অশান্তির পিছনে ষড়যন্ত্র: জেলিয়াং

নিছক সংরক্ষণ নিয়ে আন্দোলন নয়, নাগাল্যান্ডে বন্‌ধ ও অশান্তির পিছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী টি আর জেলিয়াং। অশান্তি জিইয়ে রেখে তাঁকে পদ থেকে হঠানোর চেষ্টা চলছে বলেও জেলিয়াংয়ের আশঙ্কা। কিন্তু কোনও উপায়েই তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করা যাবে না বলে তিনি স্পষ্ট করে দিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:১০
Share:

নিছক সংরক্ষণ নিয়ে আন্দোলন নয়, নাগাল্যান্ডে বন্‌ধ ও অশান্তির পিছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী টি আর জেলিয়াং। অশান্তি জিইয়ে রেখে তাঁকে পদ থেকে হঠানোর চেষ্টা চলছে বলেও জেলিয়াংয়ের আশঙ্কা। কিন্তু কোনও উপায়েই তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করা যাবে না বলে তিনি স্পষ্ট করে দিলেন।

Advertisement

মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করে পুরভোটের আয়োজন করায় নাগাল্যান্ডের সব উপজাতি সংগঠন যৌথমঞ্চ গড়ে বনধ শুরু করে। গির্জার মধ্যস্থতায় সরকারের সঙ্গে বৈঠকে যৌথমঞ্চ সংরক্ষণের বিষয়টি মেনে নিয়ে ভোট পিছোতে বলে। সরকার রাজি হলেও হাইকোর্টের নির্দেশে ১ ফেব্রুয়ারিই ভোট করতে হয়। ভোটের আগের দিন বিক্ষোভকারীরা মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাও করায় পুলিশ গুলি চালায়। মারা যান দুই যুবক।

১ ফেব্রুয়ারি ভোট হলেও পরে মন্ত্রিসভা ভোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। ডিমাপুরের পুলিশ কমিশনার ও জোন-১ এর ডিসিপিকে সরানো হয়। বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যৌথমঞ্চ মুখ্যমন্ত্রী-সহ মন্ত্রিসভার সদস্যদের পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন চালাচ্ছে। বিরোধীহীন বিধানসভায় রাজ্যের ৬০ জন বিধায়কের মধ্যে ৪২ জনই মুখ্যমন্ত্রীর কাজ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে ও জেলিয়াংয়ের নেতৃত্বে সম্মতি জানান। কিন্তু বনধ ও অবরোধ উঠছে না।

Advertisement

রাজ্যের ড্যান শাসক জোটের নেতৃত্বে এনপিএফ। সঙ্গে বিজেপি। নেতৃত্ব নিয়ে বিবাদ এনপিএফে নতুন নয়। আগেও নেফিয়ু রিওর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হয়েছিল। পরে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছেড়ে রিও সাংসদ হন। আশা ছিল, তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হবেন। কিন্তু তা হয়নি। তাই তাঁর নজর ফের রাজ্যের প্রধান আসনে।
এনপিএফ বিধায়কদের একাংশের অভিযোগ, জোট শরিক হলেও অরুণাচলের মতো বিজেপি রাজ্যে একা ক্ষমতা দখল করতে চাইছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বরাবরের ঘনিষ্ঠতা রিওর। সে ক্ষেত্রে রাজ্যে অশান্তির জেরে মন্ত্রিসভা বা মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করলে ফের রিওর হাতে নেতৃত্ব যেতে পারে। তাই গণবিদ্রোহের পিছন থেকে কলকাঠি নাড়ার সম্ভাবনা দেখছেন তাঁরা। কথা ছড়িয়েছে, জেলিয়াংও বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন।

জেলিয়াং নিজে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা উস্কে দিয়ে বলেন, ‘‘সংরক্ষণ নয়, এই অশান্তির পিছনে নিশ্চিত ভাবেই অন্য কারণ আছে।’’ তিনি জানান, যৌথমঞ্চ সংরক্ষণের প্রশ্নে একমত হয়েছিল। দুই যুবকের মৃত্যুর পর মঞ্চের দাবি মেনে ভোট বাতিল করা হয়েছে। কমিশনারকে সরানো হয়েছে। বিচারবিভাগীয় তদন্ত হবে। কিন্তু আন্দোলনকারীদের একমাত্র লক্ষ্য মনে হচ্ছে তাঁকে কুর্সি থেকে হঠানো। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘অবরোধের নামে হাজার হাজার মানুষকে বসিয়ে রাখা, তাঁদের খাবার দেওয়া অনেক খরচের ব্যাপার। এর পিছনে বড় কারও হাত রয়েছে। রেংমা, লোথা হো হো, ইএনপিও প্রথমে সংরক্ষণকে সমর্থন করেও পরে যে ভাবে পিছু হঠল, তাতে বোঝা যাচ্ছে সকলকে ভুল বোঝাচ্ছে একটি চক্র। রাজনীতির খেলা চলছে।’’ তবে কারও নাম করেননি জেলিয়াং।

সংরক্ষণের আওতা থেকে নাগাল্যান্ডকে বাদ দিতে কেন্দ্রকে চাপ দেওয়ার দাবিও উঠেছে। জেলিয়াং জানান, এ নিয়ে জনতার মতামত নেওয়া হবে। কংগ্রেস রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি তুলেছে। জেলিয়াং বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি শাসন গণতন্ত্রের পক্ষে ভাল উদাহরণ নয়। কংগ্রেস বরং রাজ্যে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে সরকারকে সাহায্য করুক।’’ অবরোধ স্বত্তেও সব সরকারি দফতরে কাজ চলবে বলে জানান তিনি।

উপাজাতিদের যৌথ মঞ্চ এ দিন ফের ঘোষণা করে, ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ না করলে পরিস্থিতি খারাপ হবে। যে ভাবে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের পরও মন্ত্রিসভা ভোট করায়, তাতে তাদের উপরে আর বিশ্বাস রাখা যায় না। সরকার দুই যুবককে হত্যা করে যে ভাবে রাজ্যে সেনাবাহিনীর ফ্ল্যাগ মার্চ করিয়েছে তা নাগাদের অপমান। জেলিয়াং এ দিন ফের হো হো দের বনধ প্রত্যাহার করে বৈঠকে আহ্বান জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন