপত্রে সই করেছেন ইউপিএ-র ৬৬ জন সাংসদ। দাবির পক্ষে পাঁচ দফা যুক্তি সাজিয়েছে কংগ্রেস। যদিও স্পিকার তাঁর সিদ্ধান্ত আজ জানাননি। তবে কংগ্রেস মনে করছে, স্পিকারের জবাব নেতিবাচকই হবে। কারণ বিজেপি আগেই তেমন ইঙ্গিত দিয়েছে। কংগ্রেসের অনেকেই বলছেন, এর পর তাঁদের কিছু করার নেই। স্পিকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করা যায় না। তবে সরকারকে আক্রমণের সুযোগ থাকছে। আর সেই কাজ আজ থেকেই শুরু করে দিলেন সনিয়া।
ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় ক’দিন আগেই তাঁর কৈফিয়ত চেয়ে নোটিস পাঠিয়েছে আয়কর দফতর। সেই নোটিসে রয়েছে রাহুল গাঁধী-সহ কংগ্রেসের আরও কিছু তাবড় নেতার নাম। সনিয়া আজ বেনজির চড়া সুরে আক্রমণ শানিয়ে অভিযোগ করেছেন, নিছক রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মেটাতেই এই পদক্ষেপ করেছে সরকার। কংগ্রেস নেত্রী বলেন, “সরকারের এই ধরনের নেতিবাচক আচরণ কংগ্রেসকে দ্রুত ক্ষমতায় ফিরতেই সাহায্য করবে।”
আক্রমণের জবাব দিতে অবশ্য দেরি করেনি সরকার পক্ষও। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, “কেউ আইন ভাঙলে তার পরিণাম তো ভুগতেই হবে। কোনও ব্যক্তিই আইনের ঊর্ধ্বে নন।”
রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়কর দিতে হয় না। কিন্তু অভিযোগ, ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’ নামে একটি সংস্থাকে ৯০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে কংগ্রেস। এই সংস্থার অন্যতম অংশীদার সনিয়া-রাহুল। আয়কর দফতরের প্রশ্ন কোনও সংস্থাকে একটি রাজনৈতিক দল কেন ঋণ দেবে? এর পরে তারা কেন ওই টাকার আয়কর দেবে না?
গোটা বিতর্কের মূলে রয়েছে ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’ সংবাদপত্র। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে ওই সংবাদপত্র শুরু করেছিলেন জওহরলাল নেহরু। বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী সম্প্রতি আদালতে অভিযোগ করেন, গাঁধী পরিবার ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’ নামে একটি সংস্থা তৈরি করে ওই সংবাদপত্রটি অধিগ্রহণ করে। স্বামীর অভিযোগ, কংগ্রেস দলের কাছ থেকে ৯০ কোটি টাকা নিয়ে ওই সংবাদপত্র অধিগ্রহণ করে গাঁধী পরিবার। তার পরে সম্পত্তি করায়ত্ত করে ২০০৮ সালে সংবাদপত্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিজেপি নেতার এই অভিযোগের ভিত্তিতে আদালত যেমন সনিয়া-রাহুল-সহ ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’র কর্তাদের জবাবদিহি চেয়েছে, তেমনই নোটিশ পাঠিয়েছে আয়কর দফতর।
কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে আইন ও রাজনীতি, দু’ভাবেই তারা লড়াই করবে। দলের কেন্দ্রীয় নেতা সলমন খুরশিদ বলেন, “অলাভজনক সংস্থা ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’ কাউকে কোনও বেতন বা ডিভিডেন্ড দেয় না। সংস্থাটির আয়ের টাকা কোনও ব্যক্তির কাছেও যায় না, অছি পরিষদের কাছে জমা থাকে।” কংগ্রেসের এই নেতার প্রশ্ন, আজ যদি আরএসএসের মুখপাত্র পাঞ্চজন্য মুখ থুবড়ে পড়ে, বিজেপি কি অর্থ সংস্থান করবে না?
কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, আদালতে কী ব্যাখ্যা দেওয়া হবে, কংগ্রেস তা আগাম জানাতে চায় না। কিন্তু সব অভিযোগ যে ভিত্তিহীন তা প্রমাণ করা হবে।