অসমীয়া সংজ্ঞায় বিতর্ক ছড়ালেন সিদ্ধার্থ

অসমীয়ার সংজ্ঞা নিয়ে ফের বিতর্ক উস্কে দিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য। আজ শিলচরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘এ তো সহজ কথা। যাঁরা অসমে থাকেন, তারাই অসমীয়া। কে কোন ভাষায় কথা বলেন, সেটা বড় নয়। অসমের ভূখণ্ডে থাকলেই অসমীয়া বলে পরিচিত হবেন।’’ রাজনৈতিক স্বার্থেই এ নিয়ে বিতর্ক চলছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। অসমীয়ার সংজ্ঞা নিয়ে বরাকে ক্ষোভ দানা বেঁধেছিল কয়েক দিন আগে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৬
Share:

অসমীয়ার সংজ্ঞা নিয়ে ফের বিতর্ক উস্কে দিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য।

Advertisement

আজ শিলচরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘এ তো সহজ কথা। যাঁরা অসমে থাকেন, তারাই অসমীয়া। কে কোন ভাষায় কথা বলেন, সেটা বড় নয়। অসমের ভূখণ্ডে থাকলেই অসমীয়া বলে পরিচিত হবেন।’’ রাজনৈতিক স্বার্থেই এ নিয়ে বিতর্ক চলছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

অসমীয়ার সংজ্ঞা নিয়ে বরাকে ক্ষোভ দানা বেঁধেছিল কয়েক দিন আগে। বিধানসভার স্পিকার প্রণব গগৈ নিজের উদ্যোগে বিভিন্ন সংস্থা-সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে অসমীয়ার একটি সংজ্ঞা নিরূপণ করেছিলেন। দুই বিজেপি বিধায়ক স্পিকারের অভিমতকে সমর্থন জানান। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে বরাক উপত্যকার বিজেপি বিধায়ক দিলীপকুমার পাল এবং দলের স্থানীয় নেতৃত্ব ওই দুই বিধায়কের মন্তব্যকে ব্যক্তিগত বলে এড়িয়ে গিয়েছিলেন।

Advertisement

বরাক উপত্যকার মানুষ যে নিজস্ব কৃষ্টি-সংস্কৃতি-পরিচিতি নিয়ে বাঁচতে চান— সে কথা মনে করিয়ে দিলেও সিদ্ধার্থবাবু নিজের অবস্থান থেকে নড়তে নারাজ। একে দলীয় ব্যাখ্যা বলেও মন্তব্য করেন তিনি। কিন্তু এই সংজ্ঞা কি বরাকের মানুষ মেনে নেবেন? সিদ্ধার্থবাবুর মন্তব্য, ‘‘কেউ সহজ বিষয়টি মানতে না-চাইলে আমাদের করার কিছু নেই।’’

বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গৌতমপ্রসাদ দত্ত ক্ষোভের সুরে বলেন, ‘‘আমরা বাঙালিরা অসমীয়া হতে যাব কেন! অন্য জাতিগোষ্ঠীই বা নিজেদের পরিচিতি ভুলবে কেন? বিহারে থাকলেই সবাই বিহারী, মহারাষ্ট্রে থাকলে সবাই মরাঠী হয়ে যাবেন নাকি! ভাষিক পরিচিতি আমরা কোনও মতেই ছাড়ছি না।’’

জেলা কংগ্রেস সভাপতি অরুণ দত্ত মজুমদারও সিদ্ধার্থবাবুর কথায় বিস্মিত। তিনি বলেন, ‘‘এ কী রকম কথা! সব জাতিগোষ্ঠী নিয়ে অসম প্রদেশ। সবাই অসমীয়া হবে যাবেন কেন।’’ তিনি সিদ্ধার্থবাবু ও তাঁর দলকে উগ্র আঞ্চলিকতাবাদী বলে উল্লেখ করেন। তাঁরা অসমকে টুকরো করার ষড়যন্ত্র করছে বলেও অরুণবাবু মন্তব্য করেন।

এ দিন বিজেপির রাজ্য সভাপতি যখন দলীয় অবস্থান ব্যাখ্যা করছিলেন, শিলচরের বিধায়ক দিলীপবাবুও তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তিনি তখন কোনও মন্তব্য করেননি। পরে বলেন, ‘‘কথাটি আসলে অসমীয়া নয়, অসমবাসী হওয়া উচিত।’’ সাংবাদিক বৈঠকে সিদ্ধার্থবাবুর সঙ্গে ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থও। তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বলেন, ‘‘কোনও মন্তব্য করব না।’’ পরে নীচু গলায় যোগ করেন, ‘‘সভাপতির বক্তব্যের পর কী আর বলব আমি!’’

বিজেপি শিলচর পুরসভা দখল করায় এ দিন দলের পক্ষ থেকে বিজয়ী জনপ্রতিনিধিদের সংবর্ধনা জানানো হয়। এই উপলক্ষ্যেই শিলচর এসেছিলেন সিদ্ধার্থবাবু। সংবর্ধনা পর্বে উপস্থিত ছিলেন দলের অসম পর্যবেক্ষক মহেন্দ্র সিং। তিনি বঙ্গভবনে উপস্থিত দলীয় কর্মীদের অভয় দিয়ে বলেন, ‘‘আমরা জানি এনআরসি নিয়ে অনেকে সঙ্কটে পড়েছেন। কেন্দ্র সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। ভয় পাবেন না।’’

এনআরসি নিয়ে বরাক উপত্যকায় যে সব কথা হচ্ছে, প্রদেশ বিজেপি সভাপতি সেগুলিকে নস্যাৎ করে দেন। তাঁর কথায়, ‘‘যে সব কাগজপত্র থাকলে জাতীয় নাগরিক পঞ্জীতে নাম উঠবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেগুলি যথার্থ। প্রকৃত ভারতীয় হলে তাঁদের কাছে এইসব নথির কোনও একটি থাকতেই হবে।’’

বন্যা, গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে শরণার্থী হয়ে আসা বহু মানুষ যে ১৯৭১ সালের আগের কোনও কাগজ ধরে রাখতে পারেননি, সে কথা মানতে নারাজ সিদ্ধার্থবাবু।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement